মেহেদী হাসান আকন্দ:নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে অবৈধ কারেন্ট জাল, মশারি জালসহ নানা ধরণের জাল বিক্রি হয় দিনদুপুরে। হাওর অঞ্চলের রাজধানী খ্যাত এই শহরের জাল পট্টিতে রয়েছে এসব জালের বড় মার্কেট। এখান থেকেই মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুড়িসহ পাশের সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ ও তাহেরপুর উপজেলায় সব ধরণের অবৈধ জাল সরবরাহ করা হয়। অন্যান্য সংগঠনের মতো জাল বিক্রেতাদের আবার রয়েছে কমিটিও। কমিটির দুইজনের দায়িত্ব রয়েছে ঝামেলার সবদিক ম্যানেজ করার। তবে জেলেদের অভিযোগ প্রশাসন শহরের মার্কেটে পাইকারি বিক্রেতাদের না ধরে শুধু গরীব জেলেদের জাল পুড়িয়ে তাদের দায় শেষ করেন। এতে পেটের দায়ে ঋণ করে জাল কিনে মাছ বিক্রি করে পরিবার পরিজন চালানো জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর মূল বিক্রেতারা রয়ে যাচ্ছেন আড়ালে।
জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই মার্কেটে ছোট ফাঁসের কারেন্ট জাল এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। মাঝারি ফাঁসের জাল বিক্রি হয় ১৪০০-১৫০০ টাকা কেজি দরে। আর বড় ফাঁসের জাল বিক্রি হয় ১৭০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া চায়না জাল, মশারি নেটসহ নানা ধরণের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এরমধ্যে মশারি নেট দিয়ে একেবারে ছোট পোনা মাছও ধরা সম্ভব বলে জানা গেছে। ছোট পোনা মাছ ধরতে এই জাল বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। মোহনগঞ্জ শহর থেকে পাইকারি দরে কারেন্ট জাল নিয়ে ডিঙাপোতা হাওরাঞ্চলে জেলেদের কাছে বিক্রি খুচরায় বিক্রি করেন এমন একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোহনগঞ্জের জাল পট্টি থেকেই জেলেদের চাহিদা অনুযায়ী কারেন্ট জাল, মশারি জালসহ অন্যান্য জাল কিনে নিয়ে বিক্রি করি। প্রতিবছর শতাধিক কেজি জাল আমি বিক্রি করি স্থানীয় জেলেদের কাছে। এছাড়া অনেক জেলে নিজেরাও শহরের ওইসব দোকান থেকে কিনেন। বর্ষা মৌসুমে হাওর এলাকার মানুষের তেমন কাজ থাকে না। তাই এসব এলাকার কয়েক হাজার জেলে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের চাহিদা অনুযায়ীই আমি জাল সরবরাহ করি। এরমধ্যে মশারি জাল মূলত একেবারে ছোট মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত হয়। এ জাল দিয়ে মাছের ডিমও তুলে আনা যায়। ডিঙাপোতা হাওরে মাছ ধরেন স্থানীয় জেলে মজিবুর রহমান, স্বাস্থ্য মিয়া, রফিকুল, রবিনসহ অনেকে জানান, গরীব জেলেরা সুদে টাকা এনে জাল কিনেন। মাছ ধরে বিক্রি করে পরিবার চালান। কেই কেউ গরু বাচুর বিক্রি করে জাল কিনেন। কিন্তু প্রশাসন মাঝে মধ্যে এইসব গরীব জেলেদের অবলম্বন পুড়িয়ে দেয়। আমরা জেলেরাতো এসব জাল মোহনগঞ্জ বাজার থেকেই কিনি। কিন্তু বাজারে দিনদুপুরে যারা এসব জাল বিক্রি করছে তাদের গুদামে হানা দেন না।
পাইকারি বাজার বন্ধ হলে তো জেলোরা কিনতে পারবে না। আগে পাইকারি মার্কেট বন্ধ করার দাবি তাদের। মোহনগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান চয়ন এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মোহনগঞ্জ হলো হাওরাঞ্চলের অবৈধ জালের একমাত্র মার্কেট। এখান থেকে মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুড়ি, পাশের সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালপুর ও তাহেরপুর সহ পুরো হাওরাঞ্চলের অবৈধ কারেন্ট জাল, মশাড়িনেট ও চায়না জালসহ সব রকমের জাল বিক্রি হয়। এসব অবৈধ জালের ব্যবহারের কারণে হাওরে এখন মাছের সংকট। এ পর্যন্ত প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে হওয়া প্রতিটা সভা সেমিনারে বলেছি, শহরেই অবৈধ জালের মার্কেট। এগুলোতে অভিযান চালান। মার্কেট বন্ধ হলেই অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধ হবে। গরীব জেলেদের মারবেন না। কিন্তু কাজের কাজ তারা কিছুই করছেন না। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় জালের মার্কেটে লোক দেখানো অভিযান হয়। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায় না। কারণ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অভিযানে গেলে তো সাবাই লুকিয়ে ফেলে। এসব ধরতে হলে সোর্স নিয়োগ করে পরে অভিযান করতে হবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ জানান, মৎস্য সপ্তাহে হাওরে অভিযান চালিয়ে অনেক ধরণের অবৈধ জাল জব্দ করেছি। পাশপাশি শহরের জাল মার্কেটেও অভিযান চালিয়েছি। ওরা অনেক চালাক। উপস্থিতি টের পেয়েই একে অন্যকে ইশারা দিয়ে লুকিয়ে পরে। গুদাম কোথায় জানা যায় না। এবার অভিযানে একটা গুদাম পেলেও এর মালিক পাওয়া যায়নি। ইউএনও স্যার সহ আমরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভেতর থেকে টেনে এক বস্তা জাল বের করে এনে পুড়িয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহম্মেদ আকুঞ্জি বলেন, হাওরের পাশাপাশি শহরের দোকানগুলোতে অভিযান করেছি। দোকানে মূলত অবৈধ জালগুলো রাখে না। অন্য কোথাও লুকানো থাকে। দোকানগুলোই আসলে বন্ধ করতে হবে। এখান থেকেই হাওরাঞ্চলে এসব জাল সরবারহ হয় শুনেছি। সবার তথ্য সংগ্রহ করতে বলেছি। এখন থেকে কৌশল নিয়ে হাতেনাতে ধরবো।