মাহফুজ আলম, কাপ্তাই (রাঙামাটি) থেকে : কাপ্তাই অবস্থিত বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের (বিএসপিআই) ছাত্রবাসের দোতলা থেকে পড়ে শেখ সাদিকুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় কাপ্তাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহতের বড় ভাই । সোমবার ২৪ জুলাই বড় ভাই মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে কাপ্তাই থানায় দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় ২৫ জুলাই বেলা ১১ টার দিকে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ছাত্রাবাস এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় সাথে ছিলেন কাপ্তাই সার্কেল অ্যাডিশনাল এসপি রওশন আরা রব, ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আব্দুল মতিন হাওলাদার, কাপ্তাই থানা অফিসার ইনচার্জ জসীম উদ্দীন, কাপ্তাই ফাঁড়ি ইন্সপেক্টর শাহিনুর রহমান, ইন্সপেক্টর তদন্ত মোহাম্মদ নূরে আলম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার যা বললেন।( ভিডিও ফুটেজে পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ এর বক্তব্য দেওয়া গেল)
মামলার বাদী বলেন, আমাদের পরিবার-পরিজন এ মৃত্যুটিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেনা। আমরা ধারণা করছি এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আর আমার ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিও আছে বলে আমরা ধারণা করছি। মামলার বাদী মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার ভাই যেই ছাত্রাবাসের দোতলায় থাকতো সেখানে জানালায় কোনো গ্রিল ছিল না। এই জায়গাতে যেকোনো শিক্ষার্থী গিয়ে যদি দাঁড়িয়ে কাপড় শুকাতে দেয় কিংবা বসে কথা বলে দুষ্টমির হলেও কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই অবাধ বিচরণ কিংবা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটিতে অপ্রত্যাশিত । এ কারণেও আমার ভাইয়ের এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে। তিনি আরো বলেন, ওখানকার সিনিয়রদের দ্বারা জুনিয়ররা রেগিংয়ের শিকার হতে পারে। সর্বপরি আমি এবং আমার পরিবার আমার ভাইটির হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন হাওলাদার বলেন, এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর পরিবার কাপ্তাই থানায় যেহেতু মামলা দায়ের করেছে তাই পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে এবং তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। কাপ্তাই থানার অফিসার ইনচার্জ জসীম উদ্দীন বলেন এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে কাপ্তাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
ইন্সপেক্টর তদন্ত মোহাম্মদ নুরে আলম জানান গত ১৬ জুলাই কাপ্তাই সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটয়ের কম্পিউটার সায়ন্সে অ্যান্ড টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের ৫৫তম ব্যাচের ছাত্র শেখ সাদিকুর রহমান ছাত্রাবাসের দোতলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় গত ১৯ জুলাই সকাল ১০টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেধাবী ছাত্র সাদিক মৃত্যুর আগে র্যাগিংয়ের নামে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা তার রুমে ঢুকে জোরপূর্বক দাঁড়ি ও মাথার চুল কামিয়ে দেয়। গত কোরবানির ঈদের ছুটির আগেও সাদিকের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে সোমবার কাপ্তাই থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই মাহবুবুর রহমান। মামলায় সাদিকুর রহমানকে পরিকল্পিতভাবে ছাত্রাবাসের দ্বি-তলার সানসেট থেকে নিচে ফেলে হত্যা করা হতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এজাহারে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করা হয়। বাদী মাহবুব বলেন, পরিকল্পিতভাবে হোক, আর ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হোক এটি একটি হত্যাকান্ত। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কোনো অবস্থাতেই এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।
সাদিকের অপর সহোদর সাইদুর রহমান জানান, ঘটনার দিন ১৬ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় সাদিক ভিডিওকলে মায়ের সাথে কথা বলে। তখন তার মাথার চুল এবড়োথেবড়োভাবে কাটা দেখা গেছে। চুল এভাবে কেটেছো কেন, কী হইছে’, মা জিজ্ঞেস করতেই অপর প্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেয়া হয়। এর সোয়া ঘণ্টা পরই ক্যাম্পাস থেকে তাদের জানানো হয়, সাদিক ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে এবং তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। এ সংবাদ পেয়ে তারা ঢাকা থেকে চমেকে ছুটে যান। তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অবশেষে ১৯ জুলাই সকালে সাদিক মারা যায়।
কথিত রেগিংয়ের নামে অথবা পূর্বশত্রুতার জেরে কিংবা ঈদের আগে আলোচিত মারামারির ঘটনার জেরে প্রতিষ্ঠানটির অজ্ঞাতপরিচয় উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা সাদিককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়। সাদিকুর রহমানের মাথার চুল ও দাড়ি জোরপূর্বক রিনামেও করে দেয়ার সাথে জড়িত জাহাঙ্গীর ছাত্রাবাসের ছাত্রদের তারা এ ঘটনায় সন্দেহ করছেন।
সাদিক পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে কিনা তদন্তপূর্বক মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মামলার বাদী জোর দাবি জানান।