রফিকুল ইসলাম সুইট : দরিদ্র ও স্বল্প শিক্ষিত পরিবারের কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার মেয়ে মোছা: ফিরোজা খাতুন এর বাড়ী পাবনা জেলার, সদর উপজেলার,টাটিপাড়া গ্রামে। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় লেখা-পড়ার সুযোগ না পেয়ে অল্পবয়সেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। বিয়ের ৫বছর না যেতেই সংসারে নেমে আসে অশান্তির কালোছায়া। শেষঅবধি সংসার রক্ষা করতে না পেরে বাবার বাড়িতে পারিজমায় এবং ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির সহায়তায় অধিকার ফিরে পায়।
মোছাঃ ফিরোজাখাতুন (বয়স ৩৮ বছর), পিতাঃ মৃত: মাহাতাব মোল্লা , গ্রামঃ টাটিপাড়া,পোষ্টঃ দুবলিয়া ,উপজেলাঃ পাবনা সদর,জেলাঃ পাবনা। ফিরোজার বাবা-মা ফিরোজার মতামত নিয়ে ২০.০৬.২০১১ ইং তারিখে পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারার মধ্যজামুয়া গ্রামের মোঃ আজাদের সাথে ৮০০০০/= টাকা দেনমোহর ধার্যে কাবিন রেজিষ্ট্রিমূলে ফিরোজার বিবাহ দেয়। বিয়ের পর ফিরোজার স্বামীর বাড়ীতে গিয়ে প্রথম ৪ বছর সুখে শান্তিতে সংসার করছিল। এই সময়ে ফিরোজার দাম্পত্য জীবনে একটি মেয়ে সন্তান হয়। নাম মোছাঃ নুসরাত জাহান,বয়স ৫ বছর। ৫ বছর পর আজাদের আচারনের পরিবর্তন শুরু হয়। কাজের কথা বলে বাড়ী থেকে বের হলে ১৫ দিন পর্যন্ত বাড়ীতে আসত না। বাড়ীতে কোন খরচ দিত না। সংসারের সকল খরচ ফিরোজা বহন করতে থাকে। এভাবে কয়েক মাস অতিবাহিত হয়।অনেক চেষ্টার পর জানতে পারে আজাদ ২য় বিবাহ করেছে। পরে আজাদের মা বিয়ের কথা জানতে চাইলে ঘটনা সত্য বলে স্বীকার করে এবং আজাদ ফিরোজা তালাক দিবে বলে জানিয়ে দেয়। তারপরেও ফিরোজা সব মেনে নিয়ে সংসার করতে চায়। কিন্তু ৩০.০৮.২০২০ তারিখে আজাদ বিনা কারণে ফিরোজাকে শারীরিক নির্যাতন করে সন্তানসহ বাড়ী থেকে বের করে দিলে বাধ্য হয়ে ফিরোজা বাবার বাড়ীতে চলে আসে। চলে আসার পর ফিরোজা মিমাংসার চেষ্টা করেও মিমাংসা করতে পারেনী। ফিরোজা মিমাংসার জন্য চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা লিগ্যাল এইড পাবনা অফিসে পারিবারিক অভিযোগ করে। আজাদ সেখানে উপস্থিত হয়ে জানায় মিমাংসা করবে না। এভাবে ফিরোজা বিভিন্ন জায়গাতে গিয়েও মিমাংসা করতে পারেনী। এক পর্যায়ে ফিরোজা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মিমাংসিত ক্লায়েন্ট আলপনার মাধ্যম জানতে পারে ব্র্যাক আইন সহায়তার কথা। ফিরোজা ব্র্যাকে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি ফিরোজার নিকট থেকে অভিযোগ গ্রহন করা হয়।পরবর্তীতে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে এডিআর করা হয়। ফিরোজার অভিযোগ এবং তার আইনগত চাওয়ার উপর ভিত্তি করে অফিস এডিআর পরিচালনা করা হয়। অফিস এডিআরের মাধ্যমে ফিরোজা দেনমোহর ও ভরনপোষন বাবদ নগদ ৮৫০০০ ( পঁচাআশি হাজার ) টাকা বুঝে পায়।
ফিরোজা ৮৫০০০ ( পঁচাআশি হাজার ) টাকা দোগাছি রুপালী ব্যাংকে ৫ বছরের জন্য ডিপিএস করেছে। ফিরোজাও সাধারন মানুষের ব্র্যাকের প্রতি ইতিবাচক ধারনা তৈরী হয়।এলাকার মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় পড়লে ফিরোজার নিকট গেলে, ব্র্যাক পাবনা সদর অফিসে আসার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফিরোজা তার বোনের কাছ থেকে ধারে টাকা নিয়ে একটি গরু ও কয়েকটি ছাগল কিনে লালন পালন শুরু করে। ফিরোজা এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।ফিরোজার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য গরু ও ছাগলের খামার তৈরী করা।পাশাপাশি নির্যাতনের স্বীকার অসহায় নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করবেন।
ফিরোজা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তার নায্য অধিকার আদায় করতে পেরেছে, যার জন্য সমাজে তার একটা আলাদা গ্রহনযোগ্যতা বেড়েছে।তিনি মনে করেন এই সকল কিছুই সম্ভব হয়েছে ব্র্যাকের জন্য। তিনি ব্র্যাকের কার্যক্রমের ব্যপ্তি ও প্রসার কামনা করেন।