পাবনা প্রতিনিধি: শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পুত্র তরফ সৎসঙ্গ পাকুটিয়া অনুসারীরা পাবনার গোপালপুরস্থ সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’র দুইদিনব্যাপী ঠাকুরের আবির্ভাব দিবসের উৎসবে এসে নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর দুইদিনব্যাপী এই উৎসবে গোপালপুর পাথরতলাস্থ সৎসঙ্গ বাংলাদেশ চত্বরে ও গোপাল চন্দ্র ইন্সটিটিউটে (জিসিআই) থাকা ও খাওয়ার আয়োজন করা হয়। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জেলা ও দেশের বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীরা এসে পড়েন নানা ভোগান্তিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১০ হাজার ভক্ত অনুসারী আসে এই উৎসব ঘিরে। সেই সাথে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটান থেকে আসে শতাধিক নারীপুরুষ। পাথরতলা ও জিসিআই স্কুলের মাঠে থাকা, খাওয়া, স্নান ও টয়লেট ব্যবহার করতে না পেয়ে নারী পুরুষ ভক্ত অনুরাগীরা পড়েন মহাবিপাকে। বাধ্য হয়েই প্রায় ৩ হাজার নারী পুরুষ চলে যান শ্রীশ্রীঠাকুল অনুকূল চন্দ্র হিমাইতপুর আশ্রমে। উৎসবের আগের রাত ও পরের দিন পর্যন্ত থাকা খাওয়া গোসল ও টয়লেটের ব্যবস্থা করে আশ্রম কর্তৃপক্ষ।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের অমর নাথ, ঢাকার নারায়নগঞ্জের বিপ্লব কুমার, চট্টগ্রামের অনিমেষ, রাঙামাটির কালু ঘোষ, নিখিল, যশোরের ক্ষিতিশ কর, বগুড়ার রায়দুল বাহারী, নাটোরের সুরেশসহ কমপক্ষে ২৫ জন নারী পুরুষের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, পাথরতলায় জায়গা না পেয়ে জিসিআই আনন্দবাজারে যাই। সেখানেও কোন জায়গা না পেয়ে রাতেই চলে যাই হিমাইতপুর আশ্রমে। সেখানে আশ্রম কর্তৃপক্ষ আমাদের থাকা, খাওয়াসহ সকল ব্যবস্থা করেছেন।
বেশ কয়েকজন ভক্ত অনুসারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাকুটিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে এসেছি। ইস্টভৃতি, রেজিস্ট্রেশন সহ সকল বিষয়ে এন্ট্রি দিয়েছি। অথচ আমাদের থাকা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা পাইনি। যা আমাদের জন্যকষ্টদায়ক। তারা বলেন, আমি গ্রুপিং বুঝিনা। আমরা ঠাকুর ভক্ত ও অনুসারী। আমাদের সাথে ঠাকুর নিয়ের প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা বিভ্রান্তিতে এসেছি।
ঠাকুর অনুসারী বিমল, অন্তরা, সুস্মিতা, বাবলু, পলাশ, অমিত, বলরামসহ কয়েকজন বলেন, আগামী ২২ তারিখ থেকে হিমাইতপুর আশ্রমের মহোৎসব। অনেকে এই উৎসব ভেবে আগেই চলে এসে পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
হিমাইতপুর আশ্রমের কয়েকজন অনুসারী বলেন, সৎসঙ্গ বাংলাদেশ প্রতিবারই কাউন্টার দেয়ার জন্য হিমাইতপুর পুর আশ্রমের সর্ববৃহৎ মহোৎসব এর আগেই তারা পৃথক মহোৎসব করে থাকে। কিন্তু প্রতিবারই তারা ঠাকুরের অনুসারী ভক্তদের বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে থাকে। দেশ বিদেশ থেকে ঠাকুর অনুসারী ভক্তরা এসে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েন। এটা বন্ধ হওয়া জরুরী বলে মনে করেন তারা।
একটি বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, সৎসঙ্গ বাংলাদেশ প্রতিবার ভক্ত অনুসারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান টাকা আদায় করে তাদের পেছনে সঠিক ভাবে খরচ না করে হরিলুট করে আসছে। পকেট ভারী করছে কয়েজনের মধ্যে।
হিমাইতপুর আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কুমার সাহা বলেন, ঠাকুরের আশির্বাদে তারই জন্মস্থানে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য আহার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা ঠাকুরের মানবধর্মে বিশ্বাসী। মানুষের পাশে থাকার ব্রত নিয়ে আমরা ঠাকুরকে অনুসরণ করে চলি। তিনি বলেন, ঠাকুরের বড় সন্তানের তরফ থেকে একটি পক্ষ বা গ্রুপ তৈরী করে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে করে সঠিক ঠাকুরের বাণী ও ঠাকুর সম্পর্কে তার অন্ধ ভক্তরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। আশা করি এই কালে মেঘ সরে যাবে। ঠাকুরের ছায়াতলে আবার সবাই মিলিত হবে। কোন অপপ্রচার বিভ্রান্তি ঠাকুরের সুনাম জসখ্যাতি ও ঐতিহ্য বিলিন করতে পারবে না।
সৎসঙ্গ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ধৃতব্রত আদিত্য বলেন, আমাদের ধারনার বাইরে ভক্তঅনুসারী এসেছে। সবার জন্যই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ যদি আশ্রমে যায়, থাকে খায় সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়৷ থাকা, খাওয়া ও প্রাকৃতিক কাজকর্মে নানা বিড়ম্বনার বিষয়ে বলেন, এতো বড় আয়োজনে ত্রুটিবিচ্ছুতি হওয়াটা স্বাভাবিক। তারপর আগামীতে যেন এমন না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবো।