বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কুড়িগ্রামের সবুজপাড়া গ্রামের মানুষ

আল এনায়েত করিম রনি,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : চলতি বছর ভয়াবহ বন্যার ক্ষত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাসহ ইউনিয়নের সবুজ পাড়া গ্রামের মানুষ। পরপর ৫দফা বন্যায় খেয়ে গেছে মাঠের সব ধান। এখন সেই মাঠে ও বাড়ির আঙিনায় সবুজ সবজি লাগিয়ে নিজেদের ক্ষতি কমাতে চেষ্টা করছে তারা। এছাড়াও হাঁস-মুরগী ও ভেড়া পালন করে নিজেদের ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখছে। তাদের এই উন্নয়নমূখী কর্মকান্ড দেখে উৎসাহী হয়ে উঠেছে পার্শ্ববর্তী কয়েক গ্রামের মানুষ।

শনিবার সকালে সরজমিন গিয়ে জানা যায়, দুধকুমর, গঙ্গাধর ও ব্রহ্মপূত্র নদের মোহনায় অবস্থিত ওই গ্রামের মানুষ প্রতিবছর বন্যাকে মোকাবেলা করে আসছে। এবারের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ফলে এসব পরিবারের আমনের বীজতলা, মাঠের ফসল, বাড়ির চারপাশের শাকসবজি ও হাঁস মুরগীর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় নষ্ট হয়ে যায় ঘরবাড়ি ও গবাদিপশুর খাদ্য খড়ের গাদা। এই ক্ষতি কমাতে গ্রামের ১৭০টি পরিবারের লোকজন বিভিন্ন পরামর্শের মাধ্যমে সহযোগিতা পেয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। তারা শুরু করে বাড়ি বাড়ি বিষমুক্ত সবজিচাষ, হাঁস-মুরগী ও ভেড়া পালনের কাজ। এতেই পাল্টে যেতে থাকে তাদের জীবনমান। বিভিন্ন ধরেণের প্রশিক্ষণ পেয়ে তা কাজে লাগিয়ে গ্রামে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধেও কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে প্রশাসনের লোকজনের সহযোগিতায় তারা সবুজ পাড়া গ্রামে একটি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছে। গ্রামের মানুষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিয়েছে তারা এই গ্রামে বাল্যবিয়ে দিবে না। সমষ্টিগতভাবে উদ্যোগ নেয়ায় সবুজপাড়া গ্রাম এখন সবুজে পরিণত হয়েছে।

এই গ্রামের মৃত: ছাত্তার আলীর স্ত্রী আহিলা বেগম জানান, বাড়ির উঠোনে চাল কুমড়া লাগিয়েছি। ইতিমধ্যে ৪ হাজার টাকার বিষমুক্ত কুমড়া বিক্রি করেছি। নিজেরাও খাচ্ছি। এছাড়াও তিনি জানালেন, একটি ভেড়া পেয়েছিলাম। গত দুইবছরে একটি ৫হাজার টাকায় বিক্রি করে ঘর ঠিক করেছি। এখন ৪টা ভেড়া রয়েছে। একই গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী ছবুরা বেগম ও আমিনুলের স্ত্রী রুবিনা বেগম জানান, আগে হাট থেকে সার কিনে আনতাম। এখন গোবর দিয়ে নিজেরা সার তৈরী করছি। কীটনাশক ফাঁদ দিয়ে পোকা ধরছি। এছাড়া শুকনো নিমপাতা দিয়ে সবজি ক্ষেত পোকা ও বিষমুক্ত রাখছি।
সবুজপাড়া গ্রামের শিক্ষিত যুবক সদরুল আলম জানান, সবুজপাড়া গ্রাম এখন সবুজে ভরে গেছে। এই গ্রামের মানুষ অল্প খরচে শাকসবজি চাষ করেছে। এর বীজ সবজি ব্যাংকের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে সহযোগিতা নিচ্ছে। ধান চাষ করতে গিয়ে চাষীরা যে বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছে। তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে তারা।

বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশীপের এএসডি’র প্রকল্পের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সম্পদ বৃদ্ধি এবং বাল্যবিবাহ রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ, জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সম্পর্কে ধারণা, জিডি করার কৌশল, শিক্ষামূলক আলোচনাসহ দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সবুজপাড়া গ্রামসহ কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলায় ২৪টি গ্রামে অসহায় দুস্থ পরিবারের লোকজনকে নিয়ে কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছে ট্রানজিশন ফান্ড প্রজেক্ট (এএসডি) ।

ঘোগাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম জানান, দুধকুমর নদীর কারণে সবুজপাড়া গ্রাম প্রতিবছর বন্যায় প্লাবিত হয়। এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশ এই গ্রামে বিভিন্ন সচেতনতামূলক ও আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করায় এই গ্রামে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বন্যার ক্ষত কাটিয়ে উঠে তারা শাকসবজি চাষ, হাঁস-মুরগী ও ভেড়া পালন করে নিজেদের পরিবারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

Comments (0)
Add Comment