পাবনা প্রতিনিধি : আজ ৯ ডিসেম্বর। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাঁথিয়া উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। বিজয়ের পতাকা হাতে বিজয় উল্লাস করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-ে দ-িত রাজাকার শিরোমনি মতিউর রহমান নিজামীর নিজ এলাকা হওয়ায় এ উপজেলায় রাজাকাল, আলবদর ও আলশামসদের শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। মুক্তিযুদ্ধে সাঁথিয়াবাসীর যেমন গৌরব ও বীরত্বের ইতিহাস রয়েছে, তেমনি রয়েছে বেদনার ইতিহাসও। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সাঁথিয়ার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। তাদের হাতে সম্ভ্রম হারানা শতাধিক নানা বয়সের নারী।
সাঁথিয়ার একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, একাত্তরের ১৯ এপ্রিল শহীদ নগর পূর্বের নাম ডাববাগান, ১৪ মে উপজেলার ধুলাউড়ির বাউশগাড়ি, ২৭ নভেম্বর ধুলাউড়ি ফকিরবাড়িতে ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। ডাববাগানের সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ইপিআর হাবিলদার মমতাজ আলী, হাবিলদার আব্দুর রাজ্জাক, নায়েক হাবিবুর রহমান, সিপাহী এমদাদুল হক, সিপাহী ইমান আলী, সিপাহী রমজান আলীসহ আরো অনেক ইপিআর সদস্য। পাকিস্তানী সেনারা ধুলাউড়ি বাউশগাড়ি গ্রামে গণহত্যা চালিয়ে আটশ’ জন মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
তারা জানান, ২৭ মার্চ সাঁথিয়া পশু হাসপাতালের সামনে আমগাছের তলায় তৎকালীন ছাত্রনেতা (পরে যুদ্ধকালীন কমান্ডার) নিজাম উদ্দিন, রাবির ছাত্রনেতা ফজলুল হক, লোকমান হোসেন, রেজাউল করিম, আলতাব হোসেন, আবু মুছা, আবু হানিফ, আব্দুল ওহাব খান, সোহরাব আলী, আব্দুর রউফ, আব্দুল মতিন, গোলাম মোর্শেদসহ স্থানীয়রা প্রবল শক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ডিসেম্বরের ৭ তারিখে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়ায় প্রবেশের তিনটি ব্রিজ ও কালভার্ট বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়। যাতে পাকিস্তানী সেনারা গাড়িবহর নিয়ে সাঁথিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে।
অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের নিচে বাঙ্কার তৈরি করে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে চরম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণে পাকিস্তানী সেনারা ক্ষতিগ্রস্ত দুটি গাড়ি ফেলে পিছু হটে। পরদিন ৮ ডিসেম্বর সাঁথিয়া প্রবেশের পথে আবারো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে বিকেলের দিকে পিছু হটে পাকিস্তানী সেনারা। শেষের দিকে প্রবল প্রতিরোধের সময় সাঁথিয়ার একমাত্র নারী যোদ্ধা ভানু নেছা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থানা থেকে অস্ত্র ও গোলা বারুদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। এ দিকে ৯ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া থানা দখলে নেয়। ওই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে সাঁথিয়া থানায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। যে কারণে ৯ ডিসেম্বরের পরে পাকিস্তানী সেনারা আর সাঁথিয়ায় প্রবেশ করতে পারেনি। আর এ জন্যই সাঁথিয়াবাসী ৯ ডিসেম্বর সাঁথিয়া মুক্ত দিবস পালন করে থাকে। দিবসটি যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে সাঁথিয়া উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে।