মাহফুজ আলম, কাপ্তাই ( রাঙামাটি) থেকে : উদাসীনতা, অনিয়ম – অব্যাবস্হাপনা, অযতত্ন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে অপ্রত্যাশিতভাবে কাপ্তাইয়ের কাপ্তাইয়ের সুনামধন্য ৮ টি ফুটবল ক্লাবসহ ১২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান অপমৃত্যু ঘটেছে। দেড় যুগের ব্যবধানে ক্রীড়া,সাহিত্য, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ক্লাব সংগঠনের প্রায় শ’ শ’ ফুটবল খেলোয়াড়র ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিভা বান কর্মী গন সংগঠকের অভাবে অসময়ে ঝড়ে পরতে হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা দেখা গেছে তরুন সংঘ, সবুজ সংঘ, প্রগতি, অবকাশ, একতা সংঘ,ড্রাগন সংঘ,তিবরিজি, যুব সংঘ,জালালাবাদ ক্লাবসহ আরো অনেক গুলো ক্রীড়া সংগঠন বন্ধ রয়েছে। ফলে বলাযেতে ঝিমিয়ে পড়া সংগঠন গুলোর কারনে নতুন প্রজন্মের উদীয় মান খেলোয়াড় গন প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারচ্ছেনা অপর দিকে আরো জানা যায় কাপ্তাই থেকে শিল্প কাখানার বন্ধ হওযার কারন প্রায় ২০ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়েছে। কাপ্তাই উপজেলা শিল্প জোনখ্যাত এলাকায় গত দুই যুগের ব্যবধানে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক গুলো ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প কারখানা। এছাড়াও বর্তমানে উপজেলায় যে কয়টি শিল্প কারখানা রয়েছে সেগুলোও নানা সমস্যার বেড়াজালে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। আর ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৫৮ সালে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরপরই জেটিঘাট, বিএফআইডিসি, সুইডেন পলিটেকনিক, এফডিটিসি মডেল, কর্ণফুলী পেপার মিল, প্রকৌশলী একাডেমী, পাল্পউড ডিভিশন, লেমুড, টিম্বার মিল, কয়েকটি বিনোদন মুলক সিনেমাহলসহ বিভিন্ন কর্মস্তানের ক্ষেত্র গড়ে উঠে এর পর থেকে ১৯৬৫ সালে কাপ্তাই এলাকাকে শিল্প জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এছাড়াও পার্বত্যাঞ্চলের বিস্তৃত বনভূমি ও বৃক্ষরাজির বিশাল ভান্ডারকে কাঁচামালের অফুরন্ত উৎস হিসাবে ব্যবহার করে এ এলাকায় কাঠ ও বাঁশ ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে থাকে। সেই সময় ক্রমেই এ এলাকায় শিল্পের প্রসার ঘটতে থাকে। গড়ে উঠে কাপ্তাই কর্ণফুলী কাঠ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিট (বিএফআইডিসি), কাপ্তাই লাম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্স, ইর্স্টান প্লাইউড টিম্বার লিমিটেড, শীলছড়ি ইস্টান টিম্বার এন্ড প্লাইউড ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানী লিমিটেড, কাপ্তাই লেম উড লিমিটেড, গণপূর্ত অফিস, সিএমবি অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড এম ই ও অফিস, অলিম্পিয়া সিনেমা হল, চান্দিনা সিনেমা হল, বনলতা সিনেমা হল, লোটাস সিনেমা হলসহ ইত্যাদি অসংখ্য ছোট বড় সরকারী বেসরকারী শিল্প কারখানা। অবশ্য এসব শিল্প কারখানার ও কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের আগেই ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বিখ্যাত কর্ণফুলী কাগজ কল এবং কর্ণফুলী রেয়ন এন্ড কেমিক্যালস লিমিটেড ।
উলেখ্য, কর্ণফুলী পেপার ও রেয়ন মিল স্থাপনের উদ্দেশ্যে চন্দ্রঘোনা এলাকায় সর্বপ্রথম স্বয়ংক্রিয় মেশিনে ইট তৈরির একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। কাপ্তাই এলাকায় গড়ে উঠা কাঠ ভিত্তিক শিল্প কারখানাগুলোর উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী এবং বাঁশ ও গাছ ভিত্তিক কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজসহ রেয়ন মিলে উৎপাদিত পণ্য দেশে বিদেশে বিগত দিনগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। তৎকালীন স্বাধীনতার পূর্বে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মচারী নিয়ে কল কারখানাগুলো পুরোদমে চলতে থাকে এবং আশাতীত হারে মুনাফা অর্জন হতো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পরবর্তী সময়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ প্রশাসনিক অদক্ষতা, অমনোযোগিতা, অসহযোগিতার কারণে এসব কারখানায় নানা সমস্যা দেখা দেয়। লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসাবে অথবা তৎকালীন সরকারী ভ্রান্তনীতির কবলে পড়ে একে একে শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হতে থাকে।
আশির দশকে শিলছড়িতে অবস্থিত এ কে খান প্লাইউড লিমিটেড, ইর্স্টান টিম্বার এন্ড প্লাইউড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রুবি প্লাইউড লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯২-৯৩ সালে চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত পরিবেশ বান্ধব স্বয়ংক্রিয় মেশিনে ইট তৈরির কারখানাটি অজ্ঞাত কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০০২ সালের ১৫ই ডিসেম্বর কর্ণফুলী রেয়ন এন্ড কেমিক্যাল (কেআরসি লিঃ) বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবশ্য বর্তমান সরকার কেআরসি পুনরায় চালুর বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে। ২০০৪ সালের ৩১ মার্চ কাপ্তাই বিএফআইডিসির আওতাধীন সংগ্রহ ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান পে-অফের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৫ সালের ৩১ মার্চ বিএফআইডিসির নিয়ন্ত্রণাধীন কর্ণফুলী কাঠ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিটকে পে-অফ ঘোষণার মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সব শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা শত শত কোটি মূল্যের সরকারী বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক যন্ত্রাংশ ষড়যন্ত্রকারীদের কবলে পড়ে বেহাত হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। শিল্পাঞ্চল কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন কল কারখানা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে হাজার শ্রমিক কর্মচারীরাও বেকার হয়ে পড়েছে। বর্তমান উপজেলায় যে কয়টি শিল্প কারখানা চালু রয়েছে সেগুলিও নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কল্পনাতীত বনাঞ্চল উজার হওয়ায় বাংলাদেশ টিম্বার এন্ড প্লাইউড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দুইটি ইউনিটে বর্তমানে কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে।
কর্ণফুলী পেপার মিল প্রতি বছর কাঁচামালের তীব্র সংকটে পড়ে, কাঠ আহরণে প্রয়োজনীয় কুপ বরাদ্দ না থাকলেও তা সঠিকভাবে তদারকি না থাকায় মহাসংকটে পড়তে হয় মিলকে। কাপ্তাই লাম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্স (এলপিসি) কাঠ আহরণের প্রয়োজনীয় কুপ বরাদ্দ না পাওয়ায় বন্দের উপক্রম দেখা দিয়েছে। কর্ণফুলী পেপার মিলে উৎপাদিত কাগজ সরকারী প্রতিষ্ঠান এনসিটিবিসহ অন্যান্য সংস্থা কাগজ ক্রয় না করায় এ প্রতিষ্ঠানটিও মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়েছে গত দুই বছর থেকে। আবার কাগজ ক্রেতারা বলেন পেপার মিলে নিম্নমানের কাগজ উৎপাদন হওয়ায় ক্রয় বিক্রয় কমে যাওয়ার মূল কারণ। সবমিলিয়ে গত দুই যুগে কাপ্তাই উপজেলার ১২টি বৃহৎ শিল্প কারখানার অপমৃত্যু হওয়ায় ৩০ হাজার জনবল কর্মহীন হলেও এ যাবৎ তাদের কারোই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। ফলে এলাকায় অভাব অনটন, বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বিভিন্ন সময় চুরি, খুন হওয়াসহ নানা ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ও নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় ঘটছে যুব সমাজের মাঝে। কর্মসংস্থান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যৌবন ফিরে পেতে আর শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে এবং ক্রীড়া বঞ্চিত ও কর্মহীন মানুষেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশুহস্তক্ষেপ কামনা করছেন।