ম.ম.রবি ডাকুয়া,বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি : আজ ১৮ডিসেম্বর বাগেরহাটের শরণখোলা হানাদারমুক্ত দিবস। ১৬ডিম্বের দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এখানে যুদ্ধ চলে আরো দুইদিন। টানা পাঁচদিনের সম্মুখযুদ্ধে পরাস্থ হয়ে পালিয়ে যায় রাজাকাররা। শেষ যুদ্ধে শহীদ হন পাঁচ বীর যোদ্ধা। হানাদারমুক্ত দিবসটি পালনে শরণখোলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে।
আজকের দিনে সকাল ১০টার দিকে শরণখোলাকে রাজাকার মুক্ত ঘোষনা করে সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ থানা ভবনে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। এদিন বিকেল ৪টার দিকে রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুল মাঠে চার শহীদের জানাজার নামাজ শেষে রায়েন্দা গার্লস স্কুলের সামনে দাফন করা হয়। আর ১৫ ডিসেম্বর গুরুপদকে সমাহিত করা হয় সুন্দরবন সংলগ্ন সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের পানিরঘাট এলাকায়।
সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রনকারীদের তথ্যমতে, শেষমুহূর্তে রাজাকারবাহিনী শরণখোলার তৎকালীন থানা সদর রায়েন্দা বাজারের আওয়ামীলীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আকনের বাসভবন, থানা ভবন ও রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন দখল করে ক্যাম্প স্থাপন করে। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য দক্ষিণাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল দল গঠন করে রাজাকারদের ক্যাম্পে আক্রমন করা হয়। ৯নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও সেকেন্ড ইন কমান্ড শামছুল আলম তালুকদারের নেতৃত্বে পূর্বাঞ্চল দলের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন যুদ্ধকালীন ইয়াং অফিসার ও স্টুডেন্ট ক্যাম্প কামান্ডার হেমায়েত উদ্দিন বাদশা এবং পশ্চিমাঞ্চল দলের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন মোরেলগঞ্জের আব্দুল গফ্ফার সুবেদার।
পূর্বাঞ্চল দলের কমান্ডিং অফিসার হেমায়েত উদ্দিন বাদশা জানান, রামপালের সহযোদ্ধা শ্যামল এলএমজির কভারিং ফায়ারের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি উপর থেকে রাজাকার ক্যাম্পে ফায়ার করতে থাকেন আর অগ্রবর্তি দলের ২০-২৫ জন যোদ্ধা নাছির মিয়ার ভবনে রাজাকার ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ১টার দিকে ফায়ারিং ওপেন করার পাঁচ মিনিটের মাথায় রাজাকারের গুলিতে অগ্রবর্তি দলের যোদ্ধা গুরুপদ শহীদ হন। গুলিতে তাঁর মাথার খুলি উড়ে যায়। বিকেল চারটা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে শহীদ হন টিপু সুলতান ও আসাদুজ্জামান। রাতে শহীদ হন আলাউদ্দিন। ১৫ ডিসেম্বর শহীদ হন আলতাফ হোসেন। ওইদিন থানা ভবন এবং ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের রাজাকারদের ক্যাম্প দখলে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা।
কমান্ডিং অফিসার হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ১৭ ডিসেম্বর দিনভর যুদ্ধ চলে। রাতে বেশিরভাগ রাজাকার নাছিরউদ্দিন আকনের বাসভবনের ক্যাম্প ছেড়ে রায়েন্দা খালের সঙ্গে সংযুক্ত ১০০ফুট দীর্ঘ গোপন সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে পালিয়ে যায়। ১৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে ক্যাম্পের মধ্যে ১৭-১৮ জন রাজাকারকে জীবিত পাওয়া যায়। তাদেরকে সেখানেই হত্যা করা হয়।