মৃত্যুর খবর নিয়ে বছরের প্রথম দিন পার হওয়া স্মৃতি নিয়ে ভাল বাসার চিঠি ড. প্রফেসর সাখাওয়াতের কাছে কাপ্তাই থেকে প্রিয় ছোট ভাই ডক্টর প্রফেসর সাখাওয়াত ভুঁইয়া- সোহেল, কেমন আছো আশা করি বিধাতার কৃপায় পরকালে তুমি ভালো থাকবে মন থেকে সে দোয়া প্রতিনিয়ত করি। সৃষ্টি কর্তার নিকট অঘাত বিশ্বাস রয়েছে তোমাকে ভালো রাখবে। ইহকালে তোমাকে নিয়ে বড় কোন স্মরণ সভা করবেকিনা জানিনা, এতে কিছু আসে যায়না তবে কাপ্তাইয়ের সন্তান যে যেখানেই থাকুক সকলের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তোমাকে খুব মিস করছি সোহেল। মনে থাকবে ২০২১ সালের প্রথম দিন শুক্রবার তুমি চলে গেলে আমাদের ছেড়ে। তুমি চলে যাওয়ার সময় ঐ দিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এর মধ্যে কাপ্তাইয়ের সন্তান তুমি ছিলে। বিধাতর লিখন অখন্ডনীয়। তার পরও মানুষের মনতো কষ্ট হয়।
সাখাওয়াত ভুঁইয়া তুমি বুঝতেই পারলেনা তোমার মতো দৃঢ়চেতা, নৈতিক ও মুল্যবোধ সম্পন্ন ছোট ভাই কাছে পেলে আমরা কতটা পথ এগুতে পারি, জীবনের সব যুদ্ধে জয়ী হয়ে অবশেষে করোনার কাছে হার মেনে বড় অসময়ে চলে গেলে তুমি। তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে পাশ করে সুযোগ পেয়েছিলে ইউকেতে,ছিলেও সেখানে কিছু দিন, বাকী জীবনটাও ঐ স্হানে সুখ শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারতে কিন্তু নিজ দেশের টানে ফিরে এলে আমাদের মাঝে। তোমার মা’কে নিয়ে হজ্ব করে এলে, বাংলাদেশের মতোই মা’কে ভালো বাসতে তুমি, তাইতো তোমার মায়ের মৃত্যুর পর দুইদিনও অপেক্ষা করতে পারলে না সাখাওয়াত? ছেলের অথবা মেয়ের পড়াশুনার বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে, রিইউনিয়ন সংক্রান্ত বিবিধ বিষয়ে, নিজের ব্যক্তিগত কোনো প্রয়োজনে এ নাম্বারে আর কল দেয়া হবে না! আমাদের ধরাছোঁয়ার উর্ধ্বে চলে গেছো তুমি।
আমার প্রাণের বিদ্যালয়ের ৮৯ ব্যাচের তুখোর মেধাবী ছাত্র ছিলে তুমি। সকল শিক্ষার্থীর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ঢাকা ভার্সিটির আইবিএ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেছো তুমি। নটরডেম এর মত আনপ্যারালাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিলে তুমি। ইংল্যান্ডে অবস্থিত বিশ্বের নামকরা ভার্সিটি হতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলে তুমি। অথচ ছিলে একেবারে সাদাসিধে। নিজেকে কখনোই তুমি জাহির করোনি। অন্যের মতামতকে সবসময় শ্রদ্ধা করেছো। তুমি শিখিয়েছো, কীভাবে বড়দের সম্মান করতে হয়, কীভাবে ছোটদের কাছে টানতে হয়। কত সুন্দর করে তুমি তোমার লিখাগুলো লিখতে! মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তাম তোমার অসাধারণ সে রচনাগুলো। তোমার সখের ক্যামেরা দিয়ে কত চমৎকার ছবিগুলো তুমি তুলেছো। সিলেটের হাওর, নদীর প্রাকৃতিক অপূর্ব ছবিগুলো চোখে লেগেই আছে আমাদের! কত সুন্দর করে গুছিয়ে নিম্নস্বরে ধীরে ধীরে তুমি কথা বলতে! সম্মোহিতের মতো তোমার কথাগুলো শুনতাম। তোমার সম্পর্কে লিখেতো শেষ করা যাবে না। রিইউনিয়নে তোমার আগ্রহ ও ভূমিকা ছিলো অনন্যসাধারণ। তুমি মনেপ্রাণে চেয়েছিলে প্রাণের বিদ্যালয়ের প্রাণের রিইউনিয়নটা যথাসময়েই হোক এবং এরজন্য বুদ্ধি পরামর্শ থেকে আরম্ভ করে তোমার পক্ষে যা যা করা সম্ভব ছিলো, তার সবই তুমি করেছিলে একেবারে হৃদয় দিয়ে। শেষ পর্যন্ত রিইউনিয়ন হয়েছিলো। তুমি ভীষণ খুশি হয়েছিলে। আমরা সবাই খুশি হয়েছিলাম। হয়তো আবারো রিইউনিয়ন হবে।
কিন্তু তুমি থাকবে না! তোমার হাসি থাকবে না! তোমার শরীর থাকবে না! তবে আমি নিশ্চিত, তোমার ভালোবাসা থাকবে, তোমার শুভ কামনা থাকবে। তোমাকে আমরা অনেক বেশি ভালোবাসি সোহেল। এতো অল্প বয়সে চিরতরে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলে! কীকরে আমরা আমাদের মনকে বুঝ দিবো! আগেতো যে কোনো সমস্যায় তুমি আমাদেরকে বুঝাতে! এখন তো আমরা অসহায় হয়ে গেলাম সোহেল! বহুবছর আমরা পাশাপাশি বাসায় ছিলাম কাপ্তাইতে। অসাধারণ বাবা মায়ের অসাধারণ সন্তান ছিলে তুমি। অনেক আগেই চাচা পরপারে চলে যান সবাইকে ছেড়ে। আর এখন চলে গেলে তুমি আর খালাম্মা! ভীষণ ভালোবাসতে মা কে। খালাম্মার কলিজার টুকরা ছিলে তুমি। তাইতো আমাদেরকে অসহায় বানিয়ে দু’জনে একইসাথে চুপি চুপি চলে গেলে পরপারে! মহান আল্লাহ তা আলার দরবারে প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেনো তোমাকে,খালাম্মাকে আর চাচাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করেন দোয়া করি। এচিঠিতে মনের ভাব বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে শ্রদ্বেয় বড় ভাই সালাউদ্দীন মিনু ও জসিমউদদীন মাসুদ ভাইয়েরও আবেগময় স্মৃতি চারন তুলেধরা হয়। ইতি মাহফুজ আলম সাংবাদিক, কাপ্তাই।