ম.ম.রবি ডাকুয়া,বাগেরহাট : বাংলাদেশ তথা দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসার প্রানকেন্দ্র দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর মোংলা।একটি বিশেষ মহলের সৃষ্ট এক সময়ের মৃত বন্দর আজ লাভ জনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। সম্ভাবনাময় বন্দর আজ ঘুরে দাড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে। আর বছরের শেষের মাসে বন্দর সৃষ্টির ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়ে মোংলা সমুদ্র বন্দর। ‘এমভি ওয়াংডা’ দিয়ে পূর্ণ হয় এক মাসে ১১৭ টি জাহাজের আগমন। বন্দর সৃষ্টির গত ৭০ বছরে কোন মাসেই এত বানিজ্যিক জাহাজ পন্য নিয়ে মোংলা বন্দরে আসেনি ছেড়ে যায়নি। বছরের শেষ ডিসেম্বর মাসে পন্য বোঝাই ১১৭ টি জাহাজ আগমনের ঘটনা এটাই প্রথম।যা বন্দর সৃষ্টির পরে রেকর্ড সংখ্যক।
এর আগে এ বন্দরে সর্বোচ্চ ১০০ শেকে ১০৬টি পর্যন্ত জাহাজ বন্দরে আগমন করেছিল কিন্ত ধীরে ধীরে বন্দর উন্নয়নের সাথে জাহাজেরও আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার (১ জানুয়ারী) মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন দুপুরের দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর মোহনায় আউটারবার ড্রেজিংয়ের কারনে পুর্বের নব্যতার সংকট কাটিয়ে বন্দর চ্যানেল এখন সয়ংসম্পুর্ন হয়ে দাড়িয়েছে। পাশাপাশী এখানকার আধুনিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি হওয়ায় বিদেশিরা এ মোংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হওয়ায় জাহাজে আগমনের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারী) রাতে মোংলা বন্দরের ১০ নম্বর মুরিং বয়ায় বছরের শেষের দিন নোঙ্গর করে পানামা পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি ওয়াংডা। গত ২৩ নভেম্বর মরোক্ক’র জর্জস লাসফার বন্দর থেকে সার নিয়ে জাহাজটি ছেড়ে আসে মোংলা বন্দরে পন্য খালাসের উদ্দেশ্যে।
মোংলা বন্দরে কর্মরত হারবার মাষ্টার আরও বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ছিল ৪১৬ টি, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ছিল ৪৮২ টি, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ছিল ৬২৪ টি, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ছিল ৭৮৪ টি এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সে সংখ্যা এসে দাড়ায় ৯১২ টিতে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছরই বন্দরে ১২০ থেকে ১৫০ টি জাহাজ আগমনের সংখ্যা বেড়েছে। সেই ধারবাহিকতায় ২০২১ সালে মোংলা বন্দরে জাহাজের আগমনের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টরা। এদিকে এক মাসে ১১৭ টি জাহাজ এ বন্দরে নোঙ্গর করার মত ঘটনা এটাই প্রথম। বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানিয়েছেন, আগের মোংলা বন্দর আর এখনকারর বন্দর উন্নয়নের অনেক দুরত্ব, কারন এক সময়ের বন্ধ হয়ে যাওয়া মোংলা বন্দর এখন চট্ট্রগ্রাম বন্দরের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে। বন্দর ব্যাবহারকারীদের সেখানকার সুযোগ-সুবিধা আর মোংলা বন্দরের সুযোগ সুবিধা একই ধারায় চলছে বলে জানান তিনি।এছাড়া ৩০ ডিসেম্বর ইনারবার ড্রেজিংয়ের কাজের জন্যে একটি চায়না কোম্পানীর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত সম্পন্ন হয়েছে, যা চলতি মাসে শুরু হবে। এটি শেষ হলে এ বন্দরকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হবেনা। এটি হবে একটি পরিবেশ বান্ধব, আধুনিক ও ডিজিটাল ও ব্যবসাবান্ধব বন্দরে পরিনত হবে। এছাড়াও মোংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের উপযুক্ত বিকল্প বন্দরে পরিণত হবে। তখনই অর্থনৈতিকভাবে মোংলা হবে ব্যাবসায়ীদের জন্য যুগপযোগী গুরুত্বপূর্ণ বন্দর।
পদ্ধাসেতু খুলে দেয়া হলে চট্রগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দরের ব্যবহার বাড়বে বলে ব্যবসায়ীদের ধারনা।কেননা সকল ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা আর ঢাকা থেকে চট্রগ্রামের চেয়ে মোংলা বন্দর ব্যবহারে পরিবহন খরচ সময় দুটোই বাচবে বলে বন্দর ব্যবহার কারীরা স্বস্তি প্রকাশ করেন। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে একটি মৃত ও ভংগুর অর্থনীতির হাতিয়ার কে ধারালো তীক্ষ্ণ করা সম্ভব এবং লাইনচ্যুত ইঞ্জিন কে আবার দেশের জয়যাত্রায় যুক্ত করা সম্ভব এটাই প্রমান করলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।স্থানীয় সাবেক এমপি বর্তমান খুলনা সিটি মেয়র ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সাহসিকাতার পরিচয় এটি।