মেহেদী হাসান আকন্দ: নেত্রকোণা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম কর্মসুচী। জেলায় ১৮৫ পদের মধ্যে ৯১ পদ শুণ্য। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে সমাজসেবা অফিসার (রেজি:), প্রধান সহকারী, হিসাব সহকারীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ শুণ্য।
সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ১৫ পদের মধ্যে ৭ পদ শুণ্য। একজন কর্মকর্তা, ৬জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ও একজন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী দিয়ে ১২টি ইউনিয়নের সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ১৩ পদের মধ্যে ৯ পদ শুণ্য। ২জন ইউনিয়ন সমাজকর্মী, একজন অফিস সহায়ক ও একজন নৈশ প্রহরী দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে দুর্গাপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের সমাজসেবা কার্যক্রম।
কলমাকান্দা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ১৩ পদের মধ্যে ৮ পদ শুণ্য। একজন অফিস সহায়ক ও ৩জন ইউনিয়ন সমাজকর্মী দিয়ে উপজেলা ৮টি ইউনিয়নের সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বারহাট্টা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ১৩ পদের মধ্যে ৫ পদ শুণ্য। একজন কর্মকর্তা, ৫জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ও একজন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী দিয়ে ৭টি ইউনিয়নের সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ।
মোহনগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ১৩ পদের মধ্যে ৫ পদ শুণ্য। একজন কর্মকর্তা, ৫জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ও ২জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী দিয়ে ১০টি ইউনিয়নের সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
মদন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ১৪ পদের মধ্যে ৮ পদ শুণ্য। একজন কর্মকর্তা, ৩জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ও একজন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ৮টি ইউনিয়নের সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কর্মরত ৩য় শ্রেণির একজন কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর হার্টের রোগী অন্য আরেকজন দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর চোখের সমস্যায় ভূগছেন।
খালিয়াজুরী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ১১ পদের মধ্যে ৬ পদ শুণ্য। ৩জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ও ২জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী দিয়ে ৬টি ইউনিয়নের সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এদের মধ্যে ২জনকে সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন।
আটপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ১৩ পদের মধ্যে ৭ পদ শুণ্য। একজন কর্মকর্তা, ৫জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী দিয়ে ৭টি ইউনিয়নের সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
কেন্দুয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ২০ পদের মধ্যে ১৩ পদ শুণ্য। একজন কর্মকর্তা, ৫জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ও একজন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পরিচালনা করছেন ১৩টি ইউনিয়নের সমাজসেবা কার্যক্রম।
পূর্বধলা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ১৭ পদের মধ্যে ৮ পদ শুণ্য। একজন কর্মকর্তা, ৬জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ও ২ জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী দিয়ে ১১টি ইউনিয়নের পরিচালিত হচ্ছে সমাজসেবা কার্যক্রম।
একজন নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে চলছে সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম। প্রবেশন অফিসেও রয়েছে একটি পদ শুণ্য। ২জন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ও ২জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী দিয়ে চলছে শহর সমাজসেবা কার্যক্রম। একজন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়। এছাড়াও সরকারি শিশু পরিবারে একজন সহতত্ত্বাবধায়ক, ১জন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর, ২জন কারীগরী প্রশিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষকের পদ শুণ্য। পাইভেট শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে শিশু পরিবার।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আলাল উদ্দিন জানান, স্বল্প জনবল নিয়ে ২০২০সালে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেত্রকোণা শহরসহ ১০টি উপজেলায় মোট ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫৩২ জনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৯৬ কোটি ৩২ লক্ষ ৩ হাজার ২ শ’টাকা।
এই কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা হিসেবে ৭৬ হাজার ১১৫ জনকে প্রতি মাসে ৫শ’ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এতে বছরে ব্যয় হয়েছে ৪৫ কোটি ৬৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা।
৩৪ হাজার ৭৭৭ জন বিধবা ও স্বামী নিগৃহের শিকার নারী প্রতি মাসে ৫শ’ টাকা করে পেয়েছেন। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি ৮৬ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা। এছাড়াও জেলায় মোট ২৫ হাজার ১১৯ জন অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী প্রতিমাসে ৭৫০ টাকা করে ভাতা পেয়েছেন। এতে বছরে ব্যয় হয়েছে ২২ কোটি ৬০ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা।
এদিকে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বয়স্ক ও বিশেষ ভাতা পেয়েছেন ৩৪জন। এদের প্রতিমাসে ৬শ’ টাকা করে দিতে গিয়ে ব্যয় হয়েছে ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮শ’ টাকা।
অনুরুপ বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বয়স্ক ও বিশেষ ভাতা পেয়েছেন ২৪৪ জন। এদের প্রত্যেককে প্রতিমাসে ৫শ’ টাকা করে দেওয়ায় বছরে ব্যয় হয়েছে ১৪ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা।
এসব ছাড়াও প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আনতে সরকারের যুগান্তকারী কর্মসূচির অংশ হিসেবে সদ্য সমাপ্ত বছরে ১২৭৬ জনকে শিক্ষা উপবৃত্তি দিতে নেত্রকোণা জেলা সমাজসেবা বিভাগ ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয় করেছে।
এছাড়াও ১০জনকে দেওয়া হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভাতা। এদের প্রতি মাসে ৩ হাজার ৬শ’ টাকা করে দিতে গিয়ে ব্যয় হয়েছে ৪ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা।
সরকারি শিশু পরিবারে ১০০ জন নিবাসীর জন্য প্রতি মাসে ৩ হাজার ৬শ’ টাকা করে বছরে ৪৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা সরকারের ব্যয় হয়। জেলায় ৪৬টি এতিমখানায় ১৩১০ জনের পিছনে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ১৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ।
ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ৫৪৭ জনকে প্রত্যেককে এককালিন ৫০ হাজার টাকা করে মোট ২ কোটি ৭৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়।
তিনি আরো জানান, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মুল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে নতুন নতুন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে। সেই অনুপাতে জনবল পদ সৃস্টি না করায় এবং বিদ্যমান জনবলের পদ শুণ্য থাকায় চলমান কার্যক্রম সম্পাদন করা কষ্টকর হচ্ছে। সরকারের গৃহিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে শুণ্য পদে দ্রুত নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ সৃস্টি করে জনবল বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।