মেহেদী হাসান আকন্দ: নেত্রকোণা শহরকে নিরাপদ রাখতে এবং ভাটি বাংলার সিংহদ্বার মোহনগঞ্জ-বারহাট্টা-কলমাকান্দা-ধর্মপাশা উপজেলাকে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ হয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে নির্মাণ হচ্ছে বাইপাস সড়ক। সড়কটি নির্মাণ হলে এ অঞ্চলে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নবদিগন্তের সূচনা হবে।
জেলার চল্লিশা হতে বাগরা-কুনিয়া-মেদনী হয়ে রাজুরবাজার পর্যন্ত ২৫৭ দশমিক ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে ১১ দশমিক ৩ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক।
নেত্রকোণা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হামিদুল ইসলাম জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জেলার মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা ও কলমাকান্দা উপজেলার সাথে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ হয়ে রাজধানী ঢাকা পথে যানজটমুক্ত সড়কে নির্বিঘ্নে যানচলাচল করতে পারবে। সেই সাথে শহরের অভ্যন্তরে ভারী যানচলাচল বন্ধ হলে যানজট কিছুটা লাঘব হবে।
নেত্রকোণা শহরকে নিরাপদ রাখতে এবং মোহনগঞ্জ-বারহাট্টা-কলমাকান্দা-ধর্মপাশা উপজেলাকে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ হয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে বাস্ততম সড়কের বিকল্প বাইপাস সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সড়কটি নির্মাণ হলে জেলার আর্থ-সামাজিক চিত্র বদলে যাবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
শহরের উপর দিয়ে যাওয়া সড়কটি নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। কারণ সড়কটিতে যানজট ও প্রাণহানী ছিল নিত্যঘটনা। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ছিল একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই বাস্তবায়িত হচ্ছে শহর বাইপাস সড়ক। বাইপাস সড়কটি নির্মাণ হলে সব বিড়ম্বণা থেকে মুক্তি পাবে শহরবাসী।
নেত্রকোণা সড়ক বিভাগ সূত্রে আরোও জানাযায়, দর্শনীয় স্থান হিসেবে সুখ্যাতি থাকলেও কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেই পর্যটনের সম্ভাবনা পূর্ণ মাত্রায় কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণেই আঞ্চলিক সড়ক নেওয়ার্ক শক্তিশালীর করার যে পরিকল্পনা সরকার হাতে নিয়েছে, তার অংশ হিসেবে ২৮২ দশমিক ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্গাপুর-কালমাকান্দার সীমান্ত সড়কের নেত্রকোণা অংশের ৩৪ কিলোমিটার রাস্তা প্রস্তুকরণের কাজ চলছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্ধারিত মেয়াদ রয়েছে। নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন হবে বলে।
শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-বিরিশিরি-দুর্গাপুর সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত বালু, পাথর, কয়লা ও কাঠবাহী ভারী ট্রাক রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করে। ৩১৬ দশমিক ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৬ কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ২৬১ দশমিক ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার নেত্রকোণা-বিশিউড়া-ঈশ্বরগঞ্জ সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে।
সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলাকে জেলা শহরের সাথে নিরচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনে ৩১০ দশমিক ০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১ কিলোমিটার সড়ক নির্মানের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
নেত্রকোণা জেলার সাথে কেন্দুয়া হয়ে কিশোরগঞ্জসহ ময়মনসিংহ তথা সারাদেশের সাথে স্বল্প দূরত্বের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্যে ৩৫৩ দশমিক ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোণা- কেন্দুয়া-ঈশ্বরগঞ্জ সড়কের নেত্রকোণা অংশের ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।
১০৬ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে নেত্রকোণা অংশের ২১ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়াও ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পূর্বধলা-হোগলা-ধোবাউড়া ৪৮ কিলোমিটার রাস্তা এবং ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোণা- বিরিশিরি ১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে সড়ক নেটওয়ার্কের মান উন্নয়নের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের পাশাপাশি পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হবে। এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
নেত্রকোনা জেলাটি প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে স্থানীয়ভাবে আহরিত কৃষি, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ বাজারজাতকরণ কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে এ সীমাবদ্ধতা দূর হবে। এতে এ অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। তাদের মাথাপিছু আয় বাড়বে, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে স্থানীয়দের উন্নত চিকিৎসাও নিশ্চিত হবে। এছাড়া, এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য প্রতিবছর প্রচুর পর্যটককের আগমন ঘটে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।