নিজস্ব প্রতিনিধি : “করোনাকালে নারী নেতৃত্ব : গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সোমবার (৮ মার্চ) পাবনা খয়েরসূতি স্কুল ও কলেজের হল রুমে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উপলক্ষে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিবন্ধী নারীদের নিয়ে আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও কমনওয়েল্থ ফাউন্ডেশন এর সহযোগিতায় প্রতীক মহিলা ও শিশু সংস্থা’র আয়োজনে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী এবং দোগাছী ইউনিয়ন পরিষদের কাউন্সিলর মোছা: মরিয়ম খাতুন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের সমাজে নারীদের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক উন্নতি হয়েছে ।
প্রতিবন্ধী নারীদের অবস্থা এখনো সন্তোষজনক অবস্থায় পৌছায়নি। বিশেষ করে করোনাকালে অন্যান্য নারীদের ন্যায় তাদের অবস্থাও অনেক খারাপ। এখন সময় এসেছে প্রতিবন্ধী নারীদের নেতৃত্ব দেবার। এ বছরের প্রতিপাদ্য সময় উপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সকলে মিলে প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নে কাজ করবো। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রকাশ মানবিক উন্নয়ন সংস্থা’র নির্বাহী পরিচালক এবং সোনার বাংলা ৩৬৫ এর পাবনা জেলা প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফা (মোস্তাক) বলেন, আমরা সাধারণত নারী দিবসে যে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসি তা হল- নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ। এ অবস্থা থেকে উন্নয়নশীল আর উন্নত বিশ্ব, কারোরই নিস্তার নেই। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি লাখে ৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন; ভারতে ২ জন; আমেরিকায় ২৭ জন এবং ব্রিটেনে ২৯ জন। গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতে সংখ্যাটা কম হওয়ার কারণ হল সামাজিক অবস্থা।
একজন ধর্ষণের শিকার নারী নির্দোষ হলেও আমাদের সমাজ তার প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়ে অনেকটাই ‘ঘৃণার’ চোখে দেখে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এবং অনেকেই তা প্রকাশে বিরত থাকেন। তাই এখনই সময় নারী নেতৃত্বের উন্নয়ন। সেক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নারীদের পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। বিশেষ অতিথি কমিউনিটি ইনিশিয়েটিভ সোসাইটি’র ফিল্ড কোরঅডিনেটর মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের পাবনা কমিউনিটি হাসপাতাল রয়েছে। আমরা আপনাদের জন্য স্থাস্থ্য ক্যাম্প করবো। প্রতীকের নির্বাহী পরিচালক এস, এম, সাইফুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, পৃথিবীর সব নারীর অধিকার রক্ষায় ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ ঘোষণা দেবার পর থেকে পৃথিবীর সব রাষ্ট্র তা পালন করছে। কোনো কোনো রাষ্ট্র দিনটি সরকারি ছুটি (রাশিয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম, ইউক্রেন) আবার কিছু রাষ্ট্র (চীন, মেসিডোনিয়া, নেপাল) এ দিনটিতে কেবল নারীরা সরকারি ছুটি প্রদান করেন। তবে আমরা বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও মানববন্ধন করে জনসচেতনতা তৈরীর জন্য কাজ করছি।
কেননা সকল নারীদের ন্যায়ে প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন হওয়া অত্যান্ত জরুরী। গত ২৬ বছর ধরে অনেক আকর্ষণীয় প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে এর সফলতার উল্লেখ যোগ্য নয়। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারী বরাবরের মতোই থেকে গেছে অধিকারবঞ্চিত, ক্ষেত্র বিশেষে অধিকতর। তাই করোনাকালে অন্যান্য নারীদের ন্যায় প্রতিবন্ধী নারীদের নির্যাতন আশংকা হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় প্রতিবন্ধী নারীরা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তাদের নেতৃত্বের মূলধারায় আনতে না পারলে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে না। লজ্জার কথা হল, এ সমাজে এখনও আমরা নারীকে ‘মেয়েলোকের’ বেশি ভাবতে পারিনি। দোগাছী স্ব-সহায়ক দলের সদস্য মোছা: আসমা খাতুন বলেন আমরা সমাজে প্রতিবন্ধী নারীরা শারীরিকভাবে যতটা না নির্যাতিত তার চেয়ে অনেক বেশি হয় মানসিক নির্যাতনের শিকার। পদে পদে আমাদের অপমান সইতে হয়। প্রতিবন্ধী হয়ে আমরা যেন পাপ করে ফেলেছি। সভায় প্রতিবন্ধী নারী, তাদের অভিভাবক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।