ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদীতে রাসেল ভাইপার সাপ পিটিয়ে হত্যা করছে কয়েকজন কৃষক । একদিকে করোনাভাইরাস মহামারি অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমের শুরু না হতেই ঈশ্বরদী উপজেলায় নতুন করে সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। দেখা মিলছে অতি বিষাক্ত দুর্লভ প্রজাতির সাপ রাসেল ভাইপারের। এই সাপ কামড় দিলে অধিকাংশ মানুষই মারা যায়। তবে বাঁচলেও দংশিত স্থানে পচন ধরে।
এদিকে এবার পাকশী ইউনিয়নের হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে দেখা মিলল বিষধর এই সাপের। বুধবার (২৪ জুন) বিকেলে সাপটি দেখা মাত্রই পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন স্থানীয় কয়েকজন কৃষক।
জিয়াউল হক নামের স্থানীয় বাসিন্দা জানান, পদ্মার পানিতে ভেসে আসা সাপটি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সংলগ্ন জমিতে দেখতে পান দুজন কৃষক। সাপটিকে কাছে থেকে দেখতে গিয়ে তারা দেখেন এটি রাসেল ভাইপার। তখন তারা ভয় পেয়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩০ মে রাতে ঈশ্বরদী উপজেলার চরাঞ্চলে এক নারীকে সাপে কামড় দেয়। ওই নারীকে নিয়ে যাওয়া হয় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে। সাপটিকেও মেরে হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। তিন দিন পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান ওই নারী।
চিকিৎসকরা জানান, সাপটি কামড় দিয়ে পুরোপুরি বিষ ঢালতে না পারায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি।
এরপর পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা মৃত সাপটিকে পাঠান পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবে। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা পর্যবেক্ষণ করে সাপটি আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংঘের (আইইউসিএন) বিলুপ্ত তালিকায় থাকা দুর্লভ প্রজাতির রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত হন।
পাবনার প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক সংগঠন নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনসারভেশন কমিউনিটি (এনডাব্লিউসিসি) সভাপতি এহসান বিশ্বাস লিটু বলেন, প্রত্যেক প্রাণির বাঁচার অধিকার আছে। তবে সাপটিকে মেরে না ফেলে সংরক্ষণ করা জরুরি ছিল। স্থানীয় বন বিভাগ যদি সাপটি সংগ্রহ করে নিতে পারতো তাহলে ভালো হতো।
তিনি বলেন, সাপটি অনেক বিষধর। এটি ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে আছে। বাংলাদেশের উত্তরঞ্চলের কিছু জেলায় এবং দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় রাসেল ভাইপার সাপটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, এটি কামড় বসালে এর বিষ খুব দ্রুত মানব দেহের রক্তে ছড়িয়ে পড়ে, হৃদপিন্ড অল্প সময়ে অকার্যকরহয়ে পড়ে।
সাপটি জলে-স্থলে উভয় জায়গাতেই বাস করে। এর প্রধান খাবার ব্যাঙ, কাকড়া, মাছ। আবার স্থলে এরা হাস-মুরগি, ইদুর, বেজি পেলে খেয়ে ফেলে। অজগরের মতো এটি ধূসর তবে শরীরে কালো ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। সাপটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- চন্দ্রবোড়া ডিম দেয় না, সরাসরি বাচ্চা দেয়। এরা একসাথে ৬২/৬৩টি এমনটি ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে।
রাসেল ভাইপার সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা বলেন, রাসেল ভাইপার বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। অন্যান্য সাপ মানুষকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলেও এ সাপটি স্বভাব ঠিক তার উল্টো। তাই প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ কেবল এ সাপটির কামড়েই প্রাণ হারান। আক্রমণের ক্ষিপ্র গতি ও বিষের তীব্রতার কারণে ‘কিলিংমেশিন’ হিসেবে বদনাম রয়েছে সাপটির।
জোহরা মিলা বলেন, তীব্রতার দিক দিয়ে সাপটি বিশ্বের ৫ নম্বর ভয়ংকর বিষধর সাপ। কিন্তু মাত্র ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে কাউকে কামড়ে বিষ ঢালতে পারে সাপটি! তাই কামড়ের ক্ষিপ্রগতির দিক দিয়ে সব সাপকে হারিয়ে রাসেল ভাইপার প্রথম স্থান দখল করেছে। তাছাড়া এ সাপটির বিষ দাঁত বিশ্বে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ। এ সাপের কোনো অ্যান্টিভেনম বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। বলা যায়, এর এক ছোবলেই মৃত্যু নিশ্চিত। কারণ রাসেল ভাইপারে কামড়েছে অথচ বেঁচে গেছেন এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে। আবার কেউ ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও এই সাপের বিষ ‘হেমোটক্সিন’ হওয়ায় মাংস পঁচেই আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তাই সাপটির কবল থেকে বাঁচতে সচেতনতাই একমাত্র পথ।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গেল কয়েক দিন ধরে চর অঞ্চলে রাসেল ভাইপার দেখা মিলছে। এসব বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে অচিরেই তারা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেবেন। এতে জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।