রফিকুল ইসলাম সুইট : জেলার সবত্র কোভিড ১৯ এর প্রাদুভার থেকে নিরাপদ থাকতে জনসচেতনা, অক্সিজেন সরবরাহ, রাস্তা-বাজারে শৃঙ্খলা তৈরি, মাস্ক পরতে উৎসাহ দেওয়া, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধদের বাড়িতে গিয়ে টিকা প্রদান, হাসপাতালে চলছে করোনা রোগীদের সহায়তা সহ ব্যাপক দায়িত্ব পালন করেছে পাবনা জেলায় কমরত পুলিশ সদস্যরা। জেলা পুলিশের উদ্যেগে পাবনায় করোনা মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে সংগঠন করা হয়েছে ‘পাবনা জেলা স্বেচ্ছাসেবী পরিবার’। এতে রয়েছেন জেলার প্রায় ৩০ সামাজিক সাংস্কৃতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ৫ শতাধিক সদস্য। জেলা পুলিশের ফেসবুক পেইজে করোনা সংক্রান্ত ব্যাপক তথ্য উপাস্থাপন করায় পাবনার মানুষের তথ্য প্রাপ্তি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় পাবনা জেলা পুরিশের ভুমিকা অন্যন্য সেবা সেবা বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। এ সময় থেকেই মাঠে নামে জেলা পুলিশ। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে বসানো হয় চেকপোস্ট। সেখান থেকে মাস্ক পরার জন্য উৎসাহ ও বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য বলা হয়। একই সঙ্গে রাস্তা, বাজার ও পাড়া-মহল্লায় মাইকিং করে মানুষকে মাস্ক পরতে উৎসাহ ও ঘরে থাকতে অনুরোধ জানানো হয়। জেলা পুলিশের ফেসবুক পেইজে করোনার সেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জনগনের উদ্যেশ্যে উপস্তাপন কবা হচ্ছে।
এ সময় পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে মাঠে নামে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কিন্তু এতে তৈরি হতে থাকে সমন্বয়হীনতা। পরে জেলা পুলিশের উদ্যোগে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের তরুণ সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয় ‘পাবনা জেলা স্বেচ্ছাসেবী পরিবার’। এই পরিবারে যোগ দেয় পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, জেলা ছাত্রলীগ, তারুণ্যের অগ্রযাত্রা, শেখ রাসেল ব¬াড ডোনারস ক্লাব, পাবনা ডিবেট সোসাইটি, সোনার বাংলা মা একাডেমি, ইয়েস ফাউন্ডেশন, ভয়েস ফর ভয়েস লেস ও পাবনা স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের ৫ শতাধিক সদস্য। পরে তাঁদের নিয়ে জেলা পুলিশ ‘মাস্ক আপ পাবনা’ নামে একটি প্রচার কার্যক্রম শুরু করে। একই সঙ্গে পুলিশ লাইনস হাসপাতালে শুরু করে করোনার টিকাদান কর্মসূচি। পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রটিতে তৈরি করা হয় সুশৃঙ্খল পরিবেশ। টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের জন্য তাঁবু টাঙিয়ে বানানো হয় অস্থায়ী বিশ্রামাগার।
জেলা স্বেচ্ছাসেবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরো দলটিকে নিজে তত্ত্বাবধান করেন পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান। প্রতিদিন পুলিশ সুপারের নির্দেশনা অনুযায়ী দলের সদস্যদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সংগঠনের নিজস্ব উদ্যোগেও আরো কিছু কাজ করা হয়। এরপর তাঁরা টিকাদান কেন্দ্রে শৃঙ্খলা রক্ষা, টিকাদান ফরম পূরণ, দুস্থ ও অসহায় রোগীদের বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া, সচেতনতামূলক প্রচারণা, রাস্তা ও বাজারে শৃঙ্খলা তৈরি, হাসপাতালে করোনা রোগীদের সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধদের বাড়িতে গিয়ে টিকা প্রদানসহ বিভিন্ন কাজ করেন।
পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সাংগাঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন বলেন, করোনার পাদুরভাব মোকাবেলায় আমরা পাবনা পিসিআর ল্যাব স্থাপনে গুরুত্বপুণ ভুমিকা রেখেছি।পাশাপাশি প্রশাসনের সাথে এবং আমরা নিজেদেও প্রচেষ্ঠায় বিপদগ্রস্থ মানুষের সহযোগতিায় সচেষ্ট রয়েছি। পুলিশ সুপার সবাইকে একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসায় এখন সমন্বয় তৈরি হয়েছে। এতে কাজের গতি বাড়তে মানুষ উপকৃত হবে।
পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, মানুষের দুঃসময়ে পুলিশের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। পুলিশ যে সত্যি জনগণের বন্ধু পাবনা জেলা পুলিশ সেটি প্রমাণ করেছে। পাবনা পৌরসভার মেয়র শরীফ উদ্দীন প্রধান বলেন, পাবনা পৌর সভা করোনায় মোকাবেলায় ব্যাপক কাজ কওে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি। পাবনা জেলা পুলিশ স্বেচ্চাসেবিদের সমন্বয়ে পাবনার মানুষের জন্য অন্যন্য সেবা করছে।
পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, পাবনায় কমরত ১৭৫৪ জন পুলিশ সদস্য ও ৫ শতাধিক স্বেচ্চাসেবক পযায়ক্রমে করোনা মোকাবেলায় রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু লোকবল–সংকটের কারণে অনেক কিছুই পুলিশের একার পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে যেসব তরুণেরা স্বেচ্ছায় কাজ করতে চান, তাঁদের নিয়ে এই জেলা স্বেচ্ছাসেবী পরিবার তৈরি করা হয়েছে। এখন পুলিশের পাশাপাশি তরুণসমাজ বহু ভালো কাজ করছে। পাবনার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যাক্তি, সাংবাদিক, জেলা প্রশাসনসহ সকলের সহযোগীতায় পাবনা জেলা পুলিশ এই মহামারি মোকাবেলা করছে ।