পাবনা প্রতিনিধি : ৭ নভেম্বর পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী এসএম মিশকাত আহমেদ মিশু হত্যার ৩ বছর হলেও মামলার অগ্রগতিতে পিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ধীরগতির অভিযোগ তুলেছেন ভূক্তভোগী পরিবার।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ মাঠে দূর্বৃত্তরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে মিশকাত আহমেদ মিশুকে। নিহত মিশু পাবনা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মোস্তফার ছেলে।
নিহতের পরিবারের দাবী, মেধাবী ছাত্র মিশুকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পাবনা সদর থানা মামলাটি তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। ওই চার্জশীটের উপর নারাজী পিটিশন দায়ের করেন ভূক্তভোগী পরিবার। পরে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের উপর ন্যস্ত করে। মিশু হত্যার ৩ বছর কেটে গেলেও এই মামলার অন্যতম প্রধান আসামী মাহমুদুল হাসান সোহাগ ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। অন্য আসামীরা হল; ইয়াছিন আলী রাহাত, সাদ্দাম হোসেন, আশরাফুল আলম ওরফে শৈবাল ও হৃদয় আহমেদ।
নিহতের বাবা সৈয়দ গোলাম মোস্তফা বলেন, অজ্ঞাতদের আসামী করে সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ এই হত্যাকান্ডের সাথে ৬ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। এই মামলার অন্যতম আসামী ইয়াছিন আলী রাহাতকে পুলিশ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে রাহাত জানায় এই হত্যাকান্ডের সাথে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের প্রভাবশালী এক নেতা ও তার সহযোগী তসলিম হাসান সেতুর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সৈয়দ গোলাম মোস্তফার অভিযোগ, পুলিশ অজ্ঞাত কারণে নানা তদন্ত ও গ্রেপ্তারকৃত আসামীর জবানবন্দি মোতাবেক তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দিয়ে দাখিলকৃত চার্জশীট থেকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ওই প্রভাবশালী নেতা ও তার সহযোগী তসলিম হোসেন সেতুর নাম বাদ দিয়েছেন। তারা এখন প্রকাশ্যে ঘুরাঘুরি করছে। দাখিলকৃত চার্জশীটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি পিটিশন দেওয়ার একমাস পর মামলাটি আবার পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়।
নিহতের মা লুৎফা শিরিন লুনা বলেন, সন্তান হারিয়েছি। ফিরে পাবো না। এতোটুকু সান্তনা নিয়ে মরতে চাই। আমার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে। আমার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে। সেই সকল খুনীদের যেন মামলা থেকে বাদ দেয়া না হয় এটা সরকার তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আমার জোড়ালো দাবী রইলো। আমি সন্তান হত্যার ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পাবনার উপ-পরিদর্শক সবুজ আলী বলেন, আমি দীর্ঘমেয়াদী একটি প্রশিক্ষণে রয়েছি। মামলাটির চার্জশীট প্রথমবার দাখিল করা হলেও বাদী পক্ষের নারাজীর কারনে আবারও তদন্ত হচ্ছে। আসামী পলাতক থাকায় কিছুটা সময় লাগছে। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই একটি ভালো সংবাদ দেয়া সম্ভব হবে।
পিবিআইয়ের ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে মামলার অগ্রগতি এগুচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামীর জবানবন্দি অনুসারে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকে বাদ দিয়ে চার্জশীট দাখিলের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিস্তারিত জানার জন্য পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারের কাছে জানার পরামর্শ দেন।