পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুর সমর্থনে যোগদান করায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মি ও সমর্থকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, মারপিট ও বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে বেড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জাতসাকিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল হক বাবু সমর্থিত লোকজন।
আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি পাবনার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডি: ম্যাজি: ৬ নং আমলী আদালতে মো: জিয়াউর রহমান জিলাল বাদি হয়ে মো: ছানু মিয়া (৬৫) কে প্রধান আসামী করে ১৬ জনের নামে ও আরো অজ্ঞাত ১২/১৩ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছে । মামলা নং-১৯/২০২২(আমিনপুর) ।
আমিনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রওশন আলী জানান কোর্টের মামলা খবর আপনার কাছ থেকে প্রথম জানলাম, আমাদের কাছে তদন্ত আসলে আমরা সঠিকভাবে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিব ।
উল্লেখ্য গত রোববার দুপুরে ও বিকেলে পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার নগরবাড়ি ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় ৪ জনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, বাজারের ব্যবস্থায় এবং স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায, শনিবার পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার আজিজুল হক আরজুর সমর্থনে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মি সম্মেলনে যায়। সাবেক এমপি আরজুর সমর্থনে সম্মেলনে যোগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল হক বাবুর অনুসারীরা। রোববার দুপুরে নগরবাড়ি ঘাটের সর্দার সানুর নেতৃত্বে রোকন, রওশন, হাসেম, মোয়াজ্জেম, জুয়েল, সুজন, মোস্তফা, সালমান, রাজা, তপুসহ ১৫/২০ জনের একদল সন্ত্রাসী পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহজাহান শেখ, সাধারণ সম্পাদক জিলাল, যুবলীগ নেতা ইয়াহিয়াসহ কমপক্ষে ৭ জনকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, হকিস্টিক ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এ সময় দোকানের আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, চেয়ার টেবিল ও মালামাল ভাংচুর করে। যাওয়ার সময়ে সন্ত্রাসীরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করে চলে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানান, বাজারের অদূরেই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ঈমান হাজী, ইকরাম, ইব্রাহিম, আব্বাস, জিল্লা, আসাদুলসহ ৮/১০ জনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। সন্ত্রাসীদের হামলায় পুরানভারেঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহজাহান শেখ (৪৭), সম্পাদক জিলাল (৪৫), ইব্রাহিম (২৮), কানন শেখ (১৮) গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহজাহান শেখ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীক কোন দ্বন্দ্ব নয়। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যাওয়ার অপরাধে বাবু চেয়ারম্যানের ক্যাডার ঘাটের সর্দার সানু, তার ছেলেসহ কিশোর গ্যাং বাহিনী আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে হামলা চালিয়ে মারধর করেছে।
আঘাতপ্রাপ্ত যুবলীগের সম্পাদক জিলাল বলেন, নগরবাড়ি ঘাট দীর্ঘদিন ধরেই সাবেক সংসদ সদস্য আজিজুল হক আরজুর অনুসারীরা নিয়ম মেনেই পরিচালনা করছিল। সম্প্রতি ইজারা পেয়েছে বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু। সে ঘাটের ইজারা পাওয়ার পর থেকেই ব্যবসায়ীদের উপর নানা ধরণের জুলুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরণের প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে। এ থেকে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা পরিত্রাণ চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সার, কয়লা, পাথরের ব্যবসায়ী বলেন, ইজারা পাওয়ার পর থেকে বাবু চেয়ারম্যান, তার ভাইসহ তাদের ক্যাডাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যা ইচ্ছে তাই করছে। ব্যবসায়ীদের জুলুম করে, অন্যায় ভাবে, জোরপূর্বক চাপ সৃষ্টি করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে টাকা আদায় করছে। অনেক সময় টাকা নিলেও রশিদ দিচ্ছে না।
অভিযোগের বিষয়ে বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু বলেন, কি হয়েছে আমি জানতাম না। আমি নাটোরে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ছিলাম। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ফোন দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে। এ ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমাকে অসৎ উদ্দেশ্যে জড়িয়ে স্বার্থ উদ্ধারে একটি গ্রুপ বেশ অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
ঘটনার দিন আমিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বে সামান্য বিশৃংখলা হয়েছিল। খবর পেয়ে পুুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। বাড়ি ঘর ভাংচুর, হামলা ও মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের কোন খবর আমার কাছে নেই। তবে ছোট খাটো ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি।