পাবনা প্রতিনিধি : দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিন বছর ধরে অসহ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন সাইফুদ্দিন আহমেদ সজল (১৮)। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে প্রকৌশলী হবার। কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে তার লেখাপড়া। তাকে সুস্থ্য হয়ে উঠে দাঁড়াতে দরকার উন্নত চিকিৎসা ও অপারেশন। চিকিৎসকের ভাষ্যমতে অপারেশন ও পরবর্তী চিকিৎসায় প্রয়োজন প্রায় ৪ লাখ টাকা। অপারেশন করাতে না পারলে কেটে ফেলতে হতে পারে সজলের ডান পা। কিন্তু ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব দরিদ্র পিতা আর পারছেন না ব্যয়বহুল অপারেশনের টাকা যোগাড় করতে। তবে কি আর কখনও হাঁটতে পারবে না সজল? সবার সহযোগিতা ও ভালবাসাই পারে সজলকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করতে।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর স্কুলপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র রফিকুল ইসলাম-শেলী পারভীন দম্পতির সন্তান সাইফুদ্দিন আহমেদ সজল। তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সজল দ্বিতীয়। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ২০১৯ সালের ১ জুন পাবনা থেকে চাটমোহরে যাওয়ার পথে আটঘরিয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা উল্টে পাঁচ যাত্রী আহত হয়। গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে সজল। আর গাড়ি গিয়ে পড়ে তার ডান পায়ের ওপর। মারাত্বকভাবে ভেঙে যায় ডান পায়ের ওই স্থান। পাবনা সদর হাসপাতাল, ভাঙ্গুড়া নিরাপদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে নানারকম চিকিৎসা, পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয়। পায়ের ভেতরে রড ঢুকানো হয়, আবার সেই রড খুলে রিং পড়ানো হয়।
এভাবে তিন বছর ধরে ছেলের চিকিৎসায় ধার দেনা ও ঋণ করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে এখন নি:স্ব পিতা রফিকুল। তিনি ভাঙ্গুড়া এপিক প্রিন্টার্স এ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে মাসিক বেতন হিসেবে যা পান তাই দিয়ে ৫ সদস্যের সংসার চালানোই যেখানে দায়। সেখানে ছেলের চিকিৎসার খরচ বহন করা মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখের সামনে ছেলের যন্ত্রণা দেখে দু’চোখের পানি ফেলা ছাড়া যেন কিছুই করার নেই হতদরিদ্র বাবা-মায়ের।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি ভাঙাচোরা টিনের ঘরে বসবাস পরিবারটির। বাইরে রান্নাঘর না থাকায় খোলা আকাশের নিচে চলে রান্নার কাজ। অসুস্থ্য ছেলে সজল থাকে ঘরের একপাশে একটি চৌকিতে। আর দুই মেয়ে থাকে ঘরের আরেকপাশের চৌকিতে। মাঝখানে মেঝেতে থাকতে হয় রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রীকে। সজল তার ভাঙা পা নিয়ে ঘরে শুয়ে আছে। অনেক কষ্টে ক্র্যাচে ভর করে উঠাবসা করতে হচ্ছে তাকে।
সজলের পিতা রফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা নীরিক্ষা করে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সজলের শরীরে এন্টিবায়োটিক কাজ করছে না। ফিস্টুলাগ্রাফ চিকিৎসার দরকার। এজন্য অপারেশন খরচ প্রায় এক লাখ টাকা, এছাড়া পরবর্তী চিকিৎসায় লাগবে দামী দামী অনেকগুলো ওষুধ। সবমিলিয়ে ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। আঘাতের স্থানে রিং ঢুকানো থাকায় সেখানে প্রতিনিয়ত অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে সজলকে। মাঝে মধ্যে সেখানে পুঁজ বের হচ্ছে। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব পিতা রফিকুল আর্থিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। কোথায় পাবেন সন্তানের অপারেশনের জন্য এত টাকা সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এজন্য ছেলের চিকিৎসায় সমাজের দয়ালু ও বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন রফিকুল।
সজল জানায়, স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে ইঞ্জিনিয়ার হবো। কিন্তু সে স্বপ্ন আজ আমার কাছে দু:স্বপ্ন। বেঁচে থাকাটাই এখন যেখানে কঠিন, সেখানে স্বপ্ন পূরনের স্বপ্ন আর দেখিনা। তবে সুস্থ্য হবার স্বপ্ন দেখি। আমার পা টা ভাল হলে উঠে দাঁড়াতে চাই। হাঁটতে চাই, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। কিন্তু কিভাবে হবে সেই স্বপ্ন পূরণ তা জানি না। আমার আব্বার তো অপারেশন করানোর মতো টাকা নাই।
একটি পরিবারের ভাঙা কিছু স্বপ্ন জোড়া লাগাতে, কিছু মানুষের সামান্য চাওয়া আমার-আপনার দিকে হাত বাড়িয়েছে। আসুন না, একটু পাশে দাঁড়াই, নিজেদের সাধ্যমতো। হয়তো আমাদের এই ভালবাসাই পারবে সজলকে আবার উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করতে। সাহায্য পাঠাতে যোগাযোগ করুন, সজলের বাবা রফিকুল ইসলাম, মোবাইল ০১৭১৪-৮৪২৫৪৯ (বিকাশ, নগদ, রকেট)।