নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনায় সর্বত্র মাস্ক বিহীন মানুষের আনাগোড়া পরিলক্ষিত হয়েছে। অফিস আদালত, দোকানপাট, হোটেল রেস্টুরেন্ট, খোলা স্থান, কাচাবাজার, হাসপাতাল, ক্লিনিক সকল স্থানেই মাস্ক পড়ায় নেমে এসেছে ব্যাপক স্থবিরতা। স্বাস্থ্য প্রশাসনের নেয়া নানা উদ্যোগ কোন কাজে আসছে না। মাস্ক না পড়ায় দিনদিন এ জেলায় করোনা পরিস্থিতি মারাত্বক আকার ধারণ করতে পারে এমন ধারণা সচেতন মহলে।
রোববার বেলা সাড়ে ১০ টায় পাবনা পৌরসভা চত্বরে। নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিতে অনেক নারীপুরুষ নানা বয়সী মানুষ এসেছেন। স্বাস্থ্য পরিদর্শক, হিসাব শাখা, পানি সরবরাহ শাখা, ডিজিটাল সেন্টার, কাউন্সিলরদের কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি অফিস ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই।
সেনেটারী ইন্সেপেক্টর আব্দুল লতিফ তার কার্যালয়ে বসে আছেন আরও চার সহকর্মি নিয়ে। সেবা নিতে এসেছে আরও বেশ কয়েকজন। প্রবেশের দরজাতে মাস্ক পড়তে নোটিশ করা থাকলেও নোটিশ দাতারাই মাস্ক ছাড়া বসে আছেন। মাস্ক বিহিন কর্মরত বিষয়ে জানতে চাইলে সেনেটারী ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ বলেন, সমস্যা নেই। মাস্ক না পড়লে কিছুই হবে না। বেলা ১১ টায় পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মুল বিল্ডিংয়ে প্রবেশে থার্মালমিটার নিয়ে বসে আছেন এক কর্মচারী। আরেকজন মাস্ক পড়া নিশ্চিত করছে। নীচতলার ভেতরেই রয়েছে বিআরটিএ অফিস। অফিসের তথ্য কেন্দ্র, ফিঙ্গার ও আইরিশ রুমসহ বিআরটিএ কর্মকর্তার দপ্তরের সামনে প্রায় শতাধিক মানুষের ভীড়। যাদের অধিকাংশদের মুখে মাস্ক নেই। ডিসি অফিসের বিভিন্ন রুমে যারা বসে অফিস করছেন, তাদের বেশ কয়েকজনের মুখেই মাস্ক ছাড়া সেবা দিতে দেখা যায়।
সাড়ে ১১ টা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে উকিলবার সমিতির পুরাতন কার্যালয়। সেখানেও উকিল, মুক্তারসহ ভূক্তভোগীদের ব্যাপক আনাগোনা থাকলেও মাস্ক পড়ায় অনেকের অনীহা। তেমনি জজকোর্টের সামনে এডভোকেট বার সমিতির বহুতল ভবনের প্রত্যেক তলাতেই একই অবস্থা। পৌনে বারোটায় জুডিশিয়াল কমপ্লেক্স ও জজকোর্ট এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিচার প্রার্থী যারা এসেছে অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। শুধুমাত্র কোর্টের এজলাসে যাওয়ার সময়ে কোনমত মাস্ক পড়ছেন। সকাল সাড়ে নয় থেকে সোয়া ১০ টা পর্যন্ত পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ গেট থেকে আলিয়া মাদরাসা, আব্দুল হামিদ রোড, শহর টু বাসটার্মিনাল, অনন্ত মোড়, বড় বাজার, সদর হাসপাতাল রোড, পৈলানপুর টু চাঁদমারিসহ বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ রিক্সা, অটোরিক্সা, ব্যাটারী চালিক ব্যান, সবুজ সিএনজি, মোটর সাইকেল যাত্রী ও আরোহীদের মুখে মাস্ক নেই। অনেক পথচারী হাটছেন, অথচ তাদের মুখে কোন মাস্ক নেই।
পাবনার কয়েকটি অত্যাধুনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলো ঘরে দেখা যায়, কেউ মাস্ক পড়ছেন, কেউ মাস্ক কানে বাঁধিয়ে থুতমা ঠেকে চলাফেরা করছেন। মাস্ক যেন তাদের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। সকাল ৯ টায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালের বাহিরে ও ভিতরের চিত্রটা প্রায় এক। যারা রুমের ভেতরে তাদের মুখেও অনেকের মাস্ক নেই। আর যারা বারান্দায় রয়েছেন তাদের তো কোন কথাই নেই। কর্তব্যরত কয়েকজন নার্সের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাস্ক পড়ে না থাকলে কোন সেবা নেই। যখন রোগীর কাছে যাওয়া যায় তখন তারা মাস্ক পড়েন। অথচ আমরা সরে আসলেই তারা মাস্ক খুলে ফেলেন। এদিকে শহর ও আশপাশের বিভিন্ন ছোট বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, চায়ের দোকানগুলোতে কোন ধরণের মাস্ক ব্যবহার করছেন না দোকানে বসা লোকজন। তাদের অভিমত, করোনা চলে গেছে। আর করোনা আমাদের কিছু করতে পারবে না। মাস্ক না পড়লেও আমরা সচেতন এমন দাবী তাদের।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপকালে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মেহেদী ইকবাল বলেন, প্রত্যেক মানুষকে তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নানা ভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রচারপ্রচারণার পাশাপাশি অনুরোধ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মাস্ক পড়া, হাত ধোয়া আর শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে চললে করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের মতো কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, আপনারা আমরা সবাই দেখছি, মানুষ তাদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছেন। তার দাবী, এতো প্রচারপ্রচারণার মাস্ক পড়ার হার শতকরা একেবারেই নিম্নপর্যায়ে রয়েছে,দিন দিন কমতে শুরু করেছে মাস্ক পড়ার হার । তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবী, যানবাহনে চলাচলে স্টাফসহ যাত্রীদের, ক্রেতা-বিক্রেতা এবং পথচারী আর অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী আর সেবাগ্রহিতা প্রত্যেকের মাস্ক পড়াটা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন করোনাকালীন সময়ে। তাহলেই আমরা নিরাপদ থাকতে পারি।