এসএসসিতে অভাবনীয় সাফল্য ইমামের ছেলে নাফিস উদ্দিন ফুয়াদের ।

নাফিস উদ্দীন ফুয়াদ রাজশাহী বোর্ড ও বিভাগে এস এস সি-২০২০ এ সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে ।

পাবনা প্রতিনিধি : বাবা মসজিদের ইমাম আর মা গৃহিনী। তিন ভাইয়ের মধ্যে নাফিস উদ্দিন ফুয়াদ বড়। অভাব অনটন লেগেই আছে নাফিসদের পরিবারে। তারপরও থেমে থাকেনি নাফিসের পড়ালেখা। ছোট থেকেই নাফিস মেধাবীর পরিচয় দিয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে পাবনার ঈশ্বরদী ইক্ষু গবেষণা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক নম্বর পেয়ে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে সাহাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের স্থানীয় মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ মাসুমের ছেলে নাফিস উদ্দিন ফুয়াদ। ১৩০০ নম্বরের মধ্যে নাফিস ১২৭৪ নম্বর পেয়েছে । নাফিস উদ্দীন ফুয়াদ রাজশাহী বোর্ড ও বিভাগে ২০২০ এর এস এস সি তে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে ।
ঈশ্বরদী ইক্ষু গবেষণা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করেছে আমাদেরই মেধাবী ছাত্র নাফিস উদ্দিন ফুয়াদ। ছেলেটি আমাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পর তার পড়ালেখা, আচার-স্বভাবই পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল, সে একজন মেধাবী ছাত্র। প্রতিষ্ঠানের সুনাম সেই বয়ে আনবে। আমাদের ধারণা সে সত্য করেছে। আমরা শিক্ষকরা আজ তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তার শিক্ষাজীবন এবং ব্যক্তিজীবনে উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি। প্রধান শিক্ষক হাসানুজ্জামান বলেন, ফুয়াদের প্রাপ্ত নম্বরে আমার জানা মতে, ঈশ্বরদী উপজেলা তথা পাবনা জেলায় কোন পরীক্ষার্থী এতো নম্বর পায়নি। আমি বিশ্বাস করি, সে রাজশাহী বোর্ডের মেধাতালিকায় অন্যতম স্থানেই থাকবে।
নাফিসের বাবা মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ছোট বেলা থেকেই ছেলেটির ভেতরে মেধা ছিল সেটি লক্ষ করতে পেরেছি। মসজিদের ইমামতি করি। সীমিত আয়ের সংসার। খুব টানাটানির মধ্যে স্বামীস্ত্রী সহ ৩ ছেলে সন্তান নিয়ে চলে যাচ্ছে। এতো কষ্টের মধ্যেও ছেলেটির পড়ালেখায় হাল ছাড়িনি। আমার কষ্ট আজ স্বার্থক। আমি বিশ্বাস করি। আমার ছেলে একদিন পড়ালেখা করে দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে সঠিক স্থানে নিয়ে গিয়ে সেবা করবে।
নাফিসের মা আঞ্জুমান খাতুন বলেন, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আমি নিজেই ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছি আমার ছেলের যথেষ্ঠ মেধা আছে। তাই অভাবের সংসারেও তখন থেকেই প্রাইভেট শিক্ষক দিয়েছি। সে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেছে। কষ্ট হলেও ছেলেকে মানুষ করতে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চেষ্টা করেছিলাম। সে তার মেধাতেই ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। আমি চাই আমার ছেলে মানুষের মতো মানুষ হয়ে মানুষের সেবা করবে।
নাফিসের চাচা ফরিদ আহমেদ বলেন, আপনারা জানেন মসজিদের ইমামতি করে কয় টাকা পাওয়া যায়। অথচ ওই টাকাতেই আমার ভাস্তে নাফিস এতো ভালো রেজাল্ট করেছে। অর্থবিত্ত নেই। কিন্তু এই ছেলে আজ আমাদের পরিবারের, গ্রামের, থানা ও জেলার গৌরব। জানিনা, সে বিভাগীয় পর্যায়ের কোন অবস্থানে যাবে। চাচা ফরিদ বলেন, বাড়ি থেকে স্কুল কমপক্ষে ১২ কিলোমিটার দুরে। অনেক সময়ে স্কুলে যাবার ভাড়ার টাকাও জোটেনি। তবুও নাফিসের পড়ালেখা থেমে থাকেনি। আল্লাহ আজ আমার ভাস্তের কপালে এতো বড় জয় লিখে রেখেছেন আমরা জানতাম না।
সাহাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোতলেবুর রহমান মিনহাজ বলেন, নাফিসের ভালো ফলাফলে আমি গর্বিত। আমার ইউনিয়ন গর্বিত। আমার মেয়েও পরীক্ষার্থী ছিল। সে যেটা করে দেখাতে পারেনি, নাফিস সেটা করেছে। আমরা ওকে নিয়ে আজ আনন্দিত ও গর্বিত। ওর জন্য ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা থাকবে।
নাফিসের পরিবার জানায়, নাফিস ছোট কাল থেকেই খুব মেধাবী। সে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেছে। সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সে ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রথম, জেলায় প্রথম ও বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। নানা পুরস্কার, ক্রেস্ট আর সার্টিফিকেটে ভরপুর নাফিসের পড়ার টেবিল।


কথা হয় অভাবনীয় সাফল্য অর্জনকারী নাফিস উদ্দিন ফুয়াদের সাথে। নাফিস জানায়, তার এই সফলতার পেছনে বড় অবদান বাবা-মা। আর কৃতজ্ঞ ভরে অবদানের কথা স্বীকার করলো তার স্কুলের শিক্ষকসহ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের। নাফিস জানায়, দিনে ৫ ঘন্টা পড়ালেখা করতো। জীববিজ্ঞান তার প্রিয় বিষয়। খেলাধুলা, বিনোদন, টেলিভিশনে সংবাদ দেখা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শিক্ষনীয় বিষয়গুলো দেখা ও পড়া ছিল তার নেশা। নাফিসের ভবিষৎ স্বপ্ন চিকিৎসা বিজ্ঞানী হওয়া। সে দেশ ও দশের জন্য, কল্যাণের জন্য নিজেকে নিবেদন করতে চায়। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়ন এখন তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই অভাব অনটনের সংসারে কিভাবে তার স্বপ্ন পুরণ করবে সে নিয়ে বেশ সঙ্কিত নাফিস।
স্থানীয়রা বাসিন্দারা বলছেন, এতো ভালো রেজাল্ট করবে সেটা আমাদের গ্রামের ছেলে নাফিস ভাবতেই অবাক লাগে। সে আজ আমাদের গর্ব। আমরা তাকে নিয়ে অহংকার করি। তার আগামি সফলতা কামনা করি। স্থানীয়দের দাবী, নাফিসের পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হতে হলে প্রয়োজন অর্থের। অথচর ওই পরিবার থেকে সেই অর্থ যোগান দেয়া বড়ই পিড়াদায়ক। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে নাফিসের জন্য সহায়তার দাবী স্থানীয়দের।

ঈশ্বরদী উপজেলাঈশ্বরদী উপজেলা আপডেট নিউজঈশ্বরদী উপজেলা নিউজঈশ্বরদী নিউজএসএসসি অদম্য মেধাবী নিউজপাবনা জেলা নিউজপাবনা নিউজ
Comments (0)
Add Comment