আল এনায়েত করিম রনি, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার নুরনবী হলোখানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রধান শিক্ষককে হেনস্তা করে একের পর এক মিথ্যা মামলা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, জোড়পূর্বক বিদ্যালয়ের গাছ কর্তন ও পুকুরের মাছ তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয় প্রধান শিক্ষককে বেকায়দা ফেলতে তার মানিব্যাগ থেকে চেকের পাতা চুরি করে দেয়া হয়েছে মিথ্যা অর্থ লেনদেনের অভিযোগ।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থিত নুরনবী হলোখানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় জমিদাতা মো. জাফর আলীর ইচ্ছে অনুযায়ী তার বড় ছেলে হারুন অর রশীদকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। বিদ্যালয়ের মোট ১০২শতক জমির মধ্যে জাফর আলী প্রদান করেন ৫০শতক, তার জ্যাঠাতো ভাই দছিম উদ্দিন প্রদান করেন ২২ শতক এবং দছিম উদ্দিনের কাছ থেকে বিদ্যালয় কমিটি আরো ৩০ শতক জমি ক্রয় করে। প্রতিষ্ঠানটিতে দাতা সদস্য হিসেবে স্থানীয় অধিবাসী মো. নুরন্নবী সরকার ভোটাধিকারের মাধ্যমে সভাপতি পদ গ্রহন করেন। এরপর তার হাত ধরেই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। বিদ্যালয়ের একাংশ জমিদাতা জাফর আলী সভাপতি হতে না পেরে প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলামকে দেখে নেয়ার হুমকী দিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ বিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দিবেন বলে শাষাণ।
এর কিছুদিন পর অপর জমিদাতা দছিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে বাটোয়ারা মামলা দিয়ে মামলা চলাকালীন অবস্থায় বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১০২শতক জমির মধ্যে পুকুরসহ ৬৬ শতক জমি দখলে নেন জাফর আলী ও তার সন্তানরা। মামলাবাজ ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির এই পরিবারের কাছে বর্তমানে বিদ্যালয়টি এখন জিম্মি হয়ে আছে। পুকুরের মাছ বিক্রি, গাছপালা বিক্রি ও পুকুরের মাটি বিক্রি করে বিদ্যালয় ভবন হুমকীতে ফেলে দিয়েছে পরিবারটি। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম প্রতিবাদ করায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সামনেই তাকে হেনস্তা করা হয়। সর্বশেষ বিদ্যারয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী জাফর আলীর পূত্র হারুন অর রশীদ কৌশলে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের মানিব্যাগ থেকে চেকের ২টি পাতা ছিঁড়ে নিজের কাছে রাখেন।
পরে সেই চেকের পাতা ব্যবহার করে বিগত ২০০৮ সালের ২৯ জুন তার ছোট ভাই হাসান দেওয়ান প্রধান শিক্ষকের কৃষ্ণপুর মৌজায় অবস্থিত স্ত্রীর নামীয় দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ীসহ ৯ শতক জমি ৩০ লক্ষ টাকায় ক্রয়ের কাল্পনিক অভিযোগ আনেন। পরে গত ২৫/০৫/২০২২ তারিখে চেকে ১৫ লক্ষ টাকা বসিয়ে কুড়িগ্রাম সোনালী ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করেন চীফ জুডিসিয়াল কোর্টে। উপরোক্ত লেনদেনে স্বপক্ষে কোন কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হন তারা। পরে কুড়িগ্রাম জেলা ডিবি পুলিশের তদন্ত টিম সরজমিনে এসে নিশ্চিত করেন চেকে হাতের লেখা ও স্বাক্ষর প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের হাতের লেখা ও স্বাক্ষরের সাথে কোন মিল নেই। এছাড়াও একই কলম ব্যবহার করে চেকে স্বাক্ষর ও চীফ জুডিসিয়াল কোর্টে অভিযোগনামা দাখিল করা হয়েছে। যে কালির সাথে প্রধান শিক্ষকের ব্যবহ্নত কলমের কালি ও লেখার কোন মিল নেই। শুধু তাই নয় গত ১০/০৯/১৯তারিখে হাসান দেওয়ান অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম তার কাছ থেকে হাওলাত হিসেবে ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা তিনশত টাকার স্টাম্পে অঙ্গীকারনামা করে গ্রহণ করেছেন। যেটি ¯’ানীয় বিশিষ্টজনদেরকে নিয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় সালিশ বৈঠক করা হয়। সেখানে হাতের লেখা ও স্বাক্ষর মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সালিশ বৈঠক থেকে সটকে পরেন অভিযোগকারী হাসান দেওয়ান। পরে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করেন তিনি। এভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলা ও হয়রাণি করা হয় প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য মিনহাজুল ইসলাম আইয়ুব জানান, এই পরিবারটি জালিয়াত পরিবার। ভোটে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে না পেরে জাফর আলী ও তার তিন পূত্র বিভিন্নভাবে প্রধান শিক্ষককে হয়রাণিসহ একের পর এক অপকর্ম করে চলেছে। তারা স্বাক্ষর জাল করে মিথ্যা স্টাম্প তৈরী করেছে। সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় ক্ষমা চেয়ে পার পেলেও আবারো চেক জালিয়াতি করে ভুয়া জমি কেনার গল্প সাজিয়েছে। যা করেছে সম্পূর্ণ মনগড়া ও জালিয়াতি।
নুরনবী হলোখানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুরনবী সরকার জানান, এই পরিবারটির কারণে বিদ্যালয়টির পাঠদানের পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে । গাছ চুরি, মাছ চুরি, অনুষ্ঠানের চাল চুরিসহ একাধিক অপকর্ম করে লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছে। বিদ্যালয়ের জমি ও পুকুর পেশী শক্তি দিয়ে দখলে রেখেছে। এখন প্রধান শিক্ষককে বিতাড়িত করতে স্বাক্ষর জাল করে একের পর এক মামলা করে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে।
এ ব্যাপারে হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা জানান, বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে অনাকাংখিত ঘটনাগুলো ঘটছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উঠেছে সেগুলো সঠিক নয়। বিদ্যালয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে উভয়কে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও সমস্যা মিটছে না।