বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একদল গবেষক কম খরচে করোনাভাইরাস শনাক্তে ‘সাইবারগ্রিন পদ্ধতি’ উদ্ভাবন করেছে। এতে প্রতি নমুনা পরীক্ষায় খরচ হবে মাত্র ১৪০ টাকার মতো। সময় লাগবে মাত্র ৯০ মিনিট। এ পদ্ধতিতে একটি মাত্র টিউবেই করোনার বর্তমান ধরনগুলো শনাক্ত করা যাবে।
সোমবার যবিপ্রবির প্রশাসনকি ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন নতুন এ উদ্ভাবনের ঘোষণা দেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, সাইবারগ্রিন পদ্ধতিতে করোনা শনাক্তের সেনসিটিভিটি প্রচলিত অন্যান্য কিটের সমপর্যায়ের। গবেষণাকর্মটি প্রিপ্রিন্ট আকারে ‘medrxiv’ সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে এবং একটি পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
ড. আনোয়ার বলেন, সরকারের সহায়তা পেলে এ গবেষণা কাজে লাগিয়ে দেশে সহজে এবং কম খরচে করোনা শনাক্তের কাজটি করা যাবে। এ পদ্ধতিতে আরএনএ এপট্রাকশন কিট বাবদ ১০ টাকা, আরটি-পিসিআর কিটের জন্য ১২০ টাকা, প্রাইমার বাবদ তিন টাকা ও অন্যান্য খরচ বাবদ সাত টাকা মিলিয়ে মোট খরচ হবে ১৪০ টাকা।
অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, শতাধিক নমুনা পরীক্ষা করে এ পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাই করা হয়েছে। বায়ো-ইনফরমেটিপ এ টুলের মাধ্যমে বর্তমানে সংক্রমণশীল করোনার বিভিন্ন ধরনও শনাক্ত করা সম্ভব।
অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের গবেষক দল দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যাংকনোটে ভাইরাসের আরএনএর উপস্থিতি পেয়েছেন। গবেষণাপত্রটি একটি জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সংক্রমণশীল নতুন ধরনও এখানে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে যবিপ্রবি’র গবেষক দল সাম্প্রতিক নমুনাগুলো থেকে ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টগুলো হোল জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং স্পাইক প্রোটিনের সিকোয়েন্সিং-এর মাধ্যমে চিহ্নিত করেছেন। পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স জিএসআইডি ডাটাবেজে জমা দেওয়াও হয়েছে।
উপাচার্য বলেন, যশোর হাসপাতাল থেকে ভারতফেরত ১৬ জনের নমুনা যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে পাঠানো হয়, যার মধ্যে তিনজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এই তিনজনের মধ্যে দু’জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন শনাক্ত করা হয়েছে। যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে গত বছরের ১৭ এপ্রিল থেকে করোনা পরীক্ষা শুরুর পর ইতোমধ্যে ৪০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
জিনোম সেন্টারের পরিচালক বলেন, আমাদের গবেষকরা গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে এই অঞ্চলে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ১০০টির মতো ভাইরাসের নমুনার স্পাইক প্রোটিন সিকোয়েন্স করেছেন। গত দুই মাসের ভাইরাসগুলোর মধ্যে উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের সংখ্যা সবচাইতে বেশি। এ ছাড়া গত দুই মাসের নমুনায় সাউথ আফ্রিকান, মেপিকো, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউকে এবং নিউইয়র্ক ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতিও মিলেছে। আমরা স্পাইক প্রোটিনে কিছু বিরল মিউটেশন পেয়েছি, যা এই অঞ্চলে এখনও দেখা যায়নি। এ ধরনের মিউটেশনগুলো সংক্রমণ ক্ষমতা কিংবা রোগের ভয়াবহতার ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। শিগগিরই সে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সেলিনা আক্তার, পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শিরিন নিগার, বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসান মো. আল-ইমরান, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শোভন লাল সরকার, গবেষক তনয় চক্রবর্তী প্রমুখ।