বর্জ্য থেকে শক্তি বদলে যাবে ঢাকা

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ‘জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী : ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সম্ভ্যাব্য পথ ও উপায়’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসির (আইআইএলডি) যৌথ আয়োজনে রাজধানীর নগর ভবনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সংলগ্ন সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিনের মডারেশনে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসির (আইআইএলডি) নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম শাহীন, জাপানের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য ওসোমু ওনো এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান। আরো উপস্থিত ছিলেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো: শফীউল্লাহ ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো: ইফতিখার আহমাদ চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো: তাওহীদুল ইসলাম ও গবেষক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ প্রমুখ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওসোমু ওনো বলেন, আমরা বাংলাদেশের শহরগুলোর, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা জেনেছি। এ প্রেক্ষিতে, আমরা প্রথমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং এরপর ‘বর্জ্য থেকে শক্তি’ অর্থাৎ ‘ওয়েস্ট টু এনার্জি’ এই পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে কাজ করতে আগ্রহী। এ পদ্ধতিতে বার্নিং টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে। যা বর্জ্য সেপারেশন করে প্রয়োজনীয় অংশ জ্বালানির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এক্ষেত্রে কঠিন বর্জ্য পদার্থ পুড়িয়ে এর পরিমাণ কমিয়ে তাপ, বাষ্প এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যেতে পারে। আমাদের এই ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে শহর পরিবেশ দূষণ থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে এবং উৎপাদিত বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। যদি সিটি করপোরেশন এদিকে আগ্রহ দেখায় তাহলে আমরা এগিয়ে আসতে পারি।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ড. মো: শফীউল্লাহ ও মো: ইফতিখার আহমাদ চৌধুরী তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক কর্মসূচি বা প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওসোমু ওনোকে অবহিত করেন। তারা জানান, ইতোমধ্যেই জাইকার সহযোগিতায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দু’টি দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে। এ অনুযায়ী জনসচেতনতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছিল এ পরিকল্পনার উল্লেখ্যযোগ্য কর্মসূচি। তারা বলেন, আমাদের দেশের বর্জ্য পদার্থের বেশির ভাগই পচনশীল। আর এগুলো আমরা নির্দিষ্ট স্থানে ডাম্পিং করে ফেলি। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই বর্জ্য থেকে অনেক জৈব সার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা আমাদের কৃষিপ্রধান দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ছাড়া, পরিবেশেও একটা ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হতে পারে। এ জন্য, আমাদের শহরের এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আরো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে জৈব সার উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শক্তি পাওয়ারও বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।

সভার মূল বক্তা শফিউল আলম শাহীন বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সম্ভাব্য শক্তি সমাধান ইস্যুটি আমাদের আধুনিক বিশ্বে রীতিমতো উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবজাতির ইতিহাসে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম যখন ছিল এবং যখন প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার বেশি ছিল তখন বর্জ্য পদার্থের বৃদ্ধিও তুলনামূলকভাবে কম ছিল। শিল্পায়ন এবং নগরায়ণের সাথে, বর্জ্যের পরিমাণ এবং জটিলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর বর্জ্য বা আবর্জনার বিরূপ প্রভাব কমানোর জন্য কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোসহ পানি, মাটি ও খাদ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ ছাড়া, পৃথিবীর বিভিন্ন সম্পদ রক্ষা করা, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা এবং টেকসই উন্নয়নের প্রচার-প্রসারও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম লক্ষ্য।

তিনি বলেন, ওয়েস্ট ডাম্পিংয়ের বিকল্প হিসেবে ওয়েস্ট টু এনার্জি অথবা এনার্জি ফরম ওয়েস্ট পদ্ধতি বিশিষ্টতা অর্জন করেছে। কারণ এ ক্ষেত্রে, কঠিন বর্জ্য পদার্থ পুড়িয়ে এর পরিমাণ কমিয়ে তাপ, বাষ্প এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যেতে পারে। চীন এবং জাপানসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলো বর্জ্য থেকে শক্তি ওয়েস্ট টু এনার্জি পদ্ধতি ব্যবহারে বিশ্ব উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এজন্যই বর্জ্য থেকে শক্তির ক্ষেত্রের পরিধি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা বর্জ্য থেকে শক্তি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা প্রদান করে। কারণ, এই পদ্ধতিটি ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কঠিন বর্জ্য পদার্থ কমানোর কাজ করে।
আইআইএলডির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে উন্নয়নের পথে এক ধাপ এগিয়ে নিতে চাইলে অন্যান্য পদক্ষেপ বা কর্মসূচিগুলোর মধ্যকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। আর যদি বর্জ্য থেকে ইলেকট্রিসিটি উৎপাদন করা যায় তাহলে আমাদের শহরে বিদ্যুতের যে ঘাটতি রয়েছে তার অনেকাংশই স্বল্প খরচ পূরণ করা যাবে। আর বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম রোল মডেল হলো জাপান। এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশকে জসহযোগিতা করলে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

বৈঠকে অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন বলেন, ঢাকা নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাহলে শহুরে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। আর জাপান যদি আমাদের সিটি করপোরেশনের সাথে কাজ করে তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থায়নের বিষয়টিও সহজ হবে।

বর্জ্য
Comments (0)
Add Comment