‘তুমি জানো, আমি কে?’ । মোহীত উল আলম
`তাজা’ নামক একটি চায়ের ব্র্যান্ডের টিভির বিজ্ঞাপনী চিত্রের শিরোনামে উল্লেখিত প্রশ্নটি ব্যবহার করা হয়েছে: ‘তুমি জানো, আমি কে?’ একটি সুবেশধারী লোক হেল্প ডেস্কে বসা তরুণীকে এ কথা বলে ধমকে ওঠেন। তরুণীর সামনে এক কাপ গরম তাজা ব্যা ন্ডের চা। তিনি তা`তে এক চুমুক দিতেই তাজা চায়ের গুণে তাঁর ‘দেমাগকা বাতি’ খুলে যায়। পরক্ষণে তিনি পাবলিক কম্যুটারের মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে উঠলেন, ‘সম্মানিত ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গণ, এ ভদ্রলোক জানেন না তিনি কে, কেউ তাঁর পরিচয় জেনে থাকলে দয়া করে জানাবেন।’ অর্থাৎ, ভদ্রলোকের প্রশ্নটিতে যে অহংবোধ ছিল সেটিকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে তরুণী একই প্রশ্নকে সাহায্য চাওয়ার অবস্থানে নিয়ে আসলেন। অর্থাৎ, একই প্রশ্নের দু’তরফা পরিবেশনার কারণে ভদ্রলোক মুহূর্তেই একজন পরিচিতি-কর্তৃত্বের অহংকারী দাবিদার থেকে হয়ে গেলেন পরিচিতি-সন্ধানরত একজন ব্যাকুল প্রার্থী।
বিজ্ঞাপনটির এই উক্তিটি নিছক প্রোডাক্টের প্রমোশন্যাল উক্তি হলেও, এটি উঠে আসছে সমাজে বিরাজিত ব্যক্তির ‘পরিচিতি-সংকট’ নামক সামাজিক ও মনস্তাত্বি, ক গভীর স্তর থেকে। শুধু আমাদের সমাজে নয়, পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রীয় সমাজে এই ‘পরিচিতি-সংকট’ কমেবেশি বিরাজিত। কিছুদিন আগে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে ডাক্তার বনাম পুলিশের মধ্যে ‘পরিচিতি-পত্র’ নিয়ে যে বচসা হয়েছিল, এবং যেটির ভিডিও বড়সড় রকমের ভাইরাল হয়ে চতুর্দিকে করোনার মতো ঢেউ তুলেছিলো, সেটির তলায়ও কিন্তু ছিল এই পরিচিতি সংকট: ‘তুমি জানো, আমি কে?’
এর পর গত কয়েকদিন ধরে দেশের একটি প্রথম সারির শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে জনৈক তরুণীর আত্মহত্যার পেছনে প্ররোচক হওয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার একটি আদালতে ৩০৬ ধারায় যে মামলা হয়েছে, সেটিকে আদালত আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে ফেইসবুক এবং গণমাধ্যমে এটা সর্বোচ্চ মনোযোগকারী বিষয় হিসেবে প্রতীয়মান হওয়ায়, আমার মনে হলো যে এই ঘটনার সঙ্গেও ‘তুমি জানো, আমি কে?’ বা পরিচিতি সংকট স্তরীভূত হয়ে আছে।
ঘটনাটি কোন পর্যায়ে কী ধরনের পরিণতি থেকে একজন অনূঢ়া যুবতীর নিজের প্রাণ হরণ করার মতো অবস্থা হলো বা তাকে কোন হত্যা করা হলো কীনা, এগুলি তদন্ত চূড়ান্তভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না, কিংবা তদন্ত শেষে আদালত কী রায় দেয়, সেটুকু না দেখা পর্যন্ত আগাম কিছু বলা যাবে না, কিন্তু এটা আঁচ করা যাচ্ছে যে শিল্পপতির সঙ্গে যুবতীর সম্পর্কের মধ্যে ‘পরিচিতি-সংকট’ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। অনুমান করি, শিল্পপতি বলতে চেয়েছিলেন, ‘তুমি জানো, আমি কে?’ কারণ তিনি বাংলাদেশের সেরকম একটি বড় প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ যাঁদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি সম্মোহন জাগানোর মতো। আর যুবতী নিজেই যেহেতু মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে তাঁরও সম্ভ্রম-জাগানিয়া একটা পরিচয় ছিল। কিন্তু দু’জনের মধ্যে যদি অনুমান করি যে পরিচিতি নিয়ে ঠোকাঠুকি হয়েছিল তা হলেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিপত্তির সঙ্গে যুবতীর শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় বর্তমান সমাজের বাস্তবতার নিরিখে পেরে ওঠার কথা নয়। তা হলে বলা যায়, যুবতীর পক্ষ থেকে এই চিন্তাটা বড় হয়ে উঠেছিল কিনা যে একটি শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যদি বিবাহের মাধ্যমে সংলগ্ন হওয়া যায়, তা হলে ‘তুমি জানো, আমি কে?’ এই পরিচিতি তাঁর হবে যে তিনি অমুক পরিবারের পুত্রবধূ। আবার এ পর্যন্ত গণমাধ্যমের বরাৎ দিয়ে যতটুকু জানা গেছে, তার সত্যমিথ্যা সম্পর্কে না জেনেও বলছি, শিল্পপতির অভিভাবক শ্রেণি থেকে আপত্তি থাকায় তাঁদের এফেয়ারটি বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে পারছিল না।
কিন্তু পুলিশ বলছে, যুবতী যে ফ্ল্যাটে একা থাকতেন সেখানে শিল্পপতির যাতায়াত ছিল বলে পুলিশ জেনেছে। এবং পুলিশ এও বলছে যে যুবতীর শয্যাকক্ষে ঝোলানো কিছু ছবিতে তাঁদের যুগল ছবি অনেকটা বিবাহিত দম্পতির ফ্রেইমে আবদ্ধ ছিল। এ ছাড়া যুবতীর ছয়টা ডাইরি পুলিশের জিম্মায় আছে। যুবতীর বড় বোনের একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে দেখলাম, তিনি বলছেন, যেদিন যুবতী তাঁদেরকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসতে বারবার অনুরোধ করছিলেন, সেদিন তিনি খুব অস্থির ছিলেন, এবং বারবার ইংগিত দিচ্ছিলেন যে তাঁরা তাড়াতাড়ি গিয়ে না পৌঁছালে ভয়ংকর একটা কিছু ঘটে যেতে পারে। বলছিলেন, শিল্পপতি তাঁকে বিয়ে করবে না, শুধু ভোগ করবে। বড় বোন ঢাকায় সেদিনই বিকালে পৌঁছে তালা ভাঙ্গিয়ে ঘরে ঢুকে বোনের লাশ সিলিংএর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখতে পান। একটি ইংরেজি পত্রিকায় সংবাদ দিয়েছে যে বোনের পা বাঁকা অবস্থায় বিছানার ওপর স্থিত ছিল বলে জনৈক প্রতক্ষদর্শী বলেছিল। অর্থাৎ, আত্মহত্যার বাইরেও অন্য কিছুর আলামৎ দেয়। অবশ্য, পোস্ট-মর্টেম রিপোর্টে বলছে যে যুবতীর মৃত্যু হয়েছে আত্মহত্যা থেকে। কিন্তু প্ররোচনার সম্ভাবনার কথাতো রিপোর্টে আসবেনা, আর সেটাই হলো তদন্তের ব্যাপার।
হ্যামলেট নাটকের নায়িকা ওফেলিয়ার সঙ্গে আলোচ্য যুবতীর চরিত্রগত খানিকটা মিল পাওয়া যায়। ওফেলিয়াকে তাঁর বাবা ও ভাই বোঝালেন যে হ্যামলেটের সঙ্গে তাঁর (ওফেলিয়ার) প্রেম কখনো বিবাহের দিকে এগুবে না। কারণ কি? বাবা পোলোনিয়াস বোঝালেন, “For lord Hamlet, / Believe so much in him, that he is young, / And with a larger tether may he walk / Than may be given you” (1.3.129-32). আমার অনুবাদ: “হ্যামলেট, বুঝতেই পারো, হলো যুবরাজ, তদুপরি যুবক, তার বিচরণের দড়ি অনেক লম্বা, তোমার ওসবের কিছু নেই।” এর পূর্বে ওফেলিয়ার ভাই লেয়ার্টিস তাকে বলেছে, হ্যামলেট ওফেলিয়াকে প্রকৃত ভালো না বেসে শুধু শারীরিক আকর্ষণে তার দিকে নজর দিতে পারে, এবং ওফেলিয়া যদি এ ছলনায় পা দেয় তা হলে সে হ্যামলেটের অনিবৃত লালসার কাছে তার পরম সম্পদ সতীত্ব হারাতে পারে: “or your chaste treasure open / To his unmastered importunity” (1.3.34-5).
কথিত যুবতী শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারল কী না যে তিনি বিয়ের ধোঁকায় পড়ে আসলে লালসার শিকার হয়েছেন, এবং সে মনোবেদনা থেকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত হলেন, নাকি তিনি মানসিকভাবে আত্মহত্যাপ্রবণ টাইপের ব্যক্তি ছিলেন–এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে তদন্ত শেষ হবার পরে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
এখন এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিকভাবে যে উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটি হলো এরকম: শিল্পপতি যেহেতু অপার প্রভাবশালী তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত এগুবে কী না, বা আদালতে মামলা শেষ পর্যন্ত গড়াবে কীনা? তার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্টমন্ত্রী এ ব্যাপারে একাধিকবার বলেছেন, অপরাধী যেই হোক না কেন, দোষী সাব্যস্ত হলে সেই অপরাধীকে বিচারিক আদালত যে শাস্তি দেয়, সেই শাস্তিই পাবেন।
পবিত্র সুরা নিসার ১৩৫ আয়াৎটি অনুবাদ করলে এরকম দাঁড়ায়: “তোমরা যারা বিশ্বাসী, ন্যায় বিচারের জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়াও, আল্লাহ্র কাছে স্বাক্ষী হিসাবে, তাতে যদি নিজের বিরুদ্ধে, বা নিজের পিতামাতার বিরুদ্ধে, অথবা আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে যেতে হয়, যাও। তুমি ধনী হও গরিব হও, আল্লাহ্ উভয়ের রক্ষাকারী। তোমার মনের লালসাকে অনুসরণ করো না, যদি তা’তে তুমি দিগভ্রান্ত হও, এবং তুমি যদি বিচারকে বিকৃত করো, তা হলে জেনে রাখো, আল্লাহ্ তোমার সব কাজের হিসাব রাখছেন।”
বলাবাহুল্য আয়াৎটির গুরুত্ব বিচারকারীদের জন্য প্রবল। রবীন্দ্রনাথ বহু ঘটনার সাক্ষাৎ অভিজ্ঞ হয়ে এমন যন্ত্রণাকর চরণটি লিখেছিলেন: “বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে।” তবে আধ্যাত্মিক বিচারিক ধারণার সঙ্গে মর্তের আদালতের লক্ষ্যগত মিল বা সত্যের উন্মোচনগত মিল থাকলেও পদ্ধতিগত পার্থক্য আছে। আদালতের বিচারিক পরিসীমার মধ্যে আনীত তথ্য-প্রমাণ, স্বাক্ষী-সাবুদের ভিত্তিতে শুধু নয়, ওকালতীর জোরে স্থাপিত ব্যাখ্যা সংযোজিত হয়ে একটা সুষ্পষ্ট প্রামাণিক অবস্থানে গেলেই কেবল আদালত নির্দিষ্ট রায় দেয়। এজন্য কোন অপরাধ সংঘটিত হলে জনমনে যেমন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয় যে এই ধরো, কাটো, মেরে ফেল ইত্যাদি, ফৌজদারী আদালতের কার্যপরিধি মোটেও সেই রকম নয়, এখানে সবকিছুই প্রমাণাদি ভিত্তিক। এজন্য এখানে থেকে রায় বের হতে সময়ও লাগে প্রচুর।
তারপরও রবীন্দ্রনাথের হতাশার সঙ্গে যদি আমাদের মৌলিক প্রশ্নটির যোগ করি, ‘তুমি জানো, আমি কে?’, তা হলে এই সামাজিক উদ্বেগ যে আদালতের চৌহদ্দির মধ্যে প্রভাব ফেলছে না, তার নিশ্চয়তা কী? আইনের চোখে সবাই সমান–এইটি আসলেই সত্য না কি কেবলই একটি আপ্তবাক্য, সে ভয়টি জনমনে আছে। রাজনৈতিক তির্যক ভঙ্গীর জনপ্রিয় ইংরেজ লেখক জর্জ অরওয়েল তাঁর পলিটিক্যাল স্যাটায়ার “এ্যানিম্যাল ফার্ম” উপন্যাসে মজা করে লিখেছিলেন, “অল আর ইকুয়্যাল, বাট সাম আর মোর ইকুয়্যাল দ্যান আদারস।” বাংলা: সবাই সমান, তবে কেউ কেউ আরো বেশি সমান। সমান বলতে তিনি যাঁরা আসলে সমানের ওপরে তাঁদেরকে বোঝাচ্ছিলেন।
‘তুমি জানো, আমি কে?’ প্রশ্নটি তা হলে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিপরীতমুখি সমন্বয়ের ওপর। মানুষকি তাঁর বংশ পরিচয়, আভিজাত্য, ক্ষমতা ইত্যাদি দিয়ে পরিচিত, নাকি তার নিজস্ব যোগ্যতা দিয়ে পরিচিত? রসিক গল্পকার নারায়ণ গঙ্গ্যোপাধ্যায়ের একটি শিশুতোষ গল্পের শুরুতে পন্ডিত মহাশয় ক্লাসে নতুন একটা ছেলেকে দেখে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘তোর নাম কী রে?’ ছেলেটি উত্তর দিল, ‘বংকু পালের ভাগ্নে আমি।’ বংকু পাল ছিলেন গ্রামের মাতব্বর আর স্কুল কমিটির চেয়্যারম্যান। ছেলেটি কে, তার চেয়েও বড় কথা ছেলেটি কার কে? আমাদের সামাজিক মনস্তত্বেস্ও এই ভয়টি জাগরুক যে আইনের চোখে কেউ কেউ কোনো বংকু পালের ভাগ্নে বলে পরিচিত হচ্ছে কী না।
মানুষের কোন পরিচয়টি বড়, সে কোন বংশের, কোন জাতের, কোন পেশার, নাকি সে ব্যক্তিগতভাবে কোনো জাত-পরিচয় ছাড়া নিজের কী যোগ্যতা আছে তাই দিয়ে পরিচিত হবে!
রবীন্দ্রনাথের কবিতা “কর্ণকুন্তী সংবাদ”-এ এই প্রশ্নটির খানিকটা প্রতিফলন আছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে জাহ্নবী নদীর তীরে ধ্যানরত কুরু সেনাধ্যক্ষ কর্ণকে কুন্তী বললেন, কর্ণ আসলে তাঁরই গর্ভজাত সন্তান, ফলে কর্ণ যদি কৌরববাহিনী ছেড়ে পান্ডবদের সঙ্গে যোগ দেন, তা হলে যুদ্ধের আর প্রয়োজন হবে না। কর্ণ বরঞ্চ তাঁর সৎ ভাই পঞ্চ পান্ডবদের যথাক্রমে যুধিষ্টির, ভীম, অর্জুন, নকুল আর সহদেবের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সম্মান নিয়ে জীবন কাটাতে পারবেন। কিন্তু কুন্তীর আসল উদ্বেগ ছিল যে ভবিষ্যৎ পড়তে পেরে তিনি জেনেছিলেন যে অর্জুনের হাতেই কর্ণের মৃত্যু হবে, অর্থাৎ সৎ ভাইয়ের হাতে সৎ ভাই নিহত হবেন, সেটি ঠেকানো। কিন্তু সে কথা চেপে রেখে কর্ণকে বললেন যে পান্ডবদের পক্ষে থাকলে কর্ণের পরিচিতিও সমৃদ্ধ হবে। কর্ণ রাজি হয় না, বলেন: “মাত:, সূতপুত্র আমি, রাধা মোর মাতা, তার চেয়ে নাহি মোর অধিক গৌরব। / পান্ডব পান্ডব থাক, কৌরব কৌরব। / ঈর্ষা নাহি করি কারে।”
কর্ণ তাঁর সূতপুত্রের পরিচয়টি ধরে রেখে ব্যক্তিগত সম্পদ বীরের যোগ্যতাকে বড় করে দেখে তাঁর মায়ের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, “মাত: করিয়ো না ভয়। / যে পক্ষের পরাজয় / সে পক্ষ ত্যাজিতে মোরে কোরো না আহ্বান । / শুধু এই আর্শীবাদ দিয়ে যাও মোরে, / জয়লোভে যশোলোভে রাজ্যলোভে, অয়ি, / বীরের সদ্গতি হতে ভ্রষ্ট নাহি হই।”
১৭৮৪ সালে আমেরিকার অন্যতম বিজ্ঞানী ও মানবতাবাদী বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন “এডভাইস টু সাচ এ্যাজ উড রিমুভ টু এ্যামেরিকা” শীর্ষক একটি রচনা ছাপালেন যেটাতে তিনি কারা আমেরিকায় অভিবাসন করার জন্য উপযুক্ত সে মর্মে লিখলেন, আমেরিকায় ‘জন্মসূত্র’টা ইউরোপের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়, এখানে অভিবাসনকারীদের জন্য প্রশ্ন এটি নয় যে ‘হোয়াট ইজ হি’ কিন্তু ‘হোয়াট ক্যান হি ডু?’
অর্থাৎ, ফ্র্যাংকলিন বললেন যে ইউরোপে যেমন ‘মানুষটি কে?’ (বংকু পালের ভাগ্নে) প্রশ্নটি বড়, আমেরিকায় ‘মানুষটি কি?’ প্রশ্নটি বড়। অর্থাৎ, মানুষটি কী কাজ করতে পারে সেটিই তার পরিচয়।
কাজেই ‘তুমি জানো, আমি কে?’ প্রশ্নটির মধ্যে ইউরোপিয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত ‘মানুষটি কে’ প্রশ্নটিই প্রাধান্য পেয়েছে। এটার সামন্তবাদী প্রেক্ষাপট থেকে আমরা এখনো মুক্ত হই নি বলে আমাদের সমাজে একই রকম ঘটনার স্থান কাল পাত্র ভেদে মূল্যায়ণের তারতম্য হয়। যদিও শেষ পযর্ন্ত মনুষ্য সমাজে সবকিছু একটি আপেক্ষিক ব্যাপারে পরিগণিত হয় বলে, সব কিছু তাই স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যাত হতে পারে বা হয়।
=শেষ=
লেখক : ডিন, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
৩০ এপ্রিল ২০২১