বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার এক দেশ – হীরেন পণ্ডিত

0

২০৩০ এজেন্ডা অর্জনের মাধ্যমে কাউকে পিছনে না রেখে টেকসই উনয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে নতুন বছর ২০২২ সালের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ বছর একাধিক মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ ১০টি মেগা প্রকল্প ও ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। এই ১০টি মেগা প্রকল্প ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকারের ১০টি মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বন্দর এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ। এ বছরই এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ও উদ্বোধন করা হবে।

এরই মধ্যে, দীর্ঘকালের লালিত স্বপ্নের মেট্রো রেলের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয় ২৯ আগস্ট, ২০২১। পরবর্তীতে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলে ১২ ডিসেম্বর ২০২১ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলে। তবে এবারের বিজয় দিবস থেকে যাত্রী চলাচল শুরু হবে। ৪১তম স্প্যান বসানোর সাথে সাথে ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামোটি ১০ ডিসেম্বর, ২০২০-এ দৃশ্যমান হয়। স্বপ্নের পদ্মা সেতুটি এই বছরের ৩০ জুন (২০২২) জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার কথা রয়েছে। অন্যদিকে, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশের বেশি। বিমানবন্দও থেকে বনানী হয়ে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত অংশটি চলতি বছরের (২০২২) ডিসেম্বরের মধ্যে কাস্টম-বিল্ট করা হবে।

এদেশের কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্য, দুর্দশা ও দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন যাপন করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এই অবহেলিত ও আজন্ম লালিত স্বপ্নের দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এদেশের মানুষের কাছে তিনি একজন আপোষহীন, নির্ভীক, সাহসী ও সহানুভূতিশীল নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। বাংলার সাধারণ মানুষ তাঁকে নেতা হিসেবে মেনে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কঠিন পথ চলা শুরু করে। তখনই বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের কাছে বাংলার অপার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এখানে লুকিয়ে আছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। চাইলে এখানে সোনা ফলানো সম্ভব। বাংলার অধ্যবসায়ী ও উদ্যোগী মানুষ চেষ্টা করলে মেধা ও শ্রমের যথাযথ ব্যবহার করে সোনার দেশ গড়ে তোলা সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথ পাড়ি দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছে।
অনেক মেহনতি, সংগ্রামী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করে, নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখে এদেশের মানুষ বেঁচে থাকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সোনার বাংলা গড়ার অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সব পরিকল্পনা তিনি ধীরে ধীরে সাজিয়ে নেন। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আধুনিক প্রযুক্তি, সব কিছুর অপূর্ব মেলবন্ধনে নতুন নতুন পরিকল্পনা, ভাবনা ছিল তাঁর মনে। যার বাস্তবায়নও শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর উন্নয়ন আবার থমকে যায়।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তখন অনেকেই এর অর্থনৈতিক টিকে থাকার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। কিন্তু সেই দেশেরই কোনো অর্থনৈতিক বা সামাজিক সূচক নেই যা অগ্রগতি করেনি এমনকি সবচেয়ে বড় সমালোচকরাও এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য। বিশ্ব যা ভাবতে পারেনি বাংলাদেশ তা করেছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিল্প।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য, দক্ষ, বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার গতিশীল ও উদ্যমী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে আমূল বদলে দিয়েছে। দেশ টেকসই উনয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল, অনুন্নত, নড়বড়ে অবস্থা থেকে শক্তিশালী অবস্থায় চলে গেছে। প্রতিদিন প্রচলিত অবকাঠামোর আধুনিক রূপান্তরের নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে। পূর্বে অবহেলিত সেক্টর বা ব্যবসায় একটি নবজাগরণ ঘটেছে। অপার সম্ভাবনার মুষ্টিমেয় এদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে এবং আগ্রহী করে তুলছে। অবহেলার কারণে দীর্ঘদিন ধরে লালিত সেই সম্ভাবনাময় খাতগুলো ক্রমেই জেগে উঠছে। উন্নয়নের পথিকৃৎ ও উন্নত বাংলাদেশের নেত্রী শেখ হাসিনাকে সব সময়ই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সেসব সম্ভাবনাকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সময়ে সময়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান। ফলে সম্ভাবনার নতুন নতুন খাত গড়ে উঠছে। সম্ভাবনাময় নতুন খাতগুলো সমৃদ্ধি অর্জনে অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশের গল্প এবং সম্ভাবনা চিত্তাকর্ষক। দেশ খাদ্য উৎপাদনে পর্যাপ্ততা অর্জন করেছে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ তার নারীদের ক্ষমতায়ন করেছে এবং শিশুমৃত্যু কমিয়েছে। বাংলাদেশের গল্পটি হল কিভাবে দেশটি সমস্ত সম্ভাবনাকে পরাজিত করেছে এবং শক্তিশালী পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য বিলিয়ন ডলার নিজস্ব-অর্থায়ন করেছে। গল্পটি এর মেগা-স্ট্রাকচারের ক্রমবর্ধমান পোর্টফোলিও এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ এবং দ্বিতীয়টির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। বাংলাদেশের গল্পটি লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী অভিবাসন নিয়ে যারা বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াচ্ছেন। শুধু ২০২০ সালেই বাংলাদেশি প্রবাসীরা ২০ বিলিয়ন ডলার জাতীয় কোষাগারে পাঠিয়েছেন।

বাংলাদেশের একটি ক্লাসিক ঋণ-নির্ভর, ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে একটি সম্মানজনক প্রবৃদ্ধির হার এবং একটি আত্মবিশ্বাসী ভবিষ্যতের মধ্যে বিবর্তন কোন অলৌকিক ঘটনা নয়। এই বিবর্তন সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টির কারণে। তিনি দেশটিকে বেশিরভাগ সাহায্য-নির্ভর দেশ থেকে এমন একটি দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন যা তার সম্পদের উপর নির্ভর করে। এককভাবে, তিনি বাংলাদেশকে ডিজিটাল যুগে, পারমাণবিক শক্তি যুগে, মহাকাশ প্রযুক্তির যুগে নিয়ে গেছেন। তার স্থির এবং বাস্তববাদী নেতৃত্বে, দেশ সফলভাবে সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা মোকাবেলা করেছে এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী তরুণ দেশ হিসেবে বিবেচিত। এটি তার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালন করে, আন্তর্জাতিক চুক্তি পালন করে এবং সকল মানুষের সাংস্কৃতিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সোনার বাংলা গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চললে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উনয়ন ও আধুনিকীকরণ এবং নাগরিকদের সুবিধার্থে কাজ করছে। সেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কাজের পদ্ধতি, শিল্প, বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন ডিজিটাল পদ্ধতিতে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিকদের কাছেও পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সমস্ত নাগরিক পরিষেবা এবং জীবিকার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি একটি বিশ্বস্ত মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করেছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য জাতিসংঘের ই-গভর্নেন্স ডেভেলপমেন্ট সূচকে শীর্ষ ৫০টি দেশের মধ্যে থাকার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান রেট প্রোগ্রাম সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় এনেছে। ৫,০০০ এর বেশি ইউনিয়ন সংযোগের আওতায় এসেছে। ৫জি চালু করা হয়েছে তবে ২০২২ সালের মার্চ থেকে বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে।

তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে তরুণরা ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কিছু বড় অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৪১তম। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পঞ্চম দ্রুত বর্ধনশীল দেশ। এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ ২০৩৬ সালে বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হতে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের কথা শোনা যায়। মূলত এই দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছিল একাত্তরের যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারি। কারো কাছে মাথা নত করব না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বারবার যে সমস্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বলেছেন, বিশ্বসভায় আমরা আমাদের মহিমায় মহিমান্বিত হব, আমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলব এবং বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে হাঁটব। এদেশের মানুষের জন্য কদম। এভাবেই এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর গড়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন।

তিনি ক্রমেই সাজিয়ে তুলেছিলেন স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার সব পরিকল্পনা। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আধুনিক প্রযুক্তি সবকিছুর অপূর্ব সমন্বয় ঘটাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা, চিন্তা-ভাবনা ছিল তার মনে। যার বাস্তবায়নও শুরু করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে। যার প্রায় সবই দারুণ সম্ভাবনাময় হিসেবে সুফল দিতে শুরু করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, সেই দূরদর্শী, অদম্য, বিচক্ষণ, জনদরদি চিরসংগ্রামী মানুষটিকে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকের নির্মম বুলেট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছিল, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল অফুরন্ত সম্ভাবনার আধার হিসেবে। সেই মহান নেতার আকস্মিক বিদায়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ অনিশ্চয়তার মাঝে ডুবে গিয়েছিল। উজ্জ্বল সম্ভাবনাগুলো আবার অন্ধকারে তলিয়ে যেতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেই অনিশ্চিত অন্ধকার থেকে বাংলাদেশ আবার আলোর পথ ধরে চলার দিশা খুঁজে পায় বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে। তার সুযোগ্য, দক্ষ, বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার গতিশীল উদ্যমী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে আমূল বদলে দিয়েছে। টেকসই উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এদেশ। দুর্বল, অনুন্নত, নড়বড়ে অবস্থা থেকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। প্রচলিত অবকাঠামোর আধুনিক রূপান্তর সম্ভাবনার নতুন নতুন দিক উন্মোচন করছে প্রতিদিন। যেসব খাত কিংবা ব্যবসা আগে অবহেলিত অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে চলছিল সেগুলোতে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।

অমিত সম্ভাবনার হাতছানি এদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত, আগ্রহী করে তুলছে। অবহেলায়, অযত্নে লালিত সেই সম্ভাবনাময় খাতগুলো ক্রমেই জেগে উঠছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ, দপ্তর, মন্ত্রণালয়কে সময়ে সময়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। ফলে সম্ভাবনার নতুন নতুন খাতের বিকাশ ঘটে চলেছে। সম্ভানাময় নতুন নতুন খাতগুলো বাংলাদেশের সমৃদ্ধি অর্জনে, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বেশ শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের মানুষ কোনোভাবেই অক্ষম, দুর্বল, মেধাহীন নয়। তারা অনেক পরিশ্রম করতে পারে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ যারা এর আগে বেকারত্ব, দারিদ্র্য, আর অসহায়ত্বের বেড়াজালে নিজেদের বন্দি করে রেখেছিল, তারা এখন নিজের মেধা, বুদ্ধিমত্তা, শক্তি, সাহস, পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সম্ভাবনার নতুন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নিজেই নিজের ভাগ্য নতুনভাবে গড়ে তুলছেন। এভাবে সবার সম্মিলিত উদ্যোগে পাল্টে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকা, জনপদের চিত্র। সম্ভাবনার উজ্জ্বল চমক দ্যুতি ছড়াচ্ছে দেশজুড়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টা এবং দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য রকমের। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৪১তম স্থানে উঠে এসেছে। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এখন পঞ্চম। এককালের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ ২০৩৫ সালে হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে একটি ভিক্ষার ঝুলি বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনেও অভূতপূর্ব সাফল্য দেখা গেছে। স্বাধীনতার সময়ের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি খাদ্যশস্য এখন উৎপাদন করতে পারছে দেশ। শুধু তাই নয়, বৈদেশিক মদ্র্রার রিজার্ভও অনেক বেড়েছে। এটাই প্রমাণ হয়- বাংলাদেশ কখনই ভিক্ষার ঝুলি ছিল না। ভিক্ষার ঝুলির তকমা লাগা সেই বাংলাদেশের গত ৫০ বছরে সবচেয়ে বড় অর্জন হলো, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরণ।

হীরেন পণ্ডিত : প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো, বিএনএনআরসি

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.