সুস্থ্য হয়েও ২৬ বছর হাসপাতালেই সাঈদ !

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : ঢাকার মগবাজারের ভুল ঠিকানায় ভর্তি হওয়া সাঈদ দর্শনার্থীদের দেখলে ছুটে আসত আমাকে আমার বাবা মার কাছে নিয়ে যান, সেই সাঈদ বয়সের ভারে অসুস্থ, এখন হুইল চেয়ারে বসে থাকে, সামনে এসে কোন কথা বলতে পারে না শুধু হাউ মাউ করে কাঁদে আর কিছু বলতে চায় অসপ্সট শোনা যায় বাবা মার কাছে যাব।

সাইদের মতো ঠিকানা জটিলতায় সুস্থ্য হয়েও বাড়িতে যেতে পারছে না ৮ রোগী বাড়ির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হাসপাতালেই মারা গেছে চার রোগী।

প্রায় ২৬ বছর হাসপাতালে ভর্তি থাকা ঢাকার মগবাজার এলাকার সাইদ হোসেন অসুস্থ্য শুধু আও আও করে বলতে শোনা যায় মার কাছে যাব।সাইদের মতো দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি থাকা জাকিয়া সুলতানা সুস্থ্য হয়েও যেতে পারছে না নিজ বাড়িতে । জাকিয়া সুলতানা জানায় বাবা মা ভাই বোনদের কথা খুব মনে পড়ে । বাবা মার কথা মনে পড়লেই বুঁক ফাঁটা কান্না আসে কিন্তু কি করব কত স্যার কে বলি হাতে পায়ে ধরি কিন্তু বাড়িতে নিয়ে যায় না ।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় মহামান্য আদালতের রিটপিটিশন নং ১০৮৯৬/২০১৪ মোতাবেক ১৮/০৮/২০১৯ ইং তারিখে ১৫ জন রোগীর সঠিক ঠিকানা নির্ণয় পূর্বক শারীরীক ও মানসিক সুস্থ্যতা স¦াপেক্ষে আইনানুগ অভিভাবকের নিকট হস্তান্তরের নির্দেশ প্রদান করেন ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় তারা মহামান্য আদালতের নির্দেশনার ১৫ জন সহ আরো ৮ জন সর্বমোট ২৩ জন ঠিকানা জটিলতা রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত ১১ জন রোগীকে নিজ ঠিকানায় পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। আরো ৮ জনকে সঠিক ঠিকানা খুঁজে তাদের পরিবারের নিকট পঠানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে, ইতিপূর্বে জাতীয় পত্রিকায় ছবিসহ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সঠিক ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঠিকানা খুঁজে না পাওয়া চার জন রোগী মারা গেছে হাসপাতালেই ।

সুস্থ্য হয়েও যেতে পারছে না নিজের বাড়িতে এমন রোগীর মধ্যে রয়েছে (১) ঢাকার মগবাজার এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে ২২/০৭/১৯৯৬ সাল থেকে ভর্তি রয়েছে সাইদ হোসেন নামে এক রোগী, তিনি সুস্থ্য হয়েও ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ার যেতে পারছে না স্বজনদের কাছে । সাইদ হোসেন জানালেন বাবা মার কাছে যেতে ইচ্ছে কওে কিন্তু কেউ নিয়ে যায় না ।

এছাড়া (২) ১৭ জুলাই ২০০৯ ভর্তি হওয়া জাকিয়া সুলতানা, (৩) ২৫ নভেম্বর ভর্তি হওয়া শিপ্রা রানী রায় (৪) ১৪ অক্টেবর ১৯৯৯ ভর্তি হওয়া অনামিকা বুবি, (৫) ১ এপ্রিল ১৯৮৯ সালে ভর্তি হওয়া নাজমা নিলুফার, (৬) ৯ আগষ্ট ২০০০ সালে ভর্তি হওয়া গোলজার বিবি, (৭) ৮ মে ১৯৯৯ সালে ভর্তি হওয়া শাহানারা আক্তার ও (৮)১৪ নভেম্বর ২০০৯ থেকে ভর্তি রয়েছে নাঈমা চৌধুরী ।

বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকাতে থাকতে হাসপাতালেই মারা গেছে চার রোগী ৭ আগষ্ট ২০১৫ সালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছে মাহবুব আনোয়ার, ৮ আগষ্ট ২০২৫ সালে হাসপাতালের ১৪ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্য জনিত কারণে মারা গেছে ছকিনা , ২১ নভেম্বও ২০১৮ সালে হাসপাতালের ১৫ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্য জনিত কারণে মারা গেছে সাহিদা, সম্প্রতি গলায় খাবার আটকে মারা গেছে বদিউল ।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ শাফকাত ওয়াহিদ কালের কন্ঠকে বলেন আমরা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দিয়েছি কিন্তু ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ায় তাদের কে আমরা বাড়ি পাঠাতে পারছি না । ফলে নতুন রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে ৮ টি শয্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। আমরা দ্রুত এসব রোগীকে তাদের পরিবারের কাছে তুলে দিতে চাই সেজন্য আমরা বিভিন্নভাবে রোগীদের সঠিক ঠিকানা ও অভিভাবক খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।

দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্র ‘পাবনা মানসিক হাসপাতাল’। পাবনা শহর থেকে তিন কি: মি: দূরে হেমায়েতপুর ইউনিয়নে ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই জমিদার বাড়িতে তৎকালীন পাবনা জেলার সিভিল সার্জন ডা : মোহাম্মদ হোসেন গাংগুলী এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন । প্রতিষ্ঠার বছরেই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমান শয্যা সংখ্যা ৫০০।

 

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.