দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরানোই ছিলো শেখ হাসিনার বড় চ্যালেঞ্জ

0

হীরেন পণ্ডিত : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতকদের ষড়যন্ত্র আর নিরাপত্তার অভাবে পরিবারের সবাইকে হারানোর পরও দীর্ঘ ৬ বছর দেশে ফিরতে পারেননি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

নানা প্রতিকূলতার মাঝেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এক সময় চাঙা হয়ে ওঠেন; নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে ওঠেন। তখন শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই নেতা-কর্মীরা কাউন্সিলের মাধ্যমে তাঁকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি ফিরে আসেন।

১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে বাংলাদেশকে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে আনা এবং পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অভিযাত্রায় মনোনিবেশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্যতা, ন্যায় বিচার, উন্নয়নও অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা একিট কঠিন বিষয় ছিল।

গণতন্ত্র, রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সার্বিক অবকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। আর শেখ হাসিনার লক্ষ্য আপামর মানুষের মুক্তি। যেন তার বাবার স্বপ্নেরই প্রতিধ্বনি। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরব ও অহঙ্কারের বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই বাংলাদেশে মানুষ এগিয়ে চলছে। আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিমাপে মুক্তিযুদ্ধের একটি ব্যাপক এবং বহুমাত্রিক রূপ আছে। এই চেতনা আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করছে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা হয়েছিল। আর সেই চেতনা পুনরুদ্ধারের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন শেখ হাসিনা। দেশপ্রেমিক শাসক আর জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার লালন করার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রকাশ পায়। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টি অমীমাংসিত আছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের পরও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ যেভাবে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে তারই-বা উত্তরণ ঘটতো কি? এমন অজস্র প্রশ্নের উত্তর একটাই- শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার কারণেই আজ গণতন্ত্রের মুক্তি মিলেছে, উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রার পথে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা সবচেয়ে দুঃসময়ে দলের ঐক্যের প্রতীক হিসাবে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রামে সর্বদা লড়াই করেছেন। তিনি বারবার মৃত্যুর দ্বার থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে একটি জনপ্রিয় দল হিসাবে ক্ষমতায় এনেছেন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

যুদ্ধোত্তরকালে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা সদ্য স্বাধীন দেশের বাস্তবতায় ছিল এক ভয়ঙ্কর ও আতঙ্কিত বিষয়। এরপর পাকিস্তানি ধারা শুরু হয় এর থেকে বের হয়ে আসা ছিল কঠিন এক বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের মুক্ত চেতনা ভূলণ্ঠিত হয়, গণতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর পুনরায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন, জয় বাংলা ধ্বনিত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে স্বমহিমায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হলো। আর ২০০৮ ও ২০১৪ ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে একাধারে সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আপামর জনগণের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্ম আজ উজ্জীবিত। এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলে থাকেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়। জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের। সেই লক্ষ্যে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এই কথার মধ্যেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিব্যক্তি রয়েছে।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে যে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছিলেন তা হলো বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার এবং পরে ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। আর সেই সুযোগ এসেছিল বাঙালি জাতির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবার। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর কালো অন্ধকার গ্রাস করেছিল, সেই অন্ধকার তাড়াতে প্রথমে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন তিনি। সেই মশাল, প্রাথমিক সংকট- সীমাবদ্ধতার পর দিকে দিকে আলোকিত করতে থাকে, শুরু হয় রাহু মুক্তির পালা। সব আবর্জনা দূর করতে প্রভাতে যেমন বাঙালি একাকার হয়, প্রতিশ্রুতিতে সমৃদ্ধ হয়, তেমনি এক শুভ প্রতিশ্রুতির বাতাস বইতে দেখা যায় তাঁর দেশে ফেরার দিন থেকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতির পিতা বা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বা স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা হিসেবে দেশে মর্যাদার আসনে চিরকাল অধিষ্ঠিত আছেন। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের গৌরবজনক ঘটনা বা অধ্যায় হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ লাখ শহীদের বুকের তাজা রক্ত, লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং সীমাহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে একাত্তরের ৯ মাস যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেই বিজয় ছিনিয়ে আনা হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর। বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছেন বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির কাছে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা এবং যত দিন বাঙালি জাতি থাকবে, তত দিন এই মুক্তিযুদ্ধই থাকবে শ্রেষ্ঠ গৌরবের অধ্যায় হিসেবে, অবিস্মরণীয় এক গৌরবগাথা হিসেবে। কারণ বাঙালি জাতি দীর্ঘকাল কোনো না কোনো শাসক দ্বারা শোষিত হয়েছে, অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়েছে। কখনো মোগল-পাঠান, কখনো ব্রিটিশ, কখনো পাকিস্তানিদের দ্বারা যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হয়েছে। বাঙালির ইতিহাস মানেই শোষণ আর অধিকার থেকে বঞ্চনার ইতিহাস। বাঙালির ইতিহাস মানে না পাওয়া আর বেদনার ইতিহাস। আজকের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য দরকার মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তাদের সামনে উপস্থাপন করা, তুলে ধরা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লিখিত বই, মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত বিভিন্ন ছবি, নাটক এগুলো আরো বেশি করে প্রচার করা দরকার।

আজকের প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা দরকার যে মুক্তির জন্য বাঙালি জাতিকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা যে জীবনকে তুচ্ছ করে, নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দেশমাতা ও মাতৃভূমিকে মুক্ত করে, স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়ের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন, তা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি জাতিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ফলে তারা শ্রমজীবী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকসহ এ দেশের সূর্যসন্তানদের হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতি কিভাবে তাদের পরাজিত করেছিল, তার যথাযথ ইতিহাস নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব ও কর্তব্য সবারই। কিন্তু আমরা সেটি কতটুকু করছি, সেই প্রশ্ন আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ হলো বাঙালি জাতির শোষণের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো আমাদের বাঙালি জাতির আজন্মলালিত স্বপ্ন, একটি জাতির চেতনার স্বপ্ন। এই স্বপ্ন দোলা দিয়েছে আমাদের মনে, আমাদের স্বপ্নকে অনুপ্রাণিত করেছে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। সহায়তা করেছে স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবং এই স্বপ্নকে বেগবান করেছে এবং এক নতুন আশা ত্বরান্বিত করেছে। যে চেতনা বাঙালি জাতিকে একতাবদ্ধ করেছিল একটি গণতান্ত্রিক ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায়। এই চেতনা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আমাদের আরো কাজ করতে হবে। নতুন প্রজন্মের চেতনাকে আরো শাণিত করতে হবে।

যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, কিন্তু শুনেছে গল্পের আকারে তাদের পরিবারের কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির কাছে, শিক্ষকের কাছে, কোনো নেতার কাছে, কোনো মুক্তিযোদ্ধার কাছে বা বইতে পড়েছে। সেই শোনা বা পড়া কতটুকু সঠিক বা তার বিস্তৃৃতি কতটুকু, তা আমরা জানি না। একটি উদ্যোগ নিতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য আমরা কতটুকু সফল? ইতিহাস বিকৃতি জাতিকে ধ্বংস আর বিভ্রান্তি ছাড়া কিছুই দিতে পারে না।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে সে বিষয়টি নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা। যা নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসই হবে নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরণার উৎস, এই চেতনাকে শাণিত করতে আমাদের এখনই কাজ শুরু করা উচিত। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ, বিকাশ, এবং মুক্তির লক্ষ্যে অগ্রণী হিসাবে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য তার বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা এবং অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব অঙ্গনে এক ভিন্ন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্ববিখ্যাত নেতা হিসাবে পরিচিত।

আওয়ামী লীগ সর্বদা সকল প্রকার শোষণ, বঞ্চনা, অবিচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, রক্ষণাত্মক ভূমিকা পালন করেছে এবং অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য কাজ করে। এই দলটি ক্ষমতায় থাকলে জনগণের ভাগ্য উন্নতি হয়। এই দলের ভিত্তি থেকে ৭৪ বছরের ইতিহাস সেই সত্যের সাক্ষ্য দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির লালন, শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ও বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও অন্য দেশগুলোর মতো বড় ধরনের কোনো অর্থনৈতিক সংকটে না পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে তিনি এই সময়ে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্ত অবস্থানে নিতে পেরেছেন। তা না হলে ১৭ কোটি মানুষের দেশটাকে এই সংকটকালেও বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা বেশ কঠিন হতো।

আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কখনো ভুলবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে দেশকে গড়ে তুলছে। এদেশের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের যে অবদান তা কখনই আমরা ভুলি না। তাই আমরা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। সরকার অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান করছেন এবং তাদের সুবিধাগুলো যেমন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিশ্চিত করতে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধারা একেবারে অবহেলিত হয়ে পড়েছিল সরকার তাদের খুঁজে বের করে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাঁদের ভাতার ব্যবস্থা করা, মারা গেলে রাষ্ট্রীয় সম্মানের ব্যবস্থা এমনকি তাঁদের দাফনের ব্যবস্থাও সরকার করছে। যাঁরা আমার বাবার ডাকে অস্ত্র তুলে নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন তাদের সম্মান করা, মর্যাদা দেওয়াই আমাদের কাজ। সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় কাজ করছে। তরুণ প্রজন্ম যদি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি দেখে বিজয়ের ইতিহাস জানতে পারে, তাহলে তারা অনুপ্রাণিত হবে এবং জানবে কীভাবে দেশের জন্য কাজ করতে হয়।

সরকার প্রতিটি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করছে এবং ঐতিহাসিক সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান যেখানে জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, স্বাধীনতা ও পাকিস্তানি দখলদারিত্বের পর দেশ পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে সেটি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নিয়েছে। কেউ কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করবে না। ভবিষ্যতে কেউ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারকে অবহেলার চোখে দেখবে না। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তাঁর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করেছে এবং এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অব্যাহত থাকবে।

গণতন্ত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম অনুধ্যান। কারণ আমাদের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির একেবারে মর্মমূলে রয়েছে গণন্ত্রের আদর্শ। ফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসঙ্গ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা পেয়েছি স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৭১-এ। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

শেখ হাসিনার স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দেশের মানুষকে উন্নয়নের স্বাদ পাইয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা, বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্থান দিয়ে যথাযথ মর্যাদার আসনে বসানোই ছিল মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অঙ্গীকার ছিল দেশবাসীর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার পূরণ করা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এগুলো হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এর পাশাপাশি হাতে নেওয়া হয়েছে ২১০০ সালের বদ্বীপ কেমন হবে- সেই পরিকল্পনা। স্মার্ট বাংলাদেশে সব কাজ, সম্পাদন করা হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেখানে প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ।

হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.