বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা । আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন । বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ
।।। বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা।।।
৷৷ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবেন। আমেরিকা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে অর্থ শালী, সারাবিশ্বের মাতব্বর সুপার পাওয়ার। বলা হয় President of America is the President of the World. অর্থাৎ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মানেই সারাবিশ্বের প্রেসিডেন্ট। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট ও ব্যক্তি মিঃ জো বাইডেন সেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং ইতিমধ্যে ক্ষমতায় বসেছেন।
জো বাইডেন ৫০বছর হলো রাজনীতি করছেন। ৪৩ বছর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ সিনেটর হিসেবে ৩৫ বছর আর ৮ বছর আমেরিকার ভাইচ প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বর্তমানে আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তিনি যে Delawarie নামক জায়গায় বসবাস করতেন সেখান থেকে ট্রেনে করে হোয়াইট হাউসে অফিসে যাতায়াত করতেন। তার কোন প্রাইভেট কার ছিল না। এটা কি ভাবা যায় ?
ব্যংকে কোন টাকা ছিল না একাউন্ট ও ছিল না। পুত্রের কঠিন অসুখের চিকিৎসার জন্য বাড়ি বিক্রি করতে উদ্যোগ নেন কারণ ছেলের চিকিৎসা করার মত অর্থ ও তার ছিল না। অবশেষে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে সহায়তা করেন এবং ছেলের চিকিৎসা করান ৷ কিন্তু তাঁর ছেলেকে বাঁচাতে পারেন নাই। ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে ভেবে ব্যংকেও যাননি।ঋন গ্রহণও করেননি । বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর দেশের সরকারের সংগে দীর্ঘদিন জড়িত থাকার পরেও সততা ও নীতি ঠিক রাখা কঠিন ব্যক্তিত্বের ব্যপার।
তিনি কোন পক্ষপাতিত্ব করেছেন বা নিজের আত্মীয় স্বজনকে কোন পদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ বা অন্য কোন সুবিধা প্রদান করেছেন এমন কোন নজির পাওয়া যায় না। বর্তমান পৃথিবীতে এমনও মানুষ হতে পারে ? কল্পনাও করা যায় না। জো বাইডেন বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সততার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।গল্পের মতো মনে হলেও আসলে বাস্তব সত্য । আমেরিকার হোয়াইট হাউজের এতবড় কর্ম কর্তা এত সৎ হতে পারে তা ধারণা করাও কঠিন। প্রেসিডেন্ট এর চেয়ারে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রথম যে কথাগুলো বললেন “আমি দেশ সার্ব করতে এসেছি। ব্যংকে ব্যলাঞ্চ বাড়াতে নয়। যদি ব্যংক ব্যলাঞ্চ বাড়ানোর ইচ্ছা থাকতো তবে ব্যবসায়ী হতাম রাজনীতিবিদ নয়। রাজনীতি হলো বিলিয়ে দেওয়ার জায়গা। বিলিয়নিয়ার হবার নয়। ব্যবসায় মুনাফা থাকে রাজনীতিতে থাকে শুধু সেবা। এই সেবাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মুনাফা।
একেই বলে জনগনের বন্ধু। দেশপ্রেম এবং দেশাত্ববোধ এর নজির বিহীন উদাহরণ। জো বাইডেন যে কথাগুলো বললেন তার সাথে তার বিগত দিনের কাজকর্ম পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন আদর্শ মানুষ, নেতা ও রাজনীতিবিদ। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সত্যিই বিরল। বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অনুসরণ যোগ্য ব্যক্তিত্ব। তার দেওয়া প্রথম ভাষণে আমেরিকার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান, দেশপ্রেম, সকল বিরোধ নিরসনের ইচ্ছা, দেশার্ত্ববোধ ও দলমত নির্বিশেষে সকল আমেরিকার জনগনের প্রতি তার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আগ্রহ ফুটে উঠেছে। ভাষণটি বর্তমান সময়ে আমেরিকার মানুষের মনে আশার আলো জ্বালিয়েছে।
ইতিপূর্বে বৃটেনের মত একটি উন্নত দেশের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীত তার প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ শেষে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রীট এর অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা তার এক বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন কারণ তার বসবাসের জন্য নিজস্ব কোন বাড়ি ছিল না। বৃটেনের মত একটি উন্নত দেশের প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব বসবাসের জন্য কোন বাড়ী নাই এটিও একটি বিরল ঘটনা। বিস্বাস করা কঠিন। একটাই কারণ তা হলো এই ব্যক্তির সততা, দেশপ্রেম, নিরপেক্ষতা, বলিষ্ঠ চরিত্র, দেশ ও মানুষের প্রতি তার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। জো বাইডেন এর গুণাবলী বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক নেতার মধ্যে পাওয়া যায়না। আগে যারা রাজনীতি করতেন তারা আর্থিকভাবে হতেন হিরো থেকে জিরো আর এখন হয় জিরো থেকে হিরো। আমাদের দেশে বর্তমানে রাজনীতি মানে সেবা নয়। রাজনীতি মানে দ্রুত ধনী হওয়ার ও ব্যংক ব্যলান্চ বৃদ্ধি করার সিঁড়ি। রাজনীতি মানে রাতারাতি বড়লোক হওয়া। বর্তমানে দুর্নীতির আরেক নাম রাজনীতি হয়ে গেছে।
কিন্ত দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে শের এ বাংলা এ , কে, ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সহরোয়ার্দী এনারা রাজনীতি করেছেন। কিন্তু তাঁদের স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতির কথা শুনা যায় না। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। অনেক চেষ্টা করে ও শত্রুরা তাঁর কোন অবৈধ অর্থ বা ব্যংকে কোন বৈধ আয় বহির্ভূত টাকা পায় নাই। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তার দল ক্ষমতায় ছিল। অতএব জিয়াউর রহমানের টাকার খোঁজ পাওয়া যায় নি। কিন্তু পরবর্তীতে তার ওয়ারিশ গনের চালচলনে বুঝা গেছে উনি যথেষ্ট টাকা পয়সার মালিক বনে গিয়েছিলেন। আরেক রাজনীতিবিদ জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান সেতো রীতিমতো হাওয়া ভবন নামের এক ভবনে অবৈধ অর্থ লেনদেনের আখড়া বানিয়েছিল।
এখন রাজনীতিতে যোগ দেওয়া মানেই অন্যায় ও দুর্নীতির লাইসেন্স কুড়িয়ে পাওয়া। যার কারণে দলীয় পদপদবী পাওয়ার আশায় মারামারি কাটাকাটি করে নিজেদের মধ্যে কলহ বিবাদ এমন কি হত্যাকান্ড ঘটাতেও দ্বিধা করে না। তৃনমুল থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একই অবস্থা। সব জায়গাতেই কাড়াকাড়ি। অর্থ উপার্জনই যে বর্তমান রাজনীতির মুল উদ্দেশ্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে লক্ষ করেছি যিনি ই ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন বা আছেন সবাই তাদের নিকট আত্মীয়স্বজন দেরকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, শীর্ষ নেতা হিসেবে নিয়োগ প্রদান সহ আর্থিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছেন।
কোন ব্যতিক্রম নাই। দেশের মানুষকে দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করেছেন। মনে হয় যেন আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সততা,নিরপেক্ষতা,ন্যয়-নীতি,জাতীয় ঐক্য,নাগরিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের চিন্তা,মানবাধিকার সংরক্ষণ ইত্যাদি ভালো দিকগুলো চির বিদায় নিয়েছে এবং সেই জায়গায় অসততা, পক্ষপাতিত্ব, দুর্নীতি, মাস্তানি, অনৈক্য, অমানবিকতা, নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা, স্বজনপ্রীতি, বিভাজনের নীতি, অবিচার, স্বার্থপরতা ইত্যাদি স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে। এসবের শেষ কোথায় আমরা কেউ জানি না।
আমরা সবাই বলি এসব থেকে পরিত্রাণ চাই কিন্তু কাজ কর্মের সাথে কোন মিল নাই। তার পরেও আমরা রাজনৈতিক নেতাদের সম্মান দেখাতে বাধ্য কারণ পরিবেশ সেই রকমই প্রস্তুত করা হয়েছে।
ইন্ডিয়া, আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে চা বিক্রেতা, বাদাম বিক্রেতা, মেষ পালকেরা প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আমাদের দেশে সে সুযোগ নাই। রাজনৈতিক অবস্থা এমন হয়েছে যে বিশেষ কয়টা পরিবারের লোক ব্যতিত অন্য কেউই বাংলাদেশের শীর্ষ পদে যেতে পারবেন না। কারণ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাই হোক আমরা তথা সারা পৃথিবীর মানুষের প্রত্যাশা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর মত সৎ,আদর্শবান, মানবিক গুনাবলি সম্পন্ন ব্যক্তি বর্তমান বিশ্বে শান্তি, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন । স্বাগতম জো বাইডেন।
লেখক : কলাম লেখক ও আইনজীবী ।