রেড তালিকায় থাকা দিনাজপুরে যেগুলো কারণে বাড়ছে ওমিক্রন সংক্রমণের হার

0

মোঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব , দিনাজপুর প্রতিনিধি : মহামারী করোনার ভাইরাস সংক্রমণ ও শনাক্তের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে দেশের ১২টি জেলাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম দিনাজপুর জেলা। রেড জোন ঘোষণা হলেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত, মাস্ক পরছেন না জেলার অধিকাংশ মানুষ। জেলার উপজেলার গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যবিধি ও সচেতনতা একেবারে নেই বললেই চলে।

জেলার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলা উপজেলায় শনাক্তদের অধিকাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। এর ফলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে, যদিও ওমিক্রনে মৃত্যু ঝুঁকি কম। উত্তরের দিনাজপুর ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় সংক্রমণ বেশি বলে মনে করছেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারের নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনের কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত ছিল ১০ দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪১ এবং তৃতীয় সপ্তাহে তা বেরে দাঁড়িয়েছে ২০২ জনে। একই সঙ্গে প্রথম সপ্তাহে সক্রিয় রোগী ছিল ২৭ দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪৯ এবং তৃতীয় সপ্তাহে দাঁড়িয়েছে ২৪০ জনে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আক্রান্ত ও রোগী বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণেরো বেশী। চতুর্থ সপ্তাহের চার দিনের মাথায় আক্রান্ত ১৭২ আর সংক্রিয় রোগী ৪৭৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন একজন। একই সময়ে ১৭২ নমুনা পরীক্ষা করে ৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বর্তমানে রোগী ৩৭০ জন, হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন করোনা পজিটিভ ১৬ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ১৬ জন। গত সোমবার দিনাজপুর জেলায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে একজন করোনায় এবং একজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮ জনে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে অধিকাংশ মানুষ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি, নেই কোন মাস্কের ব্যবহার। জেলার গ্রামাঞ্চলের চিত্র গুলো আরও ভয়াবহ। যদিও তাদের কাছে রয়েছে নানা অজুহাত ও যুক্তি। করোনার উপসর্গ দেখা দিলেও কেউ করছেন না পরীক্ষা। তবে টিকা নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে কমবেশী তাদের।

চিরিরবন্দর উপজেলার রাণীরবন্দর বাজারে মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করছে অনেকেই সেখানে মোঃ জিয়াউর রহমান বলেন, মহামারী করোনার ভাইরাস সংক্রমণ এর প্রকোপ কমে যাওয়ায় মাস্ক পরছি না। তবে এখন করোনা মহামারী বাড়ছে, চিন্তা করতেছি আবারও মাস্ক ব্যবহার করবো। পার্বতীপুর উপজেলার এক রিক্সা চালক বলেন, এখন করোনাকে হামরা ভয় করি না। হামরা গ্রামের মানুষ, টিকা নিছি। ওমিক্রম আইছে তার বাদে আতঙ্কে আছি। গ্রামে যেইলা আক্রান্ত হছে তারা হাসপাতালে যাছে না। হাসপাতালে যায়া পরীক্ষাও করান না। করোনায় আক্রান্ত কিনা বোঝাও যায় না। এভাবে গ্রামে করোনা ছড়াচ্ছে।

জেলা সদর মোড় এলাকার মোহন পাল বলেন, ঠান্ডার কারণে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। করোনা আবারও বাড়ছে। সর্দি, কাশি, জ্বর হচ্ছে। কিন্তু কেউ পরীক্ষা করছেন না। তবে প্রায় সবাই টিকা নিয়েছেন। কিসমত ভুইপাড়া এলাকার ভ্যানচালক জুয়েল ইসলাম বলেন, আবারও যদি লকডাউন দেয় তাহলে তো চলাফেরা বন্ধ হয়ে যাবে, আয়-উপার্জন বন্ধ হবে। তখন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

তবে খেটে খাওয়া মানুষের দাবি, করোনায় তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। এই অবস্থায় দেশে আর যাতে লকডাউন দেওয়া না হয়। লকডাউন দিলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। দিনাজপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী স্বপন কুমার রায় বলেন, শীতকালে জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। একই উপসর্গ করোনাভাইরাসেরও। কিন্তু এসব রোগে আক্রান্ত হলেও কেউ পরীক্ষা করছেন না, ফলে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন না। তবে গ্রামের মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী। তারা টিকা নেওয়ার সময়ও মাস্ক পরেন না।

সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৮ জানুয়ারি থেকে জেলায় ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ঘোষণা করেছিল জেলা করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধ কমিটি। তবে সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন করা হচ্ছে, অভিযান চালানোর কথাও বলছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। দিনাজপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন, আমরা পুরনো পদক্ষেপগুলো মনিটরিং করে সমন্বয় করছি। সংক্রমণ ঠেকাতে মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে বলা হচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা, জনসমাগম এড়িয়ে চলাসহ নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে সবাইকে অনুরোধ করছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে ওমিক্রনের প্রভাবটাই বেশি। আমরা যেহেতু সীমান্তঘেঁষা জেলা, তাই এখানে সংক্রমণ বেশি। লোকজন ভারত-বাংলাদেশে চলাচল করছেন। ব্যবসায়ীরা যাওয়া-আসা করছেন। আমদানি-রফতানি পণ্য নিয়ে ট্রাকচালক ও সংশ্লিষ্টরা যাওয়া-আসা করছেন। আমাদের সবকিছুই তো পরিকল্পনা মাফিক হয়নি। কিছু হয়েছে, কিছু হয়নি। তবে ওমিক্রন দ্রুত ছড়াচ্ছে ঠিক কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি কম। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে এটা আমরা পেয়েছি। শনাক্ত হওয়া অধিকাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরিফুল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা আইন প্রয়োগ করছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে, মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা প্রতিপালনে কাজ চলছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.