আমদানী নিষিদ্ধ বিদেশী ওষুধে সয়লাব পাবনা

0

প্রবীর সাহা, পাবনা : আমদানী নিষিদ্ধ বিদেশী ওষুধে সয়লাব পাবনার ওষুধের দোকানগুলো। বেশি লাভের আশায় দোকানিরা এসব ওষুধ বিক্রি করছেন দেদারসে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ওষুধ বিক্রি হলেও তারা বলছেন, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনা। অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে দাবি তাদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবনায় আমদানি নিষিদ্ধ বিদেশী ওষুধ আসে নানা মাধ্যমে। মূলত : ঢাকা থেকে ওইসব ওষুধ নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে বাজারজাত করে থাকেন। তবে এসব ওষুধে আমদানীকারকের নাম লেখা থাকেনা। থাকেনা ওষুধের দামও। ফলে দোকানিরা উচ্চ দামে বিক্রি করেন এসব ওষুধ। এছাড়া এসব ওষুধ আসল না নকল তাও বোঝার উপায় থাকেনা।

ব্যবসায়ী, ওষুধ প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিসের নানা পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব ওষুধ লাগেজের মাধ্যমে চোরাই পথে দেশে ঢুকছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আমদানী নিষিদ্ধ এসব ওষুধ ভারত, জার্মানী, অস্টিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নামে দেশীয় কিছু ব্যবসায়ী প্যাকেটজাত করে থাকে। আবার কিছু ব্যবসায়ী দেশেই নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করে বিদেশি কোম্পানির নামে বাজারজাত করে। ফলে এসব ওষুধ ব্যবহার করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন রোগীরা।

বাজারে চাহিদা থাকা এবং বেশি লাভের আশায় দোকানিরা তা বিক্রি করে। কেউ ওষুধ কিনতে গেলে দোকানিরা নিজ থেকেই জানতে চান, দেশি না বিদেশি ওষুধ দেবেন। বিদেশী ওষুধ ভাল ধারণা থেকেই রোগীরাও সেসব ওষুধ বেশি দামে কিনে নেন। আসল-নকল বা ভালো খারাপ যাচাই করার সুযোগও তাদের থাকেনা।

আমদানী নিষিদ্ধ এসব ওষুধের মধ্যে সবচয়ে বেশি চলে ভিটামিন জাতীয় ইনজেকশন, নিউরোবিয়ন ইনজেশন, ইমোরান ট্যাবলেট, বিভিন্ন দেশের যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রা জাতীয় ট্যাবলেট, গ্রাইপওয়াটার (ভারত, ইংল্যান্ড), এজোরান, জার্ডিনাল ৩০/৬০, মেলাডাইমিন, বেটনোভেটসহ নানা ধরণেরর ক্রিমের চাহিদা আছে বাজারে। আর এই সুযোগটাই নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

আনিসুর রহমান নামের স্থানীয় একজন রোগী বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দোকানে ওষুধ কিনতে গেলে দোকানদার জানতে চায় দেশি না বিদেশি ওষুধ নেবেন। বিদেশি ওষুধ ভাল কাজ করবে এমন ধারণা থেকে কোনো কিছু না দেখে যাচাই- বাছাই ছাড়াই দোকানদারের ওপর বিশ্বাস করে কিনে নিয়ে যাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ফার্মেসীর মালিক বলেন, বিদেশি কিছু ওষুধের চাহিদা খুব বেশি। সেগুলো কাজও করে ভাল। আমদানী নিষিদ্ধ হলেও ক্রেতাদের চাহিদার কারণে আমরা সেগুলো রাখি এবং বিক্রি করি, এতে আমাদের লাভও ভাল হয়।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা.সালেহ মুহাম্মদ আলী বলেন, আমদানী নিষিদ্ধ বিদেশী ওষুধ কিংবা নকল ও ভেজাল ওষুধে উপাদানের পরিমাণের তারতম্য থাকে। ফলে যে রোগের চিকিৎসার জন্য সেগুলো ব্যবহার করা হয়, সেসব রোগ সারেনা বা নিয়ন্ত্রণ হয় না। এসব ওষুধের ক্ষতিকর উপাদন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সমূহের, বিশেষত যকৃত ও বৃক্কেও অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে। তাই এসব আমদানী নিষিদ্ধ বিদেশী নকল বা ভেজাল ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ে জন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন আমাদের কাছে আমদানী নিষিদ্ধ নকল বা ভেজাল ওষুধ বিষয়ে কোন অভিযোগ আসলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অবহিত করি এবং দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলে থাকি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান রনি বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসলেই আমরা অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
পাবনা ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সূবর্ণ আহমেদ বলেন, সরকারি অনুমোদন বিহীন বিদেশী ওষুধ বিক্রি বন্ধে আমরা বিভিন্ন সময়ে ফার্মেসীগুলো পরিদর্শন করি। এছাড়া নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আমদানী নিষিদ্ধ ওষুধ কোনো দোকানে পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি ও তাদের সতর্ক করি। তিনি আরও বলেন ওষুধটি অনুমোদিত কিনা তা দেখে নেয়ার জন্য ক্রেতাদের সচেতন করতে বিভিন্ন জনসচেতনা মূলক অনুষ্ঠান করি।

বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতি পাবনা জেলা শাখার সভাপতি হুমায়ূন কবীর খোকন বলেন আমদানী নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক থাকার জন্য সব সময় জনসাধারনকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সচেতন করে থাকি। এছাড়া বিভিন্ন দোকানে আমদানী নিষিদ্ধ বিদেশী ওষুধ থাকার তথ্য পেলে তা ধ্বংস করি। এরপরও কেউ কথা না শুনলে প্রশাসনের মাধ্যম্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করি ।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ওমর ফারুক মীর বলেন, কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতিকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে । ভ্যাজাল ও নকল বিদেশী ওষুধের ক্ষতিকর দিক নিয়ে জন-সচেতনতা বাড়াতে হবে, দেশের ওষুধের মান সম্পর্কে জন-সচেতনতা বাড়াতে হবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.