নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক ভাসানী সম্মেলনে বক্তারা স্মৃতিরক্ষা ও নতুন প্রজন্মকে ভাসানীর আদর্শের সাথে পরিচিত করে দেয়ার ওপর গুরুত্বাারোপ

0

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বাংলাদেশে গনতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার মৌলিক অধিকার এবং মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আহবান জানানো এবং স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর স্মৃতিরক্ষা ও নতুন প্রজন্মকে ভাসানীর আদর্শের সাথে পরিচিত করে দেয়ার ওপর গুরুত্বাারোপ সহ ১৯ দফা ঘোষণাপত্র গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে ভাসানী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খবর ইউএনএ’র।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ফাউন্ডেশন, নিউইয়র্ক, ইউএসএ’র উদ্যোগে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক সিটির একটি মিলনায়তনে চতুর্থবারের মতো এই আন্তর্জাতিক ভাসানী সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সম্মেলন প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আসিফ নজরুল। ভাসানী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলী ইমাম সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আলোচনা পর্বে অন্যান্যের মাঝে অংশ নেন লন্ডন থেকে আগত ভাসানী গবেষক ড. লাইলী উদ্দিন, কানাডা থেকে আগত ভাসানী গবেষক অধ্যাপক ড. আবিদ বাহার, কলকাতার ভাসানী মঞ্চের সৌমিত্র দস্তিদার ও আসিফ রহমান, অধ্যাপক দেওয়ান শামসুল আরেফীন, বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্কের সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির মহাসচিব সৈয়দ টীপু সুলতান, সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান ও ফখরুল আলম, সাবেক সহ সভাপতি আজহারুল হক মিলন, প্রবীণ সাংবাদিক কাজী শামসুল হক, সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক সাঈদ তারেক, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ খান, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, বিশিষ্ট লেখক মাহমুদ রেজা চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, ফোবানা’র একাংশের চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ, অধ্যাপক ড. শান্তলী হক (এটর্নী), ফোবানা’র অপরাংশের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী কাজী আযম, মওলানা ভাসানীর ভাতিজা আব্দুর রশীদ খান, জর্জিয়া রাজ্যের কমিউনিটি নেতা নাহিদ এইচ খান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট হাসান আলী, মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, কাজী ফৌজিয়া, এডভোকেট মজিবুর রহমান, আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, হাজী আনোয়ার হোসেন, আব্দুল খালেক, আমিন মেহেদী, আশরাফুজ্জামান, আসিফ আকরাম, দারাদ আহমেদ, লুৎফর রহমান হেলাল, প্রফেসর সৈয়দ আজাদ, মিজানুর রহমান প্রমুখ। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন ভাসানী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঈনুদ্দিন নাসের।

সম্মেলনে বক্তারা বাংলাদেশের চলমান আর্থ সামাজিক সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাওলানা ভাসানীর মত নেতার প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করে বলেন বাংলাদেশে তাঁর মতো ত্যাগী, ভোগবিলাসহীন সুফী পুরুষ আর দ্বিতীয়টি নেই। তিনি একাধারে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা ছিলেন। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য আজ জাতির ইতিহাস থেকে তাঁকে মুছে ফেলা হচ্ছে। আলোচকরা গনতান্ত্রিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ভাসানীর মতো সাহসী নেতৃত্বের প্রয়োজনীতা অনুভব করেন। অনুষ্ঠানে সৌমিত্র দস্তিদার নির্মিত মাওলানা ভাসানীর ওপর একটি দীর্ঘ তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সম্মেলন উপলক্ষে ‘ভাসানী’ শীর্ষক একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।

সম্মেলনে ড. আসিফ নজরুল মওলানা ভাসানীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাঁর কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে মওলানা ভাসানীই একমাত্র নেতা যিনি সকল দল-মত, ধর্ম-বর্ণের মানুষকে এক পতকার তলে এক মঞ্চে সমেবেত করতে পারতেন। তাঁর আদশই হচ্ছে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা। সত্যিকারার্থেই তিনি ছিলেন গণমানুষের নেতা, মেহনতি মানুষের নেতা, ক্ষমতার লোভমুক্ত রাজনৈতিক নেতা। যা তিনি তার জীপনযাপনে, কর্মকান্ডে প্রমান করে গেছেন। ড. নজরুল বলেন, আজকের বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষপটে মওলানা ভাসানীর মতো নেতা প্রয়োজন, নতুন প্রজন্মের কাছে তাকে তুলে ধরা প্রয়োজন। মওলানা ভাসানী কে, কি ছিলেন, তার দর্শন কি ছিলো তা দেশ ও প্রবাসের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা অত্যন্ত প্রয়োজন। কেনো তিনি ফারাক্কা মিছিল করেছিলেন, আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ উঠিয়েছিলেন তাও সবার মাঝে তুলে ধরা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, গণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে মওলানা ভাসানীর সামগ্রীক জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, মাওলানা ভাষানী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিশুদ্ধ চেতনার মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে ভাসানীর লং মার্চ। আজকে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশকে বিকিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্য দেশকে স্বামী বলা হচ্ছে। আগের রাতে ভোট মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। বিনা বিচারে মানুষ হত্যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে একদল মানুষ কাজ করছে। ধর্মীয় রাজনীতিকদের দমন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মওলানাকে জানতে আর বুঝতে হলে তাঁকে নিয়ে আলো গবেষণা করতে হবে। তার আদর্শ নতুন প্রন্মেও মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

সম্মেলনের অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের সহ সাধারণ সম্পাদক ইমরান আনসারী। সবশেষে ছিলো সঙ্গীতানুষ্ঠান এতে বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভীনসহ স্থানীয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেন করেন। এই পর্ব উপস্থাপনায় ছিলেন প্রবাসী শিল্পী শামীম সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের বিপুলসংখ্যক ভাসানী প্রেমী দর্শক-শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.