একটি কথা বলতে এসেছি আমি —আল-আমীন হোসেন লিমন

0

একটি কথা বলতে এসেছি আমি
—আল-আমীন হোসেন লিমন

আজ আমি একটি কথা বলতে এসেছি ৷
আপনারা আমাকে সে সুযোগটাও দিয়েছেন ৷
আমি ধন্য হয়েছি আপনারা আমার মত
নগন্য মানুষের কথা শুনবেন বলে ৷
অনেকের মতো দর্শক সারিতে
দাড়িয়েও কথাটি বলতে পারতাম,
কিন্তু সেটা করিনি আমি ৷
সোজা কাঠগড়ায় দাড়িয়ে গেছি,
যাতে আপনারা আমাকে দেখতে পান ৷
আমার কথা শুনে যদি দেশদ্রোহী বলেন,
কিংবা যদি শাস্তি দিতে চান,
তবেতো কাঠগড়াতেই দাড়াতে হবে আমাকে ৷
তাই আগে থেকেই আমি দাড়িয়ে গেলাম ৷

আজ সবার চোখে মুখে স্বাধীনতার চেতনা,
কপালে লেপ্টে আছে বিজয়ের উল্লাস,
দেশপ্রেমের অনুভবে গর্বিত হৃদয় ৷
সারা শরীরে ঠমকে উঠছে বীরত্ব,
মুক্ত মগছে বইছে আভিজাত্য,
স্বাধীন দেশে স্বাধীন সকলের চিন্তাধারা ৷
আমি পুরোদমে দেশপ্রেমিক না হলেও
আমারও গর্ব হচ্ছে ভিতরে ভিতরে ৷
আমিও পতাকার মিছিলে সঁপে
দিতে চাই আমার নিজেকে ৷
আমারও ইচ্ছে হচ্ছে বিজয়ের
শ্লোগানে ভেসে যেতে,
আমারও মন চায় দশজনের সাথে বাঁচতে ৷

সবাই হয়তো ভাবছেন এসব কথা
বলার জন্য কি এখানে দাড়িয়েছি?
না! এগুলো বলার জন্য আমি আসলে
এই কাঠগড়ায় দাড়াইনি ৷
আপনারাও সেই কথাটি শোনার জন্য
আগ্রহ নিয়ে আছেন সেটাও আমি জানি ৷

বলছি তবে-
ঠিক কিছুক্ষণ আগেই আপনারা দলবেঁধে
শহীদবেদী থেকে ঘুরে এসেছেন,
সকলের হাতে ছিলো তাজা তাজা ফুল,
পুস্পস্তবকও অর্পণ করেছেন শ্রদ্ধার সাথে ৷
কেউ কেউ মাইক বাজিয়ে বিজয়ের গান
শুনিয়েছেন সেই সকাল থেকে ৷
পরনে পরিপাটি নতুন পোশাক,
গত সন্ধ্যায় কিনে এনেছেন ৷
বেশ চড়া দাম দিয়ে ফুলও কিনেছেন,
এ সময়টা দোকানীরাও কমে ছাড়ে না ৷

আবার দেখছি এখানেও আপনারা
বেশ লোক জমায়েত করেছেন,
যুদ্ধের গল্প শোনাবেন কিংবা
কয়েকটি দেশের গান শোনাবেন ৷
মঞ্চ, মাইক, চেয়ার, টেবিল
সবই দাম দিয়ে জোগাড় করেছেন ৷
সেটাও নেহাৎ দু’চার টাকা নয় ৷

আজ আমি শহীদবেদীতে যাইনি,
যেতেও ইচ্ছে করেনি ৷
কোনো ফুলও কিনিনি আবার
নতুন পোশাকও কিনিনি ৷
আমার কাছে অযথা মনে হয়েছে সব ৷
কিন্তু আমি দেখেছি সবকিছুই ৷
বেদীতে যত ফুল জমা হয়েছে,
টাকার হিসেবে তা একেবারেই কম নয় ৷
শহরে ফুলের দোকানে গেলেই
তার একটা হিসেব পাওয়া যাবে ৷
কেউ যেতে চাইলে চলেন ঘুরে আসি ৷
আমি তার হিসেবটা নিয়েছি,
আমার চোখ চড়কগাছ হয়ে গেছে ৷
এত টাকা আমরা ফুল কিনতে ব্যয় করি!
অথচ একটু পরেই সব ফুল শুকিয়ে যাবে,
শ্রদ্ধার ফুল ঝাঁডু মেরে ফেলে দেবে ডাস্টবিনে,
নয়তো পায়ে দলে যাবে যে কেউ ৷
তবে কি প্রয়োজন এত ফুল দিয়ে?
কি প্রয়োজন এত টাকা নষ্ট করে?
ফুল ছাড়া কি শ্রদ্ধা নিবেদন হয় না?

আবার ঠিক এখানকার মত
আহামরি আয়োজন না করে,
খোলামাঠে ঘাসের উপরে বসে
খেটে খাওয়া লোকদেরকে
দেশপ্রেম শেখালে ভালো হতো না!
এই টাকাগুলো যদি এক করে কোনো
অসহায়ের হাতে দেওয়া যায়,
তবেতো সে দাড়িয়ে যাবে সংসারে ৷
কোনো গরীব মেধাবীর হাতে ধরিয়ে
দিলেইতো সে মানুষ হতো,
একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করতো ৷

সবাই অমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?
আমাকে দেশদ্রোহী মনে হচ্ছে?
একটা কথার জবাব দিনতো-
যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা কি
মানুষের জন্য জীবন দেননি?
তারা কি দেশ এবং দশের জন্য
শহীদ হননি?
তাদের শ্রদ্ধায় নিবেদিত ফুলের
টাকায় মানব সেবা করলে
তারা কি আসলেই ক্ষুব্ধ হবেন?
যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা
আমাদের মত নন ৷
তারা কখনোই ফুল চান না,
তারা আয়োজন চান না,
তারা মানবের সেবায় বিশ্বাসী ৷
মানুষ ভালো থাকবে বলেই
তারা জীবন দিয়েছিলেন ৷

আজ আপনাদের সামনে কাঠগড়ায়
দাড়িয়ে দীপ্ত কণ্ঠে বলতে চাই –
লোক দেখানো তথাকথিত
শ্রদ্ধা নিবেদন ছেড়ে দিন ৷
মানব সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে
আসুন মানুষের কল্যাণ করি ৷
শহীদেরা ফুল চান না,
শহীদেরা গান কবিতা শুনতে চান না ৷
তাদের পথ ধরে আমরা যেন
মানুষের জন্য কাজ করি ৷
এর চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না ৷
বাংলার মানুষ বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে ৷

আমার কথাটি শেষ হলো ৷
এবার আপনারা আমার বিচার
করলে করতে পারেন,
আমাকে দেশদ্রোহী করতে চাইলে
তাতেও আপত্তি করবো না ৷
ঠিক কাঠগড়াতেই দাড়িয়ে থাকলাম আমি,
আপনাদের আদালত যে রায় দিবে
তা আমি মাথা পেতে নেবো ৷

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.