মায়াজালে এখনো আমি । আনান্নিয়া আন্নি

0

পর্বঃ ০৭
মহুয়া আমার স্কুলের বান্ধবী ছিলো। মাঝে মাঝে ছোট ফুপু-র ফোন দিয়ে ওর সাথে কথা বলতাম,তবে এস এস সির পর থেকে আর ওর সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু ওর কথা কেনো ছোট ফুপু ডায়েরি তে লিখেছে সেটাই প্রশ্ন?

তুই কি কথা বন্ধ করে পরের পাতা উল্টাবি? না পড়লে কি করে বুঝবি বলতো? পড় জলদি বাকিটা…

(১২ই অক্টোবর)
দু’দিন কেটে গেলো, এরমধ্যে আর ছেলেটার কোনো খবর নেই। ভাবলাম যাক ভালোই হয়েছে, বোধহয় ছেলেটা আর এরকম উল্টোপাল্টা কিছু করবেনা, না করলেই ভালো।এমনিতেও আমার জীবনে ঝামেলার শেষ নেই।এরকম উটকো ঝামেলা চলে যাওয়াই ভালো। কিন্তু না ঝামেলা আরো বাড়লো বৈকি!

আজ সকালে দরজায় বেল বাজেনি,কেউ গোলাপের তোড়া ও দিয়ে যায়নি ঠিকই কিন্তু মহুয়া বলে সেভ করে রাখা সেই নাম্বার থেকে একটা মেসেজ এলো;
তাতে লেখা ছিলো..

আজ ও কি মন খারাপ? নাকি ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি লুকোচুরি খেলছে?

প্রথমে ভেবেছিলাম বোধহয় কুমু-র বান্ধবী মহুয়া মেসেজ টা কুমু কে করেছে কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম মেসেজ টা না মহুয়া করেছে আর না কুমু কে পাঠানো হয়েছে।

দ্বিতীয় মেসেজ এলো;
তাতে লেখা ছিলো

জীবনকে উপভোগ করার মাঝেই আনন্দ, একবারটি সব ভুলে প্রাণ খুলে হেসে দেখুন জীবন সুন্দর!!

বুঝতে পারছি না যিনি মেসেজ করছেন তিনি কে? তা ছাড়া আমার মন খারাপ কিনা সেটা তিনি কিভাবে জানলেন? এসব কথাই বা কেনো বলছেন উনি?

(১৬ অক্টোবর)
আজ কুমু কে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে ওকে জিগ্যেস করলাম;
তোর বান্ধবী মহুয়ার কি নিজের ফোন নাকি রে?

কুমু বললো
আরে না ছোট ফুপু, ও তো ওর নীড় মামা-র ফোন থেকে আমার সাথে মাঝে মাঝে কথা বলে। কেনো কি হয়েছে?

ওহ আচ্ছা। না কিছু হয়নি।

কুমু-র মুখ থেকে জানতে পারলাম ছেলেটার নাম নীড়।কিন্তু তার আমাকে মেসেজ করার কারন বুঝতে পারছি না।তবে কেনো জানি বারবার মনে হচ্ছে ঝিলপাড়ের ছেলেটাই নীড় হয়ে যাবেনা তো?

ঝিলি… আমার কি মনে হচ্ছে বলতো? ঝিলপাড়ের ছেলেটাই নীড় মামা ছিলো। তবে কি নীড় মামার সাথেই ফুপু-র………

আমার মনেহয় পরের পাতা পড়লে সবটা জানা যাবে কুমু,তুই কথা না বাড়িয়ে পরের পাতা উল্টা তো…

ঠিক এই মুহূর্তে মায়ের ডাকাডাকি শোনা যাচ্ছে।
কুমু ঝিলি দু’জনেই খেতে এসো…

ঐ দেখ মা ডাকছে,চল তাড়াতাড়ি খেয়ে এসে বাকি টা পড়বো।

খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।রাতের খাবারে আজ রয়েছে ফুলকপি ভাজি, মুরগির মাংস আর ডাল।

কুমু আর ঝিলি পাশাপাশি বসেছে। মা আর ছোট কাকি সবার জন্য ভাত বেড়ে দিচ্ছে। মেজো কাকা আজ আগেই বাসায় এসেছে তাই খাবার টেবিলে মেজো কাকা ও বসেছে তবে মেজো কাকি আসেনি এখনো, বোধহয় সন্ধেবেলা মেজো কাকার কথায় অভিমান করেছে।আজ আর খাবার টেবিলে আসবেনা কারন ইতিমধ্যে তাকে বেশ ক’বার ডাকা হয়েছে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।

কুমু খুব মন দিয়ে চিকেন লেগপিস খাচ্ছে, তার আর কোনোদিকে মন নেই, পাশ থেকে ঝিলি একটা চিমটি কেটে ফিসফিস করে বলছে;
কিরে খুব চিকেন খাওয়া হচ্ছে না? জলদি খাওয়া টা শেষ কর, বাকি টা পড়তে হবে তো নাকি? কাল আমরা বাড়ি চলে যাবো আর শোনা হবেনা।

এরইমধ্যে ছোট ফুপু-র ঘর থেকে বড় ফুপু চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে। বড় ফুপু ছোট ফুপু কে রাতের খাবার খাওয়াতে গিয়েছিল তাহলে কি হলো ওখানে?
সবাই আধখাওয়া অবস্থায় খাবার ফেলে দৌড়ে ছোট ফুপু-র ঘরে গেলো।

একি! ছোট ফুপু কেমন মৃগী রোগীদের মতো মেঝেতে পরে আছে, যেনো তার স্নায়ুতন্ত্র কোনো জটিলতা সহ্য করতে না পেরে এমন খিচুনি দিয়ে কাপছে।

কুমুর মা আর বড় ফুপু তাড়াতাড়ি করে ছোট ফুপু কে ধরে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো,ছোট ফুপু আজ কেমন বেশি ছটফট করছে, আর মুখ দিয়ে ফ্যানমতো কি একটা বের হচ্ছে। কি হলো আজ ছোট ফুপু-র?

মা বড় ফুপু কে জিজ্ঞেস করলো;
রশ্মি কি হয়েছে? তুমি ওকে খাওয়াতে এসেছিলে তো,ও এভাবে মেঝেতে পরে গেলো কি করে?

ও তো আজ একেবারেই কথা বলছিলোনা, চুপচাপ বসে ছিলো একদিকে তাকিয়ে। বারবার খাওয়ার জন্য বলছিলাম তারমধ্যেই ইমাদ এর ফোন এসেছিলো। অপ্সরার সাথে কথা বলতে চাইলো, কিন্তু ও তো আজ একদমই কথা বলার মতো অবস্থায় নেই বলে ইমাদ বললো তাহলে ও কাল এসে অপ্সরা কে নিয়ে যাবে, ওর বাসা থেকে হসপিটালের কাছেই হয় রোজ একবার করে চেকআপ করিয়ে আনবে কিছুদিন, তারপর কি হয় দেখা যাবে। আমি অপ্সরাকে ইমাদ এর কথাগুলোই বলছিলাম, এগুলো শুনেই ও কেমন ছটফট করতে করতে নিচে পরে গিয়েছে আমার চোখের সামনেই।
কবে যে ঠিক হবে আমার বোনটা এই বলতে বলতে বড় ফুপু কাঁদতে শুরু করলো।

ছোট ফুপু-র কিছু খারাপ হয়ে যায় তার আগেই বাড়ির সকলে ছোট ফুপু কে তখনই তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে গেলো।

কি জানি কি হয়ে গেলো আবার, ছোট ফুপু হয়তো মুখে কিছু বলতে পারেনা কিন্তু সবটা শুনতে তো পায়, সবার কথা বুঝতে তো পারে সে।হয়তো আজ ইমাদ এর আসার কথা শুনে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি, হয়তো আজও অপছন্দের মানুষ টির কাছে আসা তার অস্বস্তির কারন হয়ে দাড়ায়, এই অসুস্থতাই যার বহিঃপ্রকাশ।

মেজো কাকা, মা আর বড় ফুপু ছোট ফুপু কে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছে। বাবা আর ছোট কাকা এখনও ফেরেনি। বাড়িতে মেজো কাকি,ছোট কাকি, কুমু আর ঝিলি রয়েছে। দুম করে এরকম একটা বিপদ হয়ে যাবে কেউ আশঙ্কা করতে পারেনি। চিন্তিত হয়ে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে অপেক্ষা করছে।
বিপদের সময় যেনো সময় ও কাটতে চাইছেনা। কোনোমতে একঘন্টা কাটলেই ছোট কাকি বড় ফুপু-র ফোনে ফোন করলে বড় ওপাশ থেকে বড় ফুপু জানালো;
আমরা মাত্র পৌছলাম। অপ্সরাকে ভেতরে নিয়ে গিয়েছে। তোমাদের পরে আপডেট জানাবো…

চলবে…. ♥️।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.