আজ আমাদের মাঝে শুধু ইমাদ কে নিয়েই কথা হয়নি,কথা হয়েছে আরো একজন মানুষ কে নিয়ে।
শিউলি…
কোনো এক শরৎ এর রাতে ফুটন্ত শিউলি ফুলের মতো সে এসেছিলো নীড় এর জীবনে। নীড়ের প্রাক্তন প্রেমিকা সে।তবে শিউলি ফুলের মতোই সে ঝরেও গিয়েছিল আবার।
নীড় কে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাদের বিচ্ছেদ এর কারন কি ছিলো? ছন্দে ছন্দে সে বলেছিলো;
প্রেম মানে ভুল,শিউলি তো ক্ষনিকেরই ফুল।
ক্ষনিকের ফুল সেটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু প্রেম মানে ভুল কেনো সেটা তো বলবে?
নীড় বলেছিলো.. ভুল এর অনেক সংগা আছে কিন্তু তোমাকে কোন সংগা টা বললে তুমি আমার অতীত উপলব্ধি করতে পারবে সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।
আচ্ছা ওসব ঠিক ভুলের সংগা তোমায় দিতে হবেনা,তুমি আমায় বলোতো শিউলির কোন জিনিসটা তুমি এখনও ভীষণভাবে মনে রেখেছো? যেটা তোমাকে ভুলতে দেয়না তার কথা?
নীড় কেমন গম্ভীর হয়ে মাথা নিচু করে বললো;
আমরা বড্ড বেশি অতীতে চলে গিয়েছি অপ্সরা…
ফিরে এসো বর্তমানে, আমার আর তোমার সময়ে ফিরে এসো।
আমি নীড় এর কথাগুলো শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম শরৎ এর শিউলি ঝরে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার সুবাস এখনও রয়ে গিয়েছে অনেক টা জুড়ে।
দেখ কুমু আবার এক নতুন চরিত্রের আগমন হলো,নীড় মামার প্রাক্তন প্রেমিকা শিউলি। তাদের বিচ্ছেদের তো নিশ্চয়ই কোনো কারন ছিলো বল? সেটা তো লেখেনি।
হয়তো লিখেছে পরে।
হুম হবে বোধহয়।
(৩০ নভেম্বর)
অনেকদিন হয় ইমাদ এর সাথে কথা হয়না, আর ঝগড়াও হয়না আমাদের, অভিযোগ অনুযোগ এর ঝুড়ি নিয়ে বসা হয়না আর। কেমন আছে ইমাদ? বোধহয় ভালোই আছে, আমার কথা আর হয়তো ওর মনে হয়না, হয়তো এক সাগর ঘৃনার মাঝে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে আমায়, হয়তো ইমাদ এর সাথে আমার আর কথা হবেনা, কিন্তু মনের মধ্যে আমার আফসোস থেকেই যাবে সারাজীবন এই ভেবে যে মানুষ টা আমায় কখনও বুঝতেই পারেনি…
(৫ ডিসেম্বর )
আজ বড় ভাবি-র সাথে নীড় এর আলাপ করিয়ে দিয়েছি। যদিও মোবাইলে কথা বলেছে আজ,তবে বড় ভাবি বলেছে সামনাসামনি আলাপ করিয়ে দিতে।
সবকিছু একটু বেশিই সুন্দর হচ্ছে যেনো। কে জানে কিছু খারাপ আছে কিনা ভবিষ্যতে। ঘরপোড়া গরু তো সিদুরে মেঘ দেখলে বড্ড ভয় হয়!
(২০ ডিসেম্বর)
দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন পার হয়ে গিয়েছে।আমরা সেই অচেনা অজানা আলাদা আলাদা মানুষ দুটো কেমন এক হয়ে যেতে বসেছি…
আমার অনেক দিনের ইচ্ছে…
প্রিয় মানুষ টিকে সাথে করে মাটির ভাড়ে চা খেতে খেতে দীর্ঘ সময় গুলো নিমিষেই শেষ করে দেবো,প্রথম ফুচকা টা তাকে লোভ দেখিয়ে আমার গালে পুরে নেবো, হাত ধরে অনেক টা পথ শুধু গল্প করেই কাটিয়ে দেবো।
আজ আমার ইচ্ছে পুরন হয়েছে…
একটা সঠিক মানুষের অভাবে বোধহয় জীবনের অনেক কিছুই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। যা আজ আমি হাতের মুঠোয় পেয়ে উপভোগ করছি জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত।
কিন্তু এই সুন্দর মুহুর্তে আজ ঘটেছে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা;
আজ আমি একটা বেগুনি রঙের শাড়ি পরেছিলাম,নীড় পরেছিলো কালো রঙের পাঞ্জাবি।দুজন একইসাথে বসে ফুচকা খাচ্ছিলাম, কি এক জবরদস্ত গল্প নিয়ে মত্ত হয়ে ছিলাম দুজনই, ঠিক সেই সময়ে তার আগমন…
ইমাদ এর কথা বলছি। আমার আর নীড় এর সামনে এসে দাড়িয়েছে কেবল..
ওকে দেখে আমি আর নীড় ও দাঁড়িয়ে পরলাম। ইমাদ কোনো কথা না বলেই আমার হাত ধরে বললো;
তোমাকে আমি খারাপ মেয়ে ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি দেখছি জঘন্য খারাপ একজন মেয়ে মানুষ অপ্সরা। ইমাদ এর কথা শেষ হতে না হতেই নীড় ইমাদ কে থামিয়ে দিয়ে বললো;
মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলুন ইমাদ সাহেব। ভদ্রলোকের পরিচয় তার ব্যাবহারে, আপনাকে দেখে কিন্তু ভদ্রলোক বলেই মনে হচ্ছে, শুধু শুধু কেনো ব্যাবহারে নিজের আসল পরিচয় দিচ্ছেন?
আমার ব্যাবহার যদি অভদ্রতার পরিচয় দেয় তবে অন্য কারো জিনিস নিজের বলে দাবি করা টা কিসের পরিচয় দেয় আমাকে বলুনতো নীড় সাহেব?
আমি অন্যের জিনিস নিজের বলে দাবি করছিনা, যেটা এখন আমার সেটাই একসময় অন্য কারো ছিলো, কিন্তু এখন সেটা শুধুই আমার, আপনি চাইলে তাকে জিগ্যেস করে নিতে পারেন। আর আমি যতদুর জানি অপ্সরা আপনার সাথে সব সম্পর্ক চুকিয়েই ও ওর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গুলো নিয়েছে।
ও আচ্ছা তা সিদ্ধান্ত কি শুধু অপ্সরা একাই নিয়েছে?নাকি একজন হিন্দু ছেলে হয়ে আরেকজন মুসলিম মেয়ের দায়িত্ব নেয়ার দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত আপনিও নিয়েছেন নীড়?
নাকি দায়িত্ব নেয়ার কথা চিন্তাই করেননি শুধু উপভোগ করেই চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন?
ইমাদ এর কথায় নীড় জবাব দিচ্ছে, ওরা কথা বলেই চলেছে বলেই চলেছে, দুজন দুজনকে অভিযোগ করে চলেছে যার কেন্দ বিন্দু কিনা আমি।
কিন্তু আমার আর কোনো কথাই মাথায় ঢুকছেনা,ইমাদ এর মুখে কথাগুলো শুনে যেনো আমার মাথায় বাজ ভেঙে পরলো! কি বলছে ইমাদ এসব?
তুমি এসব কি বলছো ইমাদ? হিন্দু ছেলে হয়ে মানে? কে হিন্দু?
ও আচ্ছা তারমানে তোমার সেই পেয়ারের প্রেমিক পুরুষ যে হিন্দু সেটা তোমার থেকে বেমালুম লুকিয়ে গিয়েছে?
চলবে….