তাদের আত্বা যেন স্বর্গে বিশিষ্ট স্থানে ঠাঁই পায় প্রার্থনা করি – বিজয় সরকার

0

গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্তব্ধ হয়ে যায় কোকিলকণ্ঠ, অন্য সুরলোকে চলে যান “লতা মঙ্গেশকর” তাঁর চলে যাবার শোক না কাটতেই চলে যান বাংলা গানের প্রবাদপ্রতিম “গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়” মহান দুই কিংবদন্তীকে নিয়ে লিখেছেন গীতিকার,সুরকার কন্ঠশিল্পী “বিজয় সরকার”।
তিনি বলেন ;

সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর বিশ্বে হাতেগোনা কয়েকজন এমন শিল্পী। যে অবদান রেখেছেন লতা মঙ্গেশকর সংগীতে তা অকল্পনীয়। তিনি কাজ করেছেন দাপটের সঙ্গে। সেটা প্রায় দীর্ঘ ৮০ বছর এক বা দুই বছর নয়। পারেননি কেউ তাকে ডিঙিয়ে যেতে। তিনি ছিলেন এমনই এক ঐশ্বরিক কণ্ঠের অধিকারী।কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় যার সঠিক বর্ননা। যদি উনাকে নিয়ে বলেন কোনো জ্ঞানী সংগীতজ্ঞও আমার মনে হয় তাহলে এভাবে বলতে পারেন যে, তার কণ্ঠে আসীন হন স্বয়ং সুরের ভগবান। আসলে ভগবানের ছোঁয়া ছিল যেন লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে।

সংগীতের একটি বিরাট অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল তার চলে যাওয়া মধ্যে দিয়ে। লতা মঙ্গেশকরের মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা অনেক শিল্পীকেই পেয়েছি। কিন্তু ৮০ বছর দাপটের সঙ্গে দীর্ঘ গান গাওয়া এরকম শিল্পী পৃথিবীতে এ পর্যন্ত কেউ এসেছে বলে আমার জানা নেই।একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন তিনি নিজেই। কারন, বহু শিল্পী আগ্রহী হয়েছেন, তার গান শুনে । পেশা হিসাবে বেছে নিতে তৈরি হয়েছেন, সংগীতকে। অনেকে সফলও হয়েছেন তাকে অনুসরণ করে। কিন্তু কেউ পারেনি লতা মঙ্গেশকর হতে। কেউ পারবেনও না আর ।

লতা মঙ্গেশকরের গান থাকবে পৃথিবী যতদিন আছে । স্তিমিত হবে না এ কণ্ঠ কোনো দিন। তার গান ভেসে আসবেই পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্ত থেকে। কখনো যদি বন্ধ হয়ে যায় গানের রেকর্ডগুলো তার আত্মার আওয়াজ থাকবে। পৃথিবী আর হয়তো না-ও পেতে পারে এতবড় মাপের শিল্পী। তাকে উচ্চারণ করবে আগামীর মানুষ । তার গান শুনবে তাকে শ্রদ্ধা করবে, । যতবেশি তার গান শুনবে মানুষ ততবেশি তার আত্মা শান্তি পাবে বলে আমার বিশ্বাস।তার আত্মা যেন স্বর্গে বিশিষ্ট স্থানে ঠাঁই পায় প্রার্থনা করি।

২০২২-এর জানুয়ারি মাস। ২৫শের সন্ধ্যা। নাকি ‘সন্ধ্যা’র নব আগমনী। এই একটি মাত্র সন্ধ্যায় সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন কিংবদন্তি। চারদিকে কেবলই হইচই। নাকি ‘পদ্মশ্রী’ পেতে চলেছেন ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্য়ায়। সটান নাকচ করে দিলেন বলিষ্ঠমনা। ৯০তে এসে মানুষের স্মৃতি হারিয়ে যায়। তা হলে কোন মনোবলে এমন সিদ্ধান্ত ‘গীতশ্রী’র? ব্রিটিশ আমলের পুলিশ কর্মকর্তার নাতনি বলেই কি এহেন সিদ্ধান্ত? সেই কারণেই কি ‘ইন্দ্রধনু’র তীরে বিদ্ধ করতে পারেন এত সহজে? চলে যেতে-যেতে সন্ধ্যার অস্ফুট বার্তা: ‘শিরদাঁড়াটা এখনও সোজাই আছে!’
স্বাধীনতা, আত্মসম্মানবোধ কোনওদিনও পিছু ছাড়েনি যে শিল্পীর, তিনিই তো পারেন মৃত্যুর এক দিন আগে ফিরিয়ে দিতে জাতীয় সম্মান। যে সম্মান আদায়ের বয়স পার করেছে ৯০টি বসন্ত। আসলে এ প্রত্যাখ্যান তিনি করেননি। করেছেন তাঁর অগুনতি অনুরাগী। তাঁদেরই ভালবাসায় বেঁচে শিল্পী, গান ছাড়ার ১৭ বছর পরও। আরও ১০০ বছর বেঁচে থাকবেন। যিনি যেতে-যেতে বলে গিয়েছেন, “আমার দেশ আমাকে ভালবাসে। ২০০৩ সালে গান ছেড়েছি। এটাই আমার সাধনা। এই নিয়েই আমি থেকেছি। কোনও কিছুর দিকে তাকাইনি। পদ্মশ্রী নেওয়ার কথা জীবনেও ভাবিনি। আমাকে যা ভালবাসে আমার দেশ, সেখানে পদ্মশ্রী হোক আর যে :শ্রী-ই হোক, কিছুই লাগবে না। আমাকে যে ভালবাসা দিয়েছে,দেশের মানুষ, সেখানে আমি আর কিছুই দেখি না।”

হে গীতশ্রী আপনিও আমাদের মনে জলন্ত আগ্নেয়গিরির এক তীব্র স্ফুলিঙ্গ হয়েই থেকে যাবেন। সত্যি! আপনিই শিখিয়ে গেলেন কীভাবে শিরদাঁড়া সোজা রেখে যেতে হয়।

— বিজয় সরকার।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.