কুড়িগ্রামের সীমান্তে অবাধে দুদেশের মানুষের মেলামেশা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পরার আশংকা
আল এনায়েত করিম রনি,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ-ভারতের সীমানায় কঁাটাতার না থাকার সুযোগে দু’রাষ্ট্রের নাগরিকগণ অবাধে চলাফেরা করায় কুড়িগ্রামে বাড়ছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের শংকা। করোনা মোকবেলায় জেলার সরকারি বিভাগগুলো একত্রে কাজ করছে বলে জানানো হলও সীমান্তে ঢিলেঢালা অবস্থা। এদিকে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সীমান্তবাসীর মধ্যে নেই কোন ভয়ডর।
সরেজমিনে দেখাযায়,কুড়িগ্রামের শিমুল তলা এলাকায় ১০২১সীমান্ত পিলার সংলগ্ন নেই কোন কাঁটাতার। কলসের আকৃতি মতোই এখানে ভারত-বাংলাদেশ আলাদা হয়েছে। এই সীমান্তে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলার গোপালগঞ্জ থানার ফাইসার কুটি গ্রাম এবং বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের ছোট খামার গ্রাম। দীর্ঘ প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকায় নেই কোন কঁাটাতার। ফলে ভারতের নাগরিকগণ প্রায় সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে হাট-বাজার করে থাকেন। এই দুই গ্রামের মানুষের গরু-ছাগলকে ঘাস খাওয়ানোসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিবেশির মতোই চলাফেরা করে থাকেন। শুধুমাত্র এখানে পিলার দ্বারা দু’রাষ্টকে বোঝানো হয়েছে। এমন কাঁটাতার বিহীন ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি গ্রামেও একই অবস্থা। এখানে ভারত-বাংলাদেশের ঘর দেখে বোঝার উপায় নেই কে কোন দেশের বাসিন্দার বসত। বিএসএফ পাহাড়া আর সীমান্ত পিলার দিয়েই দু’দেশকে ভাগ করা হয়েছে। এই এলাকায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার দীঘলটারী গ্রাম। এখানেও নেই কোন কাঁটাতার। কাঁটাতার বিহীন এই সীমান্তে এমন চিত্র দৃশ্য দেখা যায় যেখানে দু’টি পুকুরের মাঝের পার দিয়ে দেশ ভাগ হয়ে গেছে। তবে এসব এলাকায় বিজিবি- বিএসএফ’র চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাদে চলাফেরা করে দু’রাষ্টের নাগরিকগণ। নেই কোন ভেদাভেদ।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র তথ্য মতে, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার সাথে ভারতের তিনটি রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে ২৭৮দশমিক ২৮কি.মি.। এরমধ্যে প্রায় ৩২কি.মি. সীমান্তে নেই কাঁটাতার। এছাড়াও নদী পথ রয়েছে ৩১৬কি.মি.। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ,আসাম রাজ্যের সীমানায় কুড়িগ্রাম-২২বিজিবি’র অধীনে ১৯৮কি.মি. সীমান্ত। জামালপুর-৩৫বিজিবি’র আওতায় সীমানা প্রায় সাড়ে ৪৬কি.মি. কাঁটাতার। আর ওপারে ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্য। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানায় লালমনিরহাট-১৫বিজিবি’র অধীনে ৩৬কি.মি. সীমান্ত। এসব সীমন্তের বেশ কিছু পয়েন্ট দিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু,মাদকসহ চোরাচালান এবং অবৈধভাবে অনুপ্রবেশরও ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও কাঁটাতার বেষ্টিত ভারতের অভ্যন্তরে বাসিন্দাদের কৃষি কাজের জন্য বিএসএফ গেট খুলে দেয়ায় নো-ম্যানস ল্যান্ডে এসে চাষাবাদ করছে সেখানকার কৃষকগণ। প্রায় সময় দু’রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা মেলামেশাও করে থাকে। এতে করে দেশের বৃহৎ সীমান্ত বেষ্টিত জেলায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শংকা সাধারণ মানুষের মাঝে। সীমান্তবাসীর মাঝে করোনার আতংক থাকলেও অনেক জায়গার বাসিন্দার মধ্যে করোনার প্রভাবের বিষয়ে নেই কোন ভাবনা চিন্তা। প্রশাসনের চোখ ফঁাকি দিয়ে করোনা দুর্যোগের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় বেড়াতে এসে কাঁটাতার ঘেঁষে সেলফি তুলতে ভুল করছেনা।
ছোট খামার গ্রামের বাসিন্দা শমসের আলী বলেন,এখানে কোন কাঁটাতার নাই। কলসের মতো মুখ রয়েছে দু’রাষ্ট্রের সীমানা। দু’ পারে বাংলাদেশ আর মাঝখানে ভারত। প্রায় দু/তিন কিলোমিটার দূরে কাঁটাতার রয়েছে। এখানে আমারা দু’রাষ্ট্রের মানুষ হলেও প্রতিবেশির মতই বসবাস।
একই এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন,শুধুমাত্র পিলার দিয়েই ভারত-বাংলাদেশ বোঝানো হয়েছে। গরু-ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে গেলে মাঝে মধ্যে তাদের গ্রামে যায় বাংলাদেশিরা। ওরাও আসে বাজার হাট করতে। তবে এখন কমে গেছে। তবে ভারতে যে ভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে তাতে আমরা চিন্তিত। কখন যে কিভাবে আসে বলা মুসকিল।
বাঁশজানি গ্রামের বাসিন্দা শামিম বলেন,এই গ্রামে ঘরবাড়ি দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটা ভারত-বাংলাদেশ। পুকুরের পার দিয়েও দু’দেশকে ভাগ করা হয়েছে। বিজিবি-বিএসএফ’র পাহাড়া দেখে আর পিলার দেখে বুঝতে হবে ভারত-বাংলাদেশ।
আজগর আলী বলেন,যেখানে কাঁটাতার দিয়েই গরু,মাদক পাচার হয় সেখানে কাঁটাতার না থাকলে কি হয় সবাই বুঝতে পারে। এসব জায়গা দিয়ে চোরাচালান,মাদক সবকিছুই আসে। বিএসএফ কাঁটাতারের গেট খুলে দিলে ওখানকার কৃষক এসে আবাদ করে। মাঝে মধ্যে গরু-ছাগল আসলে তারা অনায়সে এসে নিয়ে যায়। যাদের আত্নীয় -স্বজন রয়েছে তারা প্রায় সময় বেড়াতে আসে।
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান বলেন,সীমান্তবর্তি এবং বৃহৎ নদ-নদীময় জেলায় হওয়ায় এখানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কিংবা করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ,জেলা প্রশাসন,বিজিবি,পুলিশ প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। করোনার প্রভাব শুরুর পর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ১২১৪জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৩জনের। করোনার সংক্রমণ রোধে টিকা দেয়া হয়েছে ১ম দফায় ৪৬হাজার ১২৮ ডোজ। এবং ২য় দফায় টিকা দেয়া হয়েছে ২৯ মে পর্যন্ত ৩৩হাজার ৪৬৩ ডোজ। এছাড়াও জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন বেড-৫০টি এবং উপজেলায় পর্যায় আরো ৫০টি বেড প্রস্তুত রয়েছে।
কুড়িগ্রাম-২২ ব্যাটালিয়ন(বিজিবি)-র অধিনায়ক লেফটেনেন্টে কর্ণেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন,ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কিংবা করোনা প্রভাব বিস্তারসহ চোরাচালান এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে বিজিবি।