গণটিকার দ্বিতীয় ডোজেও উৎসবের আমেজ
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী গণটিকা কর্মসূচির দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে এ টিকাদান। প্রথম ডোজ নেওয়া ৫০ লাখ ৭১ হাজার মানুষ পাবেন দ্বিতীয় ডোজ। টিকা নিতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে আগ্রহীদের। টিকা গ্রহীতার আনাগোনায় টিকা কেন্দ্রগুলোতে ছিল উৎসবের আমেজ।
গণটিকা কর্মসূচিতে রাজধানীর ১২৯টি কেন্দ্রে তিন দিনে দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫৪টি কেন্দ্র ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৫টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে তিন দিনে ৭০০ জন করে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে কর্মসূচি চলছে। টিকাদানে গতি আনতে এবং গ্রাম পর্যায়ে টিকা দিতে গত ৭ আগস্ট দেশজুড়ে ছয় দিনের গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু করে সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তাতে ৫০ লাখ ৭১ হাজার মানুষ টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। প্রথম ডোজের টিকা যে কেন্দ্রে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় ডোজের টিকাও ওই কেন্দ্রেই দেওয়া হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলছে টিকাদান। প্রথম দফায় রাজধানীর কেন্দ্রগুলোতে দিনে ৩৫০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
এবারের কর্মসূচি তিন দিনে নামিয়ে আনায় প্রতিদিন টিকা দেওয়া হবে ৭০০ জনকে। গণ টিকাদান কর্মসূচিতে ৭ ও ৮ আগস্টের প্রথম ডোজ টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে ৭ সেপ্টেম্বর। ৯ ও ১০ আগস্ট যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তারা ৮ সেপ্টেম্বর পাবেন দ্বিতীয় ডোজ। আর ১১ ও ১২ আগস্ট প্রথম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের ৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শরীফ আহমেদ বলেন, কেন্দ্রে ভিড় থাকলেও এবার ঝামেলা কম হচ্ছে। কারণ নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে না। তবে এক দিনে যেহেতু ৭০০ জনকে দেওয়া হবে, সে কারণে একটু চাপ আছে। আমাদের লক্ষ্য দিনে ৭০০ জনকে টিকা দেওয়া। যতক্ষণ এটা পূরণ না হবে ততক্ষণ টিকা দেওয়া চলবে।
মিরপুর ১০ নম্বর কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে দেখা যায়, দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন মানুষ। এর মধ্যে বৃষ্টি আসায় কিছুটা বিপত্তিতে পড়েন টিকা গ্রহীতারা। নারী-পুরুষ আলাদা লাইনে চলছে টিকাদান। তবে ৭০০ মানুষকে এক দিনে টিকা দিতে চাওয়ায় কেন্দ্রগুলোতে চাপ ছিল বেশি। টিকা নিতে আসা রইছুদ্দিন মন্ডল (৫৫) বলেন, এবার টিকা পাবো কি না সে দুশ্চিন্তা নেই। টিকা কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে প্রথম ডোজ নেওয়া সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে এটাই একটু অসুবিধা।’
রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে গণটিকা কর্মসূচির দ্বিতীয় ডোজ। রাজধানীর বাইরে টিকা কর্মসূচির খবর জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা। গতকাল সকাল ৮টা থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ৮৪টি ও জেলার ১২৬টি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান। টিকা কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কেন্দ্রেই টিকা ফুরিয়ে যায়। পরে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে টিকা এনে সেসব কেন্দ্রগুলোতে আবারও টিকাদান শুরু হয়। খুলনায় গণটিকা কার্যক্রম চলছে ৩০৭টি বুথে। এসব বুথে প্রায় ৬১ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আলী আকবর টিপু বলেন, দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার জন্য সকালের দিকে অনেক ভিড় দেখা গেছে। শৃঙ্খলা মেনে উৎসবমুখর পরিবেশে নিবন্ধিতরা টিকা গ্রহণ করেছেন। রংপুর বিভাগে করোনার দ্বিতীয় ডোজের সিনোফার্মের গণটিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। রংপুরের বিভিন্ন কেন্দ্রে দেখা গেছে টিকা নিতে নারী-পুরুষের ভিড়। তবে অনেক স্থানে স্বাস্থ্য বিধি মানার বালাই ছিল না।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোতাহারুল ইসলাম জানান, গণটিকা কার্যক্রমের দ্বিতীয় ডোজের গণটিকা শুরু হয়েছে। আপাতত টিকার কোনো ঘাটতি নেই। টাঙ্গাইলে করোনার গণটিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে কেন্দ্রগুলোতে ছিল ব্যাপক ভিড়। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবউদ্দিন খান জানান, প্রথম ডোজ টিকা যে কেন্দ্রে দেওয়া হয়েছে, কার্ড নিয়ে একই কেন্দ্রে গেলে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে। নাটোরে গণটিকাদান কার্যক্রমে ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ে ৩৫ হাজার ব্যক্তিকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হবে। নাটোর সদর উপজেলার কাফুরিয়া উচ্চবিদ্যালয় টিকাদান কেন্দ্রে এই কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এবং সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা ও মহানগরে গণটিকা ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। বরিশাল বিভাগের ৩৫৬টি ইউনিয়নের ৩৫৬টি ওয়ার্ড, পৌর শহরের ৫৯টি ওয়ার্ড এবং সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ৩০ কেন্দ্রে চলছে এই টিকা কার্যক্রম। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, ৭ আগস্ট টিকা ক্যাম্পেইনে প্রথম ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে নিয়মিত টিকা কার্যক্রম।