প্রাণী হবে খাঁচামুক্ত, বদলে যাবে মিরপুর চিড়িয়াখানা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : উন্নত দেশের আদলে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানাকে ঢেলে সাজানোর মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। যেখানে বন্য প্রাণীরা খাঁচামুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে। এছাড়াও প্রজাতিভেদে এসব প্রাণীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পাঁচটি প্রাকৃতিক অঞ্চল তৈরি করা হবে। আর নিরাপদ দূরত্ব থেকে দর্শনার্থীদের পর্যবেক্ষণের জন্য দুটি ট্রাম ও দুটি বোটিং রুটসহ থাকবে পৃথক দুটি পথ।
প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ বছর মেয়াদি এই মহাপরিকল্পনা এ বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। মূলত খাঁচায় বন্দি প্রাণীদের বন্যপরিবেশ দর্শনার্থীদের দেখার সুযোগ করে দিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রাণীদের জন্য পাঁচটি পৃথক অঞ্চলের মধ্যে স্থানীয় প্রাণীদের জন্য একটি বাংলাদেশ আবাসিক অঞ্চল, আফ্রিকান প্রাণীদের জন্য একটি আফ্রিকান আবাসস্থল, নিশাচর প্রাণীদের জন্য একটি অঞ্চল এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রাণীদের জন্য আরেকটি অঞ্চল থাকবে।
এছাড়া এই মহাপরিকল্পনায় শিশুদের খেলার জন্য একটি সক্রিয় জোন, একটি সীমানা প্রাচীরের মধ্যে নার্সারি, পুরো এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন, পথচারীদের জন্য বেশ কয়েকটি রাস্তা, বোটিং রুট, পৃথক দুটি গেট ও চিড়িয়াখানার লেকে একটি রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক আব্দুল লতিফ যায়যায়দিনকে বলেন, চিড়িয়াখানাকে প্রাণীবান্ধব করে গড়ে তুলতেই এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে শুধু প্রাণী নয়, দর্শনার্থীরা বন্যপ্রাণী খাঁচার বদলে বনের পরিবেশে দেখার সুযোগ পাবে। তবে আমরা প্রাণী ও মানুষের মধ্যে অদৃশ্য বা প্রাকৃতিক খাঁচা রাখব। যা ভেদ করে বন্যপ্রাণী বেড়িয়ে আসতে পারবে না। আর সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের মধ্যেই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রায় ৭৭ হেক্টর জমিতে ২২৩ প্রজাতির প্রাণী রাখা হবে, যার মধ্যে ১০২ প্রজাতির দেশীয় প্রাণী, ৬৬ প্রজাতির গ্রীষ্মমন্ডলীয়, ৪০ প্রজাতির আফ্রিকান এবং ১৫ প্রজাতির নিশাচর প্রাণী রয়েছে। এছাড়াও শিশুদের জন্য সংক্রিয় বিশেষ জোনে থাকবে ১০ প্রজাতির প্রাণী।
নতুন পরিকল্পনায় বাংলাদেশ অঞ্চলের জন্য ১৭ দশমিক ৬৮ হেক্টর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে, যেখানে ১০২ প্রজাতির স্থানীয় প্রাণীদের জন্য সুন্দরবনের মতো একটি আবাসস্থল তৈরি করা হবে। যেখানে ২৬ প্রজাতির মাছ, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৪ প্রজাতির পাখি এবং ১২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসস্থল থাকবে যা একটি জলাভূমি দ্বারা আলাদা করা হবে।
গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের প্রাণীদের জন্য ১৪ দশমিক ৪৮ হেক্টর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখানে ৬৬ প্রজাতির প্রাণীর জন্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনের আকারে ডিজাইন করা হবে, যার মধ্যে ২৬টি খাঁচায় সাত প্রজাতির সরীসৃপ, ৪৫ প্রজাতির পাখি এবং ১৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী থাকবে।
একই ভাবে আফ্রিকান আবাসিক অঞ্চলটির জন্য ২৩ দশমিক ১৬ হেক্টর জমিতে ৪০ প্রজাতির প্রাণী থাকবে। যার মধ্যে তিনটি প্রজাতির সরীসৃপ, ১৬ প্রজাতির পাখি এবং ২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী রয়েছে। নিশাচর আবাসিক অঞ্চলে জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩ দশমিক ৭৫ হেক্টর জমি। এই এলাকা দেখলে মনে হবে ঘন সবুজ একটি জঙ্গল। যেখানে ১৫টি প্রাকৃতিক খাঁচায় ১৫ প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণ করা হবে।
চিড়িয়াখানায় শিশুদের জন্য নির্ধারিত অঞ্চলে বিনোদন ও শিক্ষার জন্য ৫ দশমিক ৩৮ হেক্টর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেখানে চার প্রজাতির পাখি এবং ছয় প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখা হবে। এছাড়া চিড়িয়াখানায় জলাভূমির জন্য ৩ দশমিক ৪৮ হেক্টর, নার্সারির জন্য ১ দশমিক ১ হেক্টর এবং চিড়িয়াখানার দুটি প্রবেশ পথের জন্য ৩ দশমিক ৫৪ হেক্টর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। আর বহির্গমন এবং গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ৪ দশমিক ৭ হেক্টর এলাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
এসবের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য চিড়িয়াখানা জুড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ পাঁচটি রাস্তা থাকবে। ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দূরত্বের দুটি ট্রাম রাস্তা এবং ২ দশমিক ৪ কিলোমিটারের দুটি বোটিং রুটও মহাপরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পরিকল্পনার মধ্যে চিড়িয়াখানার হ্রদে একটি ভাসমান রেস্তোরাঁ থাকবে যেখানে পাখি ও ডলফিন শো দেখার সুবিধা থাকবে।
চিড়িয়াখানার মহাপরিচালক জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় চিড়িয়াখানার সর্বিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৮ সালে এমন পরিকল্পনা তৈরির জন্য সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি কোম্পানিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছর তারা এই পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়লয়ে জমা দেয়। যদি ডিসেম্বরের মধ্যে মাস্টারপস্ন্যান চূড়ান্ত হয় তাহলে আগামী বছরের শুরুতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ কাজ শুরু হবে।