জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-ভারতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতকে একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ দুটি দেশ একসঙ্গে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান তৈরি হবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির ৬ নম্বর মিলনায়তনে ‘উপমহাদেশে জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাস দমন: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শিরোনামের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার ১৩ তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এই আলোচনা সভা এবং তিন দিনব্যাপী আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি। এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ২০০১ সালে বাংলা ভাই নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা জানান দিলেও তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার সেটিকে সাধারণ ঘটনা বলেছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শূন্য সহিষ্ণুতার কথা বলেছেন। দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে সেভাবেই সাজানো হয়েছে। তারা বড় ধরনের হামলার তথ্য আগে থেকেই শনাক্ত করতে পারছে। পাকিস্তান নানাভাবে গোয়েন্দা দিয়ে বিব্রত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। জঙ্গি হামলা প্রতিহত করতে ভারত গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। একই ভাবে বাংলাদেশও ভারতকে সহায়তা করেছে। উপমহাদেশে সম্প্রীতি রক্ষায় ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে নতুন মাত্রায় জঙ্গি উত্থান হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মুম্বাই হামলার ঘটনা স্মরণ করে আলোচনা সভার বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী মুম্বাই হামলার ঘটনা স্মরণ করে আলোচনা সভার বিশেষ অতিথি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, মুম্বাই হামলার ঘটনা বেদনাদায়ক, যা শুধু শব্দ দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। একটি দেশের জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে। প্রশিক্ষিত কমান্ডো আকারে হামলা চালানো হয়েছে। এই ঘটনা ভোলার নয়, ক্ষমা করার মতো নয়। একটি দেশ ওই হামলায় পৃষ্ঠপোষক ছিল। ১৯৭১ সালে তারা গণতন্ত্র ও নাগরিকের অধিকার চাওয়ায় বাঙালিদের হত্যা করেছিল। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যা হয়েছে, তার সঙ্গে ২০০১ সালের পয়লা বৈশাখ, ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। জঙ্গিবাদীদের কোনো ধর্ম নেই। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অতীতের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের ভবিষ্যৎও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
আলোচক হিসেবে সাংসদ আরমা দত্ত বলেন, জঙ্গিবাদের কারখানা হচ্ছে পাকিস্তান, আর তাদের ঘাঁটি আফগানিস্তান। বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল অবস্থানে আছে। তারা চায় বাংলাদেশকে কঠিন অবস্থায় এনে প্রতিবেশী দেশকে কীভাবে আঘাত করা যায়।
মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, হামলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে জানা গেছে, মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) মূল হোতা ছিল। পাকিস্তান পুরো অঞ্চলের জন্য উপদ্রব। তারা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ করার চেষ্টা করছে। ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে মিরপুরে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠে পাকিস্তানের পতাকা গেড়ে রাখার সঙ্গে যুক্ত ছিল ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন।
ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. আবদুর রশীদ বলেন, বিশ্বজুড়ে বছরে জঙ্গিবাদের হামলার ২১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। হামলাগুলোর দিকে নজর দিলে বোঝা যায়, মারা যায় সাধারণ মানুষ। যাদের সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। মুম্বাইয়ে হোটেল তাজ, রেল স্টেশন, হাসপাতাল, মেট্রো, সিনেমা হলে হামলা চালিয়ে ১৭৫ জনকে হত্যা করা হয়। আহত হয় ৩০০ এর মতো মানুষ। বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান তৈরি হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, দেশে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে জঙ্গিবাদের তৎপরতা বাড়ে। মূল উৎপাটন না করলে জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদ দমনে সাংস্কৃতিক চর্চার কোনো বিকল্প নেই।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, মুম্বাইয়ে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গিবাদী সংগঠন লস্কর-ই তৈয়বার হামলায় ২২ টি দেশের মানুষ হতাহত হয়। পাকিস্তান কীভাবে বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জঙ্গিবাদ রপ্তানিসহ ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞ করে তা ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে দেখা যাচ্ছে। দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আলোচনা শুরুর আগে শিল্পকলা একাডেমিতে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজানে হামলা এবং ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে প্রদর্শিত আলোকচিত্র ঘুরে দেখেন।