জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার অবলম্বন পেল দুই হাত বিহীন পাবনার আলামিন

0

পাবনা প্রতিনিধি : ২৪ বছরের টগবগে যুবক আল আমিন। অসহায় ভংগীতে দাঁড়িয়ে আছে তার চায়ের দোকানে। মানুষজন এসে তার দোকানে নিজে চা বানিয়ে খায়। আল আমিন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে। এছাড়া যে আর কিছুই করার নেই তার। দুই বছর আগে একটি দূর্ঘটনা কেড়ে নেয় আল আমিনের দুটি হাত। শুন্য হাতে বিষন্নভাবে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার। এলাকবাসির সহায়তায় করা একটি ছোট্ট দোকান থেকে অল্প আয়ে কিছুতেই সংসার চলে না তার। বউ শিউলি আর দুই বছরের মেয়ে মাইশাকে নিয়ে অতি অসহায় জীবন আল আমিনের। তার এই অসহায়ত্ব দূর করতে এবার পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। শুভসংঘের তত্ত্বাবধানে আল আমিনের বউকে একটি সেলাই মেশিন, ৩টি ছাগল, ৫টি করে হাস ও মুরগী কিনে দেওয়া হয়েছে। আল আমিনের দোকানের জন্য কিনে দেওয়া হয়েছে অনেক মালামাল।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় ‘অসহায়দের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ’-এর কর্মসূচি হিসেবে আলামিন হোসনকে দেওয়া হয় সেলাই মেশিনসহ তিনটি ছাগল ও ছয়টি করে মুরগি ও হাঁস। আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় ‘অসহায়দের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ’-এর কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুভসংঘের পক্ষ থেকে আলামিনের পরিবারের হাতে নতুন সেলাই মেশিন এবং একই সঙ্গে তুলে দেওয়া হয় তিনটি ছাগল ও ছয়টি মুরগি ও ছয়টি হাস। এসব জিনিস হাতে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন আলামিন। যেন জীবনে বেঁচে থাকার নতুন অবলম্বন হাতে পেলেন অসহায় এই মানুষটি।

আলামিনের হাতে সেলাই মেশিন, ছাগল ও মুরগি তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘ পরিচালক জাকারিয়া জামান, পাবনা বিসিক মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও শুভসংঘ পাবনা শাখার উপদেষ্টা ইদ্রিস আলী বিশ্বাস , শুভসংঘ পাবনা জেলা শাখার উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম ফারুক, আলী আকবর রাজু, ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন, কালের কন্ঠের পাবনা প্রতিনিধি প্রবীর কুমার সাহা, কালের কন্ঠ শুভসংঘের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি শেখ রাফসান যানী সজিব, সাধারণ সম্পাদক সুচিত্রা পূজা, হাবিবুর রহমান, শাহেরা আক্তার উর্মি প্রমুখ।

আলামিন হোসেনের পরিবার । বসবাস করেন পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর বাঙ্গাবাড়িয়া দক্ষিণ পাড়া গ্রামে। অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনো রকমে দিন কাটছিল এই পরিবারের। পাবনা শহরের লাইব্রেরি বাজারে একটি ওয়ার্কশপে শ্রমিকের কাজ করতেন আলামিন হোসেন। ভালই আয় করে সংসার চালাতেন। প্রায় দুই বছর আগে সেখানে একদিন মইয়ে উঠে কাজ করতে গিয়ে অসাবধানতা বশত বৈদুতিক লাইনের সাথে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারাত্মক জখম হয় তার। এতে তার হাত-পা, বুঁক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় । এক পর্যায়ে তার হাতে পচন ধরেলে দুটি হাত কেটে ফেলতে বলেন চিকিৎসকেরা । চিকিৎসা বাবদ করচ হয় প্রায় তিন লাখ টাকা । সংসারে চার ভাইয়ের মধ্যে আলামিন তৃতীয় । বড় ভাইয়েরা পৃথক হয়ে গেছে । ছোট ভাই বাড়িতে থেকে বাবাকে কৃষি কাজে সহায়তা করে । অভাবের সংসার তাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে আলামিন কিছুটা সুস্থ্য হয়ে সামান্য পূজি নিয়ে বাড়ির পাশে ছোট্র একটি বাজারে একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে চকলেট, চা-বিস্কুটসহ অন্যান্য পণ্য সামগ্রী বিক্রি শুরু করে । চেষ্টা করে ঘুরে দাঁড়ানোর । সামান্য আয় দিয়েই কোন রকমে চলে তার সংসার ।
দুই হাত কাটা তাই ক্রেতার পন্য বিক্রির টাকা নিজ হাতে নিতে পারেন না । ক্রেতারা পন্য নিয়ে টাকা দিয়ে যায়। কেউ চা পান করতে চাইলে নিজ হাতে বানিয়ে চা পান করতে হয় । এভাবেই চলে আলামিনের চা স্টল ও মুদি দোকান ।

আলামিনের অভাবের চিত্র নজরে আসে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের। জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার অবলম্বন পায় আলামিন। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় ‘অসহায়দের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ’-এর কর্মসূচি হিসেবে আলামিন হোসেন কে দেওয়া হয় সেলাই মেশিনসহ তিনটি ছাগল ও ছয়টি মুরগি ও ছয়টি হাস। আলামিন জানান আচমকা নতুন সেলাই মেশিন, তিনটি ছাগল ও ছয়টি মুরগি ও ছয়টি হাঁস নিয়ে তাঁর বাড়িতে আসা লোকদের দেখে প্রথমে ভেবে বসেন, ‘এ বুঝি স্বপ্ন!’ মুহূর্তে আনন্দে কেঁদে ফেলেন তিনি। সেলাই মেশিন, ছাগল ও মুরগি হাতে পেয়ে আলামিন বলেন, ‘আল্লাহ আমার দোয়া কবুল হরছে। আল্লাহুর ইশারা না অইলে আমি এত কিছু পাইতাম না। এখন আর চিন্তা করব না। নতুন সিলাই মিশিন পাইছি। তিনটি ছাগল, ছয়টা মুরগি, ছয়টা হাঁস পাইছি। এইতা বাড়াইয়া অনেক আয় উন্নতি করব। আমি বসুন্ধরার (বসুন্ধরা গ্রুপ) জন্যে, বসুন্ধরার চেয়ারম্যান স্যারের জন্যে অনেক অনেক দোয়া করব।

হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন আমি দোয়া করি বসুন্ধরা গ্রুপ যেন সারাদেশে অসহায় মানুষ কে আরও বেশি বেশি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। চর বাঙ্গাবাড়িয়া হাফিজিয়া জামে মসজিদের ইমাম মো : আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘মানবসেবার এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে সহায়তার হাত বাড়ায়নি বসুন্ধরা গ্রুপ। তাদের স্লোগান দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করা। এরই যথার্থতা তারা বারবার প্রমাণ করেছে। এই গ্রামের পক্ষ থেকে আমি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়কে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।’

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.