ভারতে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উলস্নম্ফন

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : শূন্য-শুল্ক বাণিজ্য সুবিধা ও প্রতিযোগিতামূলক দামের ওপর ভর করে ভারতে বাড়ছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি। যা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ইতোমধ্যে ভারতের মধ্যম আয়ের ভোক্তাদের জন্য ফরমাল শার্ট, টপস, ডেনিম, ট্রাউজার, আন্ডারগার্মেন্টস, পোলো শার্ট, সোয়েটার ও টি-শার্টের বড় বাজার দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রেকর্ড ৩৬৫ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে যা এক বছর আগে একই সময়ে ২৩১ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন থেকে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় জনসংখ্যার দেশ ভারতে মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর প্রসারের কারণে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। অনেকেই বাংলাদেশে উৎপাদিত গার্মেন্টস আইটেম কম দামের কারণে পছন্দ করেন।

কারণ তারা ভারতীয় দামি পোশাক কেনার সক্ষমতা রাখেন না। অনেক পশ্চিমা পোশাক খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ডের আউটলেট রয়েছে ভারতে। তারা ভারতীয় বাজারে বিক্রি করার জন্য বাংলাদেশ থেকে পোশাকের নানা আইটেম সংগ্রহ করেন এবং স্থানীয় পোশাকের খুচরা আউটলেট এবং ব্র্যান্ডগুলোও বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনে থাকেন। কিছু ভারতীয় পোশাক রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশেও বাংলাদেশি পোশাক পুনরায় রপ্তানি করেন। রপ্তানিকারকরা জানান, অনেক দুবাইভিত্তিক পোশাক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতীয় পোশাক উৎপাদনকারীদের কাছে অর্ডার দেয়। ভারতীয়রা সেই পণ্য বাংলাদেশ থেকে কিনে কারণ এখানে উৎপাদন খরচ ভারতের তুলনায় কম। এইভাবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাসিক ফ্যাশনস’ লিমিটেড ভারতীয় রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে দুবাইভিত্তিক কোম্পানিতে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুলস্নাহ আজিম বলেন, অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী অন্য দেশে পুনরায় রপ্তানির জন্য বাংলাদেশে ভালোসংখ্যক অর্ডার দিচ্ছেন। ভারতে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির এটি একটি বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি। রূপা নিটওয়্যার (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রতি বছর এক লাখেরও বেশি সোয়েটার রপ্তানি করেন ভারতে।

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে উলস্নম্ফন দেখা দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে পাশের এই দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘শিগগিরই ভারতে পোশাক রপ্তানি আরও বাড়বে।’ তিনি বলেন, জুনে বেঙ্গালুরুতে পোশাক সামগ্রীর জন্য একটি ট্রেড শোতে বিজিএমইএর সদস্যরা অংশগ্রহণ করবে। মেলায় অংশ নেবে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম। ভারতীয় উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার জন্য এপ্রিলে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল ভারতে পাঠাবে বিজিএমইএ। বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, ভৌগোলিক কারণেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। এখন থেকে বাড়তে থাকবেই। প্রায় দেড়শ কোটি লোকের চাহিদা মেটাতে ভারতকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতেই হবে। ভারতে পোশাক তৈরি করতে যে খরচ হয়, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করলে তার থেকে অনেক কম পড়ে। সে কারণে সব হিসাব-নিকাশ করেই তারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি পোশাক কিনছে। ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এখন বাংলাদেশের কারখানায় পোশাক তৈরি করে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছে।

এতে তাদের একদিকে যেমন সময় কম লাগছে অনদিকে খরচও কম হচ্ছে। এ ছাড়া গত বছরের আগস্টের প্রথম দিকে ভারত সরকারকে বাংলাদেশের রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্য দ্রম্নত ও সহজ করতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তার ইতিবাচক ফলও পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ভারতের বিশাল বাজার বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য আগামীতে ‘সুদিন’ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। তৈরি পোশাক ছাড়া ভারতে পাট ও পাটজাত পণ্য, পস্নাস্টিক দ্রব্য ও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দক্ষিণ এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ভারতের স্পর্শকাতর পণ্যতালিকা ৪৮০টি থেকে মাত্র ২৫টিতে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়েই কার্যত বাংলাদেশকে ভারতের বাজারে প্রায় শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রদান করা হয়।

২০১৮ সালের এক গবেষণায় বিশ্বব্যাংক বলেছিল, বাণিজ্য সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে। এক সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভারত কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি (সিভিডি) আরোপ করেছিল। ২০১৪ সালে তা প্রত্যাহার করা হয়। এখন পাটজাত পণ্যে ধার্য করা হয়েছে অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি। ফলে ভারতের বাজারে পণ্য ও রপ্তানিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না বাংলাদেশ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে কিছু উদ্যোগ নিলে ভারতে রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন ইন্দোবাংলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক সুবিধা নেই। সেখানে বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য পাঠানো সত্ত্বেও প্রতি বছর আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। অথচ ভারতের বাজারে আমরা প্রায় শতভাগ শুল্ক সুবিধা পেয়েও পোশাক রপ্তানি একটা কাউন্টেবল জায়গায় নিতে পারছি না। বুঝতে হবে সেখানে চাহিদা সৃষ্টিতে কোথায় আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। শুধু পোশাক নয়, সব রপ্তানি পণ্যেরই একই অবস্থা। মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘ভারতে রপ্তানি আশানুরূপ বাড়বে না, যদি আমরা ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা তৈরি করতে না পারি।

তা করতে হলে সবার আগে দরকার গতানুগতিক বা সমজাতীয় পণ্যের রপ্তানির ধারাবাহিকতা থেকে বেরিয়ে আসা এবং নতুন ও বৈচিত্র্যময় পণ্য সেখানে নিয়ে যাওয়া।’ তিনি বলেন, ‘পণ্যভিত্তিক বাজারের সঠিক পর্যালোচনারও দরকার হবে। যার মাধ্যমে চাহিদা আছে এমন পণ্য রপ্তানির জন্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে। এতে স্বাভাবিক নিয়মেই বাড়বে বাজার। কিন্তু এর জন্য নিজেদেরও কিছু কাজ করতে হবে। রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা, উৎপাদিত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও গুণগতমান বাড়ানোতেও নজর থাকা জরুরি। এতে রপ্তানি পণ্যের ন্যায্য দামও মিলবে। তবে এখন একটা বেশ ভালো পরিবেশ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুদেশের সরকারের মধ্যেও বেশ ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। আমার মনে হয়, আমরা কিছু উদ্যোগ নিলে এখন ভারতে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়বে।’

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.