কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে অপরাধী ধরবে পুলিশ

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিশ্বায়নের এই যুগে সহজলভ্য প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পরিসরে দ্রুত বিস্তৃতি ঘটছে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে উন্নত বিশ্বের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি কাজে লাগাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে। বাংলাদেশ পুলিশও যে কোনো অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও নজরদারিতে রাখতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছে।

এ ছাড়া নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানসম্মত প্রযুক্তিনির্ভর তদন্তে গড়ে তোলা হচ্ছে দক্ষ জনবল। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে সাইবার ও ডিজিটাল ফরেনসিক ও ক্রিমিন্যাল ইন্টিলিজেন্স অ্যানালাইসিস (সিআইএ) ল্যাব। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ল্যাব কার্যক্রম শুরু করলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে স্থাপিত অত্যাধুনিক ল্যাবটি আগামী সোমবার উদ্বোধন করা হবে। এই ল্যাব প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেখানে অপরাধীদের অনেক তথ্য ইনপুট দেওয়া থাকবে। কেউ অপরাধ করলে কৃত্রিম বুুদ্ধিমত্তা দিয়ে তাকে অতিসহজেই শনাক্ত করা যাবে।

পুলিশ সূত্র বলেছে, দ্রুততম সময়ে অপরাধ তদন্ত ও অপরাধী শনাক্তকরণ, অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ, অরগানাইজড ক্রাইম, সাইবার ক্রাইম ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ডিটেকশন, সাইবার স্পেস মনিটরিং ও সার্ভিলেন্সে পৃথক চারটি শাখায় একাধিক সেল সিআইএ ল্যাবে। এসব সার্ভিস একটি নির্দিষ্ট ডাটাবেজে সংযুক্ত থাকবে, যা ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫০টি থানার বিভিন্ন অপরাধ, অপরাধের ধরন এবং অপরাধীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও অপরাধীকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের কাজে সহায়তা করবে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অপরাধীদের এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি ও সংরক্ষণ করা হবে। এ জন্য ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন এবং ভেরিফিকেশন সিস্টেমকে (সিআইভিএস) যুগোপযোগী প্রযুক্তি, অপরাধের শ্রেণিবিন্যাস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সংযোজন আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে বর্তমানে সাসপেক্ট আইডেন্টিটিফিকেশন এবং ভেরিফিকেশন সিস্টেম চালু করা হবে, যা পরীক্ষামূলক চালু করা হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের এই ধারাবাহিকতায় অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে সন্দেহভাজন গ্রেপ্তারকৃত অপরাধীদের যাবতীয় তথ্য তাৎক্ষণিক এক ক্লিকে পেতে একটি ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম থাকবে। এর মাধ্যমে অপরাধীর পূর্বের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ও তার বাসস্থান সম্পর্কে সহজেই তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। তা ছাড়া পুলিশ ভেরিফিকেশন, অজ্ঞাত মৃতদেহ শনাক্তকরণসহ অন্যান্য তথ্যাদিও পাওয়া যাবে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে।

এর বাইরেও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ মনিটরিং এবং ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট করতে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হবে। অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে পুলিশের কমান্ড ও কন্ট্রোল, সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ডিজিটাল এক্সেস ও উপস্থিতি, বহিরাগত দর্শনার্থীদের তথ্য, যানবাহনের ডিজিটাল এক্সেস ও এক্সিট সম্পর্কিত সব তথ্য মনিটরিংয়েরও ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে স্থাপিত এই অত্যাধুনিক ডিজিটাল ল্যাবের সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত ক্লোজসার্কিট ক্যামেরাগুলোও সংযুক্ত থাকবে। কোনো চিহ্নিত অপরাধী এই ক্যামেরায় আওতায় এলে কন্ট্রোলরুমে থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমে তাকে শনাক্ত করবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম ল্যাব স্থাপনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, অপরাধীরা এখন যে কোনো অপরাধ করতে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ভবিষ্যতে সাইবার স্পেসে তাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই আমাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছি। ওইসব অপরাধীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা পুলিশে স্থাপিত ল্যাবে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করব।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.