ভোজ্যতেল মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চাহিদার চেয়ে মজুদ বেশি থাকার পরও ভোজ্যতেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারসাজিতে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে অভিযান শুরু করা হয়েছে। খোলা ভোজ্যতেলের পর এবার দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। ক্রেতারা আতঙ্কিত হয়ে বেশি পরিমাণে ভোজ্যতেল সংগ্রহ করছেন। অথচ চাহিদার তুলনায় এবার বেশি পরিমাণে ভোজ্যতেল মজুদ রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। এই চাহিদার বিপরীতে এবার আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ টন এবং স্থানীয় উৎপাদন বিশেষ করে সরিষাসহ অন্য তেলবীজ থেকে আরও উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার টন। সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টন ভোজ্যতেলের বেশি মজুদ রয়েছে। শুধু রমজান মাসে প্রয়োজন হবে আড়াই থেকে ৩ লাখ টন। রমজানের চাহিদার তুলনায় বর্তমানে দ্বিগুণ পরিমাণ ভোজ্যতেলের মজুদ থাকার পরও অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মুনাফাখোর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কারসাজিতে মেতে ওঠেছে বলে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে সরকার। অথচ এই দুটি দেশ থেকে সয়াবিন ও পামওয়েল তেলের কোনটিই আমদানি করা হয় না।

জানা গেছে, ভোজ্যতেল সঙ্কটের গুজব ছড়িয়ে এবার বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ কারণে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। খোলা পামওয়েল তেলের দাম সব সময়ই কম। কিন্তু এবার সেই তেল সয়াবিনের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে বাজার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত মুনাফা করেছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। দেশে ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল আমদানি করে থাকে। এরাই মিল মালিক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এর পাশাপাশি মিলারদের কাছ থেকে ভোজ্যতেল কিনে এনে ঢাকার মৌলভীবাজার এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের শতাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী সারাদেশের খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের তালিকা রয়েছে। কারা কোন দেশ থেকে কখন কি পরিমাণ ক্রুড এবং সয়াবিন ও পামওয়েলের বীজ আনছেন সেই রিপোর্ট দিতে হয় ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে। আমদানিকারদের সেই তথ্যমতে, আমদানি, উৎপাদন ও মজুদ পরিস্থিতি যথেষ্ট ভাল অবস্থায় রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা বাড়লেও সেই তুলনায় দেশে তিন থেকে চারগুণ দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে প্রতিলিটার সয়াবিন ১১০-১২০ রুপী এবং পামওয়েল ১০০ রুপীতে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বাংলাদেশ ও ভারতের ভোজ্যতেলের প্রধান উৎস ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ব্রাজিল। একই দেশ থেকে আমদানি হলেও ভারতের দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু রোজা সামনে রেখে বাংলাদেশে অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার।

এদিকে, বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি স্বীকার করেন দেশে ভোজ্যতেল নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি হচ্ছে। কালোবাজারি করে দেশে তেলের বাজার অস্থির করা হচ্ছে। ওই সময় তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় সরকারের যৌথ অভিযান পরিচালনা করা ছাড়া আর বিকল্প নেই। ব্যবসায়ীদের অনেক সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভোক্তাদের জিম্মি করে দেশে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না। এটা সরকার হতে দিবে না। মন্ত্রীর এই ঘোষণার একদিন পরে আরও চড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। দ্রুত বোতলজাত ভোজ্যতেল ফুরিয়ে যাচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে পাঁচ লিটারের বোতল ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ৮৫০-৯০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এরপরও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আর খোলা পামওয়েল প্রতিলিটার কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা পর্যন্ত। এ প্রসঙ্গে মালিবাগ রেলগেট কাঁচাবাজারের এক খুচরা বিক্রেতা জনকণ্ঠকে বলেন, বহু কষ্ট করে পাঁচ লিটারের একটি বোতল অনেক বেশি দাম দিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে। কারণ তেল থাকলে ভোক্তাদের কাছে অন্যান্য পণ্যও বিক্রি করা যায়। তিনি বলেন, আগে যারা ভোজ্যতেলের বোতল দিতেন তাদেরকে অর্ডার ও অগ্রিম টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। তারা এখন আসে না। এ অবস্থায় সরবরাহ না বাড়লে বাজার ভোজ্যতেল শূন্য হয়ে পড়বে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে ভোজ্যতেলের আমদানি ও মজুদ বেশি হয়েছে। গত বছরের জুন-জানুয়ারি এই সময়ে সয়াবিন ক্রুড ৪ লাখ ৫৯ হাজার টন, বীজ ৭ লাখ ২ হাজার টন আমদানি করা হয়। চলতি বছরের একই সময়ে তা ক্রুড ৪ লাখ ৮৯ হাজার আমদানি হলেও সেই তুলনায় বীজ কিছুটা কম আনা হয়েছে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.