গৌরীপুরে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধ ভাবে ভেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন

0

মো. হুমায়ুন কবির, গৌরীপর প্রতিনিধি : গৌরীপুর ভাংনামারী ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে নদের বুক। মাটি কাটার যন্ত্র (ভেকু) দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে চরের কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে ১০-১৫ ফুট গভীর গর্ত। ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি পয়েন্টে প্রকাশ্যে দিন-রাত বালু উত্তোলন করলেও এতদিন রীতিমতো চোখ বন্ধ করে বসেছিল স্থানীয় প্রশাসন।

ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্টরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বছরের পর বছর। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ বালু বিক্রির টাকা থেকে কমিশন নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি গভীর রাতে বালু নিয়ে যাওয়ার সময় একটি ট্রাক আটক করে এলাকাবাসী। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফকে বিষয়টি জানালে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন বাপ্পি রহমান নামে স্থানীয় এক বালু ব্যবসায়ীকে।

এর আগে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন ইউনিয়নের বাসিন্দারা। তবে বাপ্পি রহমানের দাবি, তিনি বালু বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত না। জমির মালিকদের সহযোগিতা করতেই ক্রেতাদের সঙ্গে তাঁদের মধ্যস্থতা করিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।

সরেজমিনে ভাংনামারী ইউনিয়নের অনন্তগঞ্জ বাজারের পাশে ভাটিপাড়ায় নদীতে গিয়ে দেখা যায়, ভেকু মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে নদীর চরে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে চরম হুমকির মুখে পড়েছে নদীর পরিবেশ। প্রতিদিন শত শত ট্রাকে বালু সরিয়ে নেওয়ার কারণে চরে গজিয়ে ওঠা গাছপালা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

তবে এলাকার কিছু বাসিন্দা দাবি করছেন, নদীর বুকে এসব জায়গার মালিক তাঁরা। তাঁদের দলিল ও কাগজপত্র রয়েছে। তাঁরা বাপ্পি রহমানের মাধ্যমে বালু বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে ভাংনামারী ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা (নাইভ) মো. আবুল হাশিম বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একাধিক চক্র নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হলেও তাঁদের থামানো যাচ্ছে না, বরং নানা সময়ে হুমকি দিচ্ছেন।’

জমির ব্যক্তিমালিকানার বিষয়ে ভূমি কর্মকর্তা জানান, ভাঙনে মালিকানা জমি অনেক সময় নদীগর্ভে চলে যায়। তবে তখন এর মালিকানা দাবির সুযোগ নেই। শুকনো মৌসুমে চাষাবাদ বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করতে চাইলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।
ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নেজামুল হক সরকার বলেন, তিনি সম্প্রতি নির্বাচিত হয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরই নদীর চর থেকে অবৈধ বালু কাটা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি তাঁর।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, নদীর সব জমির মালিকানা রাষ্ট্রের। কোনো অবস্থাতেই কারও মালিকানা দাবির সুযোগ নেই। ভাংনামারী ইউনিয়নে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির কারণে নদীর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ইতিমধ্যে একজনকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.