গঠন হচ্ছে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ‘ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠন করা হচ্ছে এ কর্তৃপক্ষ।
ওই বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সেবাগুলো অনলাইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের চেয়ারপারসন হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ এপ্রিল গণভবনে তার সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের তৃতীয় বৈঠক। এর আগে ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হলো।
সূত্র মতে, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে দুর্নীতি হ্রাস ও স্বচ্ছতা বেড়েছে। কাজের গতি বেড়েছে ও জনসাধারণের হয়রানি দূর হয়েছে। সর্বোপরি সরকারের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। তিনি বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে গ্রাম ও শহরের মধ্যে যাতে কোনো ডিজিটাল বৈষম্য সৃষ্টি না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৈঠকে তিনি আরও বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে বর্তমান বাংলাদেশকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে পারব এবং শিক্ষা, শিল্প-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিকসহ সব দিক থেকে এগোতে পারব।
বৈঠকে জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, সব ধরনের লেনদেন এখন অনলাইনে করা হচ্ছে। তিনি ডিজিটাল কর্তৃপক্ষ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের পরামর্শ দেন। বাণিজ্য সচিবের এই প্রস্তাবের পর এটি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের মধ্যে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠন প্রসঙ্গে বলা হয়, এটি গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। ওই নির্দেশনার পর ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে দ্রুত ই-কমার্স ব্যবসার সম্প্রসারণ হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালে এ বাণিজ্য ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। ই-কমার্স সম্প্রসারণের পাশাপাশি প্রতারণাও বাড়ছে। যদিও প্রতারণা বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের পর ই-কমার্স সেলও এটির অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আগামীতে ই-কমার্স বাণিজ্য করতে হলে এই কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এটির অন্যান্য কাজের মধ্যে থাকবে দেশে ও বিদেশের ব্যবসা নিয়ে গবেষণা, ঝুঁকি মূল্যায়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এছাড়া করপোরেট সেবা, ব্যবসার পর্যবেক্ষণ বিভাগ ও ব্যবসার গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে এখানে। পৃথক একটি আইনের মাধ্যমে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করা হবে। থাকবে এ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব আইনে পরিচালিত আদালত ব্যবস্থা। এছাড়া আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য, স্থানীয় বাজার তদারকি করবে এটি।
সূত্র আরও জানায়, ই-কমার্স বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই কমিটির প্রধান হলেন, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান। কমিটি ইতোমধ্যেই একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে মন্ত্রিসভা কমিটিতে।
ওই প্রতিবেদনে দুটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়। প্রথমটি হচ্ছে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠন, দ্বিতীয়টি ভোক্তাসংশ্লিষ্ট সবগুলো আইনের সংশোধনী আনা। বর্তমান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন, কমিউনিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন আইন রয়েছে। এগুলোকে যুগোপযোগী করার সুপারিশ করা হয়েছে। জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠন হলে। ই-কর্মাস, এফ-কমার্স (ফিজিক্যাল বাণিজ্য)-সহ সব ধরনের বাণিজ্য এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এটি প্রথমে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। সেখান থেকে স্থানান্তর করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এ নিয়ে কাজ চলছে।
জানা গেছে, চীনে এ ধরনের একটি বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এটির নাম অ্যারিজোনা কমার্স অথরিটি (এসিএ)। এ কর্তৃপক্ষ চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ফোকাস করছে। দেশটির কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নতি করছে। সরকারি সংস্থা হলেও এটি বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বেশি কাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যকে একটি শৃঙ্খলায় আনতে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে। আইনগুলো যুগোপযোগী না থাকায় এখন স্থানীয় বাজারগুলোতে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।