যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা বন্ধের আহ্বান
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত বন্ধের দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ৭৭তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণে তিনি এ দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী কাউকে শাস্তি দিতে একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সারা বিশ্বে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের চলমান সংঘাত ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে অস্থিরতা, সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দুরূহ করে তুলেছে। এ দেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে মানবাধিকার ও শান্তির প্রতি অঙ্গীকার তুলে ধরেন। জাতিসংঘ ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি কভিড মহামারির শিক্ষা নিয়ে এটি সংস্কারের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং আর্থিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালনি সংকটের মতো বৈশ্বিক ্রতিকূলতাগুলোর রূপান্তরমূলক সমাধানের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ব্যতীত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বরাবরের মতো এবারও জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষাগুলোতে তাত্ক্ষণিকভাবে সেই ভাষণ অনুবাদ করা হয়।
পরিস্থিতি সংকটময়, সংহতির ডাক : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসের মহামারির মারাত্মক প্রভাব বিশ্ব যখন সামলে উঠতে শুরু করেছে, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে নতুন করে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়তাপ্রার্থী ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এখন আরো প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে। বর্তমানে আমরা এমন একটি সংকটময় সময় অতিক্রম করছি, যখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করা আবশ্যক। ’
ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাত বন্ধের দাবি : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব শুধু একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সব মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসংকটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। ’
শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটি মাত্র পৃথিবী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই গ্রহকে আরো সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। ’
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি : মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে স্বদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে তাদের গণহারে বাংলাদেশে প্রবেশের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে গত মাসে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য অংশীজনকে নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে আরো দুরূহ করে তুলেছে। আশা করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তাদের প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তা সর্বস্তরে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে। মানবপাচার, মাদক চোরাচালানসহ আন্ত সীমান্ত অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পরিস্থিতি উগ্রবাদকেও ইন্ধন দিতে পারে। এ সংকট প্রলম্বিত হতে থাকলে তা এই উপমহাদেশসহ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
জাতিসংঘের নেতৃত্বকে সমর্থন, সংস্কার দাবি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রমাণ করতে হবে, সংকটের মুহূর্তে বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো জাতিসংঘ। তাই সর্বস্তরের জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনের জন্য জাতিসংঘকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সবার প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধ বা একতরফা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা-পাল্টানিষেধাজ্ঞার মতো বৈরীপন্থা কখনো কোনো জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়। ’
‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ’ গঠন করায় জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ওই গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তিনিও বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কাজ করছেন। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু প্রণীত পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’, জোট নিরপেক্ষ অবস্থান এবং শান্তির প্রতি অঙ্গীকার তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারি হতে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সবাই নিরাপদ নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়’। এই অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘসহ আমাদের অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাস্তবিক ও অত্যাবশ্যক সংস্কার করা উচিত। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য আরো কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়। ’
টিকা পাওয়ার যোগ্য শতভাগ মানুষকে টিকা দিয়েছে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে করোনা মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন কৌশল ও সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মহামারি থেকে আমাদের নিরাপদ উত্তরণের মূল চাবিকাঠি হলো টিকা। এই টিকা সরবরাহের জন্য আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এর কোভ্যাক্স ব্যবস্থা এবং আমাদের সহযোগী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানাই। ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে টিকা পাওয়ার যোগ্য শতভাগ মানুষকে আমরা টিকা দিয়েছি। ’
অন্তর্ভুক্তিমূলক শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ার উদ্যোগ : প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শান্তিপূর্ণ সমাজ এবং সামাজিক সম্প্রীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন সাফল্য ও অর্জন বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন।
নিষেধাজ্ঞা-পাল্টানিষেধাজ্ঞায় অর্থনীতিতে চাপ : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা-পাল্টানিষেধাজ্ঞার ফলে সরবরাহব্যবস্থায় ব্যাঘাত এবং জ্বালানি, খাদ্যসহ নানা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে আমাদের মতো অর্থনীতি মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার জন্য এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু বদ্বীপে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নীত হওয়ার পথে। তবে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সংকট আমাদের টেকসই উত্তরণের পথে গুরুতর প্রতিকূলতা সৃষ্টি করেছে। আমাদের উন্নয়নের অংশীজনদের কাছে বর্ধিত এবং কার্যকর সহযোগিতার আহ্বান জানাই। এ বিষয়ে দোহা কর্মসূচিকে আমরা স্বাগত জানাই। ’
মজবুত অর্থনীতির জন্য উন্নত অবকাঠামো : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “উন্নত ভৌত অবকাঠামো মজবুত অর্থনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এ জন্য আমরা নদীর তলদেশের টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমসহ টেকসই বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ করছি। আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’। এটি বাংলাদেশের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজতর করবে এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে। এই সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১১.২ থেকে ১.৩ শতাংশ হারে অবদান রাখবে।
জলবায়ু সংকটে স্থবির উন্নয়নযাত্রা : প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবকে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর ভাঙার একটি দুষ্টচক্র আমরা অতীতে দেখেছি। আমাদের এখনই এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ’
প্রধানমন্ত্রী ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’সহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিতে থাকা অন্য দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত আছি। অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কার্যক্রমের প্রসারের জন্য আমি বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানাই। ’
অভিবাসনযাত্রা অনিশ্চিত : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “অভিবাসীরা এখনো তাঁদের অভিবাসনযাত্রায় অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। তাঁরা তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী অংশীদারত্ব এবং সংহতি বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন’ এবং এর ‘অগ্রগতি ঘোষণা’ আমাদের এ বিষয়ে একটি চমৎকার রোডম্যাপ দিয়েছে। ”
প্রযুক্তিগত বিভাজন দূর করার তাগিদ : প্রধানমন্ত্রী চলমান বৈশ্বিক সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, এসব সংকট অনেক উন্নয়নশীল দেশের বিগত কয়েক দশকের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে স্থবির করে দিচ্ছে। এই মুহূর্তে ২০৩০-এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা তাদের অনেকের কাছেই একটি অধরা স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ওই দেশগুলোর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, কৃষিসহ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত ক্ষেত্রগুলোতে সুনির্দিষ্ট সহায়তার তাগিদ দেন। তিনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ও ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত বিভাজন দূর করার আহ্বান জানান।
সামুদ্রিক সম্পদ নিয়ে বিশ্বব্যাপী অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পর সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। আমরা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে আমাদের সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাপী অংশীজনদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করি। ’
তিনি বলেন, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘের কনভেনশনের বিধানগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এ বিষয়ে যেকোনো দুর্বলতা উত্তরণের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার এবং জাতীয় এখতিয়ারের বাইরের অঞ্চলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক আইন, যা ‘বিবিএনজে’ নামে পরিচিত, সেটি প্রণয়নে আরো তৎপর হওয়ার জন্য সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানাই।
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও বিশ্বশান্তিতে প্রতিশ্রুতি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধসহ সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের কথাও জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মূল কারণগুলোর সমাধান ছাড়া টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের বর্তমান সভাপতি হিসেবে আমরা সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে বহুমাত্রিক অংশীজনদের একসঙ্গে কাজ করার একটি প্ল্যাটফরম তৈরিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ’
সন্ত্রাসের ব্যাপারে শূন্য সহনশীলতা : শেখ হাসিনা সব ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিষয়ে বাংলাদেশের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি অনুসরণের কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনোরূপ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা জনগণের ক্ষতি হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড সংঘটিত হতে দেই না। ’
প্রধানমন্ত্রী সাইবার অপরাধ ও সাইবার সহিংসতা মোকাবেলায় একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যতামূলক চুক্তি প্রণয়নে একসঙ্গে কাজ করতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানান।
মানবাধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অঙ্গীকার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবাধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা একটি সামগ্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পন্থা অবলম্বন করেছি। ’
শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের ১৮ বছরে ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করা, হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার ও কল্যাণে আইনি বিধিবিধান প্রণয়নের কথা জানান।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অধীকৃত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্তের ভিত্তিতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ও রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমকে নির্ধারণ করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি বাংলাদেশের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। ’
যুদ্ধ, হত্যা, ক্যুর ভয়াবহতা স্মরণ : প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শেষাংশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি, শরণার্থী হিসেবে বিদেশে ছয় বছর অবস্থান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ৩০ লাখ মানুষকে হত্যার তথ্য তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধের ভয়াবহতা, হত্যা-ক্যু-সংঘাতে মানুষের যে কষ্ট-দুঃখ-দুর্দশা হয়, ভুক্তভোগী হিসেবে আমি তা উপলব্ধি করতে পারি। তাই যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই; মানবকল্যাণ চাই। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি চাই। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বিশ্ব, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে চাই। আমার আকুল আবেদন, যুদ্ধ, অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। সমুন্নত হোক মানবিক মূল্যবোধ। ’ প্রধানমন্ত্রী সবাইকে একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে একটি উত্তম ভবিষ্যৎ তৈরির পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।