বিএআরআইয়ের নতুন প্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে কাঁঠালের চিপস

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : গুণগতমান বজায় রেখে বিভিন্ন ফল ও সবজি দিয়ে মুখরোচক শুকনো পণ্য তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের একদল বিজ্ঞানী। ফ্রিজ ড্রায়ার ব্যবহার করে এসব পণ্য উৎপাদন করা যাবে। এর ফলে বিভিন্ন মৌসুমে উৎপাদিত বাড়তি ফল ও সবজির অপচয় রোধ হবে। পাশাপাশি সারা বছরই উৎপাদন করা যাবে শুকনো পণ্য। এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি হবে, পাশাপাশি তৈরি হবে স্থানীয় বাজার। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন কৃষিপণ্য বাণিজ্যিকীকরণে ফ্রিজ ড্রাইড পণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জানা গেছে, বিএআরআইয়ের পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ সম্প্রতি জাতীয় ফল কাঁঠাল থেকে ২০টিরও বেশি পণ্য তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বর্তমানে কাঁঠালের জুস, জ্যাম, জেলি, আচার, চাটনি, পাউডার, চিপ্স, কাটলেট, চিজ, আইসক্রিম, সিঙ্গাড়া, সমুচা, ভেজিটেবল রোল, স্যান্ডউইচসহ অনেক খাদ্যপণ্য উৎপন্ন করে তা বাজারজাত করছেন অনেক মাইক্রো ও কটেজ উদ্যোক্তারা। দিন দিন এগুলোর চাহিদাও বাড়ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি থেকে শুরু করে বড় উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন। এতে কমছে কাঁঠালের অপচয়।

নতুন এ প্রযুক্তি দিয়ে শুধু কাঁঠালই নয় আম, আনারস, কলা, পেয়ারা, পেঁপেসহ নানা ধরনের মৌসুমি ফল থেকে পণ্য তৈরি করা যাচ্ছে। এতে দেশে ও বিদেশে বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। পারিবারিক আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। প্রক্রিয়াজাতকৃত এসব খাবার দেশের বিভিন্ন কৃষি বাজার, সুপারশপ, হোমমেড ডেলিভারি ও অন্যান্য ই-প্লাটফরমের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। শক্তিশালী হচ্ছে কৃষি অর্থনীতির ভিত।

নতুন প্রযুক্তিতে ফল ও সবজি থেকে পণ্য তৈরিতে কোনো ধরনের রং, রাসায়নিক দ্রব্য, তেল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। সম্পূর্ণ নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এসব খাদ্য পণ্য সারাবছরই ভোক্তাদের চাহিদা মেটাবে।

যেভাবে ব্যবহার হয় ফ্রিজ ড্রায়ার প্রযুক্তি

প্রযুক্তিটির প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর বা উদ্ভাবক বিএআরআইয়ের পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌস চৌধুরী। তিনি জানান, এ প্রযুক্তিতে নরমাল ডিপ ফ্রিজ ও ফ্রিজ ড্রায়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ফল বা সবজিকে যথাযথভাবে পরিচর্যা করে প্রথমে ডিপ ফ্রিজে নির্দিষ্ট সময় রাখা হয়। মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পর্যায়ক্রমে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা রাখলে ফল ও সবজি থেকে পানি বের হয়ে আসে। এতে ফল ও সবজির রং, আকার ও পুষ্টিগুণ প্রায় অপরিবর্তিত থাকে এবং মচমচে হয়। তিনি বলেন, কাঁঠাল চিপস তৈরি করতে হলে পরিপক্ব হওয়ার ঠিক পূর্বের অবস্থায় খাজা টাইপের কাঁঠাল নির্বাচন করে কোষগুলোকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আকারে সøাইস করতে হবে। আকার এবং গুণগতমান ঠিক রাখতে এতে ১০-১৫% সুগার সিরাপ যোগ করতে হয়। পরে এগুলো প্যাকেটে রেখে ডিপ ফ্রিজে ১০-১২ ঘণ্টার মতো রাখতে হবে। এর পর টুকরোগুলোকে ফ্রিজ ড্রায়ারে পর্যায়ক্রমে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ড্রাইং করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় খুব ধীরগতিতে কাঁঠালের টুকরা থেকে পানি হয়। ফল বা সবজির প্রকৃত রং বজায় থেকে এটি একবারে মচমচে তেলে ভাজা চিপ্সের মতো পরিণত হবে যা খুবই আর্কষণীয়। এ চিপ্স স্বাভাবিক পলিথিন মোড়কে (পলিপ্রপাইলিন মোড়ক) রাখলে এক মাস রাখা যাবে। তবে ৫০-৬০ মাইক্রোন অল্প পুরুত্ব ও ফয়েল মোড়কে রাখলে ৬ মাসের অধিক সময় পর্যন্ত ভালো থাকবে।

উৎপাদন খরচ : ড. ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক উন্নত দেশগুলোয় এ প্রডাক্ট বিভিন্ন সুপারশপে পাওয়া যায় এবং সেখানে ১০০ গ্রাম ফ্রিজ ড্রাইড চিপস্রে মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বা আরও বেশি। আমাদের দেশে খরচ বলতে ড্রায়ারের খরচ ও উৎকৃষ্টমানের খাজা টাইপের কাঁঠাল লাগবে। এ ছাড়া অন্য তেমন কোনো খরচ নেই। যে ফ্রিজ ড্রায়ার ব্যবহার করা হবে, সেটি যদি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়, তা হলে শুরুতে একটু বেশি বিনিয়োগ করতে হবে এর পর সেই ড্রায়ারটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যাবে। যদি সরকারিভাবে বা কোনো প্রকল্প থেকে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়, তা হলে এ ড্রায়ারটি স্থানীয়ভাবে ডেভেলপ করা হবে বা নিজেদের প্রযুক্তিতে তৈরি করা হবে। এ ক্ষেত্রে অনেক অর্থের যেমন ব্যাপক সাশ্রয় হবে তেমনি উন্নত ও গুণগুতমান সম্পন্ন প্রডাক্ট অনায়াসে তৈরি করা যাবে।

পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান মো. হাফিজুল হক খান আমাদের সময়কে বলেন, প্রযুক্তিটির ব্যবহার এখন সময়ের দাবি। যদিও প্রাথমিকভাবে যন্ত্রটি ব্যয়বহুল কিন্তু উৎকৃষ্টমানের নিরাপদ খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে ফল ও সবজির বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়াজাতকরণে খুবই প্রয়োজন। এটি আমাদের বড় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে এবং দেশের সহজলভ্য কাঁচামাল ব্যবহারে তৈরিকৃত পণ্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূণ্য অবদান রাখবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.