পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ দেশের উন্নয়নে কাজ করছে- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম
নিজস্ব প্রতিনিধি : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের সমঅধিকারে বিশ্বাস করে। মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন সাংবিধানিকভাবে একজন বাঙালি যে অধিকার ভোগ করবে, সে অধিকার পার্বত্য অঞ্চলের মানুষরাও ভোগ করবে। সংবিধানে বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। এর পাশাপাশি অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীকে সমতাভিত্তিক জায়গায় আনার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার কথাও সংবিধানে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের পশ্চাদপদ মানুষদের অধিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আসছেন। সেভাবেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষরা দায়িত্বশীল হয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
আজ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১২-১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম আরও বলেন, বিস্ময়কর সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ পরিবেশ যে অঞ্চলে বিরাজমান সেটা পার্বত্য অঞ্চল। এ কারণে বাংলাদেশকে বলা হয় সৌন্দযের লীলাভূমি। পাহাড়ের মানুষ-সমতলের মানুষ, পাহাড়ের সংস্কৃতি-সমতলের সংস্কৃতি একাকার হয়ে আছে আমাদের এ বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভেতর। পার্বত্য অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতি অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। তাদের ভাষা, প্রচলিত প্রথাগত জীবনযাপন, তাদের জীবন বৈশিষ্ট্য এগুলোকে ধরে রাখা না গেলে অপূর্ব সৌন্দর্যের সমন্বিত এক বাংলাদেশ এক সময় থাকবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র সভাপতিত্বে এসময় মিজ বাসন্তী চাকমা এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম। এসময় অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যেন্দ্র কুমার সরকার, অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব প্রশাসন আলেয়া আক্তার, যুগ্মসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, যুগ্মসচিব হুজুর আলীসহ মেলার অংশীজন উপস্থিত ছিলেন।
পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি সভাপতির বক্তব্যে বান্দরবান জেলার দুর্গম এলাকার একসময়কার কথা তুলে ধরে বলেন, একসময় দুর্গম থানচি এলাকা যেতে ৪ দিন ও আসতে ৩ দিন সময় লাগতো। সেখানে যাতায়াতের কোনো পাকা সড়ক ছিল না। সেখানকার ছেলেমেয়েরা উচ্চতর ডিগ্রী থেকে বঞ্চিত ছিল। সেখানে এসএসসি পরীক্ষার সেন্টার ছিল না, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। একসময় থানচি এলাকায় কোনো এসএসসি পাশ ছেলে মেয়ে পাওয়া যেতো না। এখন সে এলাকায় উচ্চ বিদ্যালয় হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষার সেন্টার হয়েছে। মেয়েদের স্কুল হয়েছে, কলেজ হয়েছে, হাসপাতাল হয়েছে, উপজেলা কমপ্লেক্স হয়েছে। আজ সেখানে মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। যেসব এলাকা দুর্গম অঞ্চল, সেসমস্ত এলাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাড়া, মহল্লা, বিদ্যালয়সহ ৪২ হাজার ৫০০ পরিবারের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায়। মন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আমলে পার্বত্য অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কাজু বাদাম, কফি, আখ, কমলা, কলার চাষ করে এখানকার কৃষকরা স্বাবলম্বি হচ্ছে। সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য অঞ্চল দেশের জন্য সম্পদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় পার্বত্য অঞ্চলে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। মন্ত্রী বীর বাহাদুর আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুসারে পার্বত্য অঞ্চলের এক ইঞ্চি জায়গাও খালি রাখা হবে না। সমতল অঞ্চলগুলোতে সেচের জন্য নালা তৈরি করে পানির সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ক্রীক তৈরি করে সেচের জন্য আশে পাশে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আধুনিক সেচ সরঞ্জামের মাধ্যমে বাংলাদেশের এক দশমাংশ এলাকা পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগুচ্ছে। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি আগামিতে পার্বত্য অঞ্চল হবে এ দেশের সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা। পার্বত্য অঞ্চলের কৃষিজ পণ্য, ফল-ফসলের ব্রান্ডিংয়ের জন্য, প্রচারের জন্য, জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রতিবছর পার্বত্য মেলার আয়োজন করা হয় বলে জানান পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এর আগে প্রধান অতিথি, সভাপতি ও বিশেষ অতিথিগণ পার্বত্য মেলা-২০২৩ এর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
পরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। প্রধান অতিথিসহ সকলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।