জুলাইয়ে চালু সর্বজনীন পেনশন
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশে একটি সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করা দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতিবারই বাজেটে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন তিনি। অবশ্য জীবদ্দশায় তিনি তা দেখে যেতে পারেননি। তার উত্তরসূরি বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে দেশে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করতে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন হওয়ার পর দ্রুতই জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দিন অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তার আগে তহবিল, কর্মসূচি ইত্যাদির জন্য বিধিমালা তৈরি করা হবে। সূত্র জানায়, পরীক্ষামূলক চালু করার আগে কর্তৃপক্ষের একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষের জন্য একটি কার্যালয় নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ১৮ বছরের বেশি বয়সী দেশের সব নাগরিকই যে পেনশনব্যবস্থার আওতায় আসছেন, সেটি এখন নিশ্চিত হয়েছে। বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে সরকার এ ব্যাপারে আইন করে ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। তবে এটি ঐচ্ছিক। কেউ চাইলে এ সুবিধা না-ও নিতে পারেন।
জানা গেছে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও পেনশনের আওতায় আসবেন। তবে আপাতত সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।
বর্তমানে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীরা অবসরের পর পেনশন-সুবিধা পান। আইনে বলা হয়েছেÑ সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও অংশ নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ নির্ধারণ করবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের চাঁদার একটি অংশ দেবে সরকার। চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন পাবেন। একজন পেনশনধারী পেনশন পাবেন আজীবন। পেনশনে থাকাকালে ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে পেনশনধারী মারা গেলে বাকি সময়কালের জন্য মাসিক পেনশন পাবেন তার নমিনি।
সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় আপাতত এক হাজার টাকা করে রাখা হলেও মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়েও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন নাগরিকরাÑ এমন কথাই চিন্তা করছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, জনপ্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে নিলে ১০ বছর পর পেনশন তহবিলের আকার দাঁড়াবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। বাড়তি চাঁদা যোগ করলে তা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ তহবিলের অর্থের একটা অংশ দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে খাটানো হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এখন সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) সংক্রান্ত বিধিমালা তৈরি করছে। এটিসহ বর্তমানে চারটি বিধিমালা তৈরির কাজ চলছে। অন্য তিনটি হচ্ছেÑ পেনশন তহবিলে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা ও নিবন্ধনপ্রক্রিয়া বিধিমালা, নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ, চাকরির মেয়াদ ও শর্তসংক্রান্ত বিধিমালা এবং কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা।
১৮ বছর বয়সে যদি কেউ মাসে এক হাজার টাকা করে চাঁদা দেওয়া শুরু করেন এবং ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তা চালু থাকে, তা হলে ওই ব্যক্তি অবসরের পর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিমাসে নির্দিষ্ট হারে পেনশন পাবেন। তবে পরিমাণটা এখনো ঠিক করা হয়নি।
আবার কেউ যদি ৩০ বছর বয়সে চাঁদা দেওয়া শুরু করেন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে, তা হলে অবসরের পর তিনি প্রতিমাসে পাবেন ১৫ হাজার টাকারও বেশি। তবে এ হিসাব আনুমানিক।
চাঁদার পরিমাণ এক হাজার টাকার বেশি হলে আনুপাতিক হারে পেনশনের পরিমাণও বাড়বে। বিধিমালায় এ নিয়ে বিশদ বলা থাকবে। জাতীয় পরিচয়পত্রকে (এনআইডি) ভিত্তি ধরে দেশে বসবাসরত নাগরিক তো বটেই, দেশের বাইরে থাকা ব্যক্তিরাও নতুন ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা তো পারবেনই।
সাধারণ নিয়মে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা সর্বজনীন পেনশনের সুযোগ পেলেও বিশেষ ব্যবস্থায় এর বেশি বয়সীরাও যাতে সুযোগটি নিতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আর কমপক্ষে ১০ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত হারে চাঁদা দেওয়ার পর একজন ব্যক্তি পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর থেকে। অর্থাৎ চাঁদা দেওয়া ১৮ বছর বয়সে শুরু হবে ও ৬০ বছর বয়সে গিয়ে বন্ধ হবে। তার পর ৬০ বছর বয়স থেকে তিনি যতদিন জীবিত থাকবেন, ততদিন পেনশন সুবিধা পাবেন।
পেনশনে থাকাকালে কেউ যদি মারা যান, তা হলে তিনি যাকে নমিনি করবেন, তিনি ওই গ্রাহকের বয়স ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পাবেন। আবার কেউ যদি ৬০ বছর হওয়ার আগেই মারা যান, তা হলে ওই ব্যক্তির নমিনি জমা করা টাকা এবং এককালীন সুবিধা পাবেন। এ ক্ষেত্রে মাসিক পেনশন দেবে না সরকার।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সর্বজনীন হলেও আপাতত তা ঐচ্ছিক থাকবে। আর যারা চাঁদা দেওয়ার মতো সক্ষম নন, তারা পেনশনের আওতার মধ্যে থাকবেন না। ৫০ বছরের বেশি বয়সী কেউ চাঁদা দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে অর্থ বিভাগ নতুন করে ভাবছে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, এটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। তবে এ ফান্ডে নিজের টাকা জমা দিতে হবে। ফলে ইন্স্যুরেন্সের মতো মাঝপথে যাতে বন্ধ না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।