যশোরের পথে শুরু রেললাইনের কাজ

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ঢাকার কমলাপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে আগামী সেপ্টেম্বরেই। তবে এই প্রকল্পের রেললাইনের শেষ গন্তব্য যশোর, যা আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে চালু করতে চায় সরকার।

সেই লক্ষ্যে প্রকল্পের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কাজ বাকি আছে মাত্র আট কিলোমিটার।

প্রকল্পের (ঢাকা থেকে যশোর) ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে রেললাইন বসানোর জন্য অবকাঠামোগত কোনো কাজ বাকি নেই। তবে যান্ত্রিক ও কারিগরি কাজের মধ্যে সিগন্যালিং ব্যবস্থার কাজ সবচেয়ে বেশি বাকি রয়েছে।

প্রকল্পের এমন অবস্থায় গতকাল শনিবার ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশে রেললাইন স্থাপন কাজের সূচনা করেছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ঢাকা থেকে নড়াইল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন তিনি।

বিভিন্ন জায়গায় থেমে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে জেনেছেন কাজের অগ্রগতি। ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশে রেললাইন বসানোর কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন গতকাল হলেও কাজ শুরু হয়েছিল আগেই। এই অংশে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে রেললাইনও। এর মধ্যে দুই কিলোমিটার মেইন লাইন এবং বাকি দুই কিলোমিটার লুপ লাইন।

মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের জন্য এই অংশে শতভাগ রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত বাকি আছে আট কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১৮০ মিটার করে রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্র বলেছে, আগামী ৪০ দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত অংশের রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হবে। আর আগস্টের শুরুর দিকে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে এখনো বড় অংশে বাকি আছে সিগন্যালিংয়ের কাজ। ঢাকার কেরানীগঞ্জে দেশের প্রথম এলিভেটেড রেলস্টেশন সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকরা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। দিন-রাত তিন ভাগে ২৪ ঘণ্টাই এখানে কাজ চলছে। এই উড়াল স্টেশনে দুটি প্রধান লাইন ও দুটি সংযোগ (লুপ) লাইন রয়েছে। প্রথমে প্রধান রেললাইনের কাজ করা হচ্ছে। এটি শেষ হলে সংযোগ লাইনের কাজ শুরু হবে।

গতকাল কেরানীগঞ্জ থেকে যশোরের নড়াইল পর্যন্ত প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আগামী বছরের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এখনো প্রকল্পের সময় বাকি আছে। তবু ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশটি আগামী সেপ্টেম্বরেই চালু করে দেওয়া হবে।’

কালের কণ্ঠ’র এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘প্রথমে হয়তো একসঙ্গে সব স্টেশন চালু হবে না। আমরা মেট্রো রেলের মতো প্রথমে শুধু দুই প্রান্তে ট্রেন চালাতে পারি। এর আগে এই লাইনে ট্রেনের একটা ট্রায়াল হবে। আমরা আশা করছি, আগামী আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হবে।’

পদ্মা সেতু রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। সব শেষ ১ মে প্রকাশিত প্রকল্পের অগ্রগতির প্রতিবেদনে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮০.৬২ শতাংশ। এর মধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। এই অংশে ৪২ কিলোমিটার রেললাইন আছে, যা বসানো হয়ে গেছে। চারটি নতুন রেলস্টেশনের ৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৭৫.৫০ শতাংশ। এই অংশে ৩৯.৬৩ কিলোমিটার রেললাইন বসবে। এর মধ্যে মাত্র ২৫ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে। চারটি স্টেশনের নির্মাণকাজের ৩৮ শতাংশ শেষ হয়েছে।

ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই অংশে মাটির বাঁধ (এমব্যাংকমেন্ট) নির্মাণ হবে ৮৩.১৬ কিলোমিটার। এর অগ্রগতি হয়েছে ৯৬.১২ শতাংশ। নতুন রেলস্টেশন হবে ৯টি। এর মধ্যে সাতটির নির্মাণকাজ চলছে। এই কাজের অগ্রগতি ১৯ শতাংশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নড়াইলের মধুমতী নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে এই রেলপথের সবচেয়ে বড় সেতুটি। এটির দৈর্ঘ্য ১.২ কিলোমিটার। নদীটির জনবসতি ঘিরে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বড় বাঁধ।

প্রকল্পের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ করা হবে। সঙ্গে লুপ ও সাইডিং লাইন মিলিয়ে মোট ২১৫ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। ২৩.৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ১.৯৮ র‌্যাম্প, ৫৯টি বড় সেতু, ২৭২টি কালভার্ট আন্ডারপাস, ২৯টি লেভেলক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে।

এদিকে ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণ এবং ছয়টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলছে। ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.